ফুটবল হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। এই খেলাটির প্রতি মানুষের ভালবাসা ও উন্মাদনা লক্ষণীয়। সব বয়সের মানুষ ফুটবল পছন্দ করে। কিন্তু বিগত কয়েক দশক ধরে দেশের ফুটবলে অবদান রাখতে পারছেন না পুরুষ দল। ফিফা র্যাংকিংয়ে নামতে নামতে একে বারে তলানীর দিকে পৌঁছে গেছে তারা। জামাল ভূঁইয়াদের ব্যর্থতার মাঝে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছে নারী ফুটবলাররা। কয়েক দিন আগে দেশের ফুটবলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জন করেছেন তারা। প্রথমবার এএফসি নারী এশিয়ান কাপের মুল পর্বে খেলার টিকিট অর্জন করেছেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। লাল সবুজের ফুটবল কন্যাদের এবার ফিফা বিশ্বকাপ ও অলিম্পিকে খেলার হাতছানি দিচ্ছে। তবে এ জন্য খেলার মান আরও বাড়াতে হবে। ফুটবল খেলা যেমন শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। ঠিক তেমনি খেলোয়াড়দের জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্য সম্মত পুষ্টিকর খাবার ও উন্নত পরিবেশ। যা এই মুহূর্তে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) তাাই ঋতুপর্ণা-আফঈদাদের নিয়ে নতুন পরিকল্পনা শুরু করেছে।
গত বৃহস্পতিবার বাফুফের অন্যতম সহ-সভাপতি নাসের শাহরিয়ার জাহেদীর অফিসে ফেডারেশন সভাপতি তাবিথ আউয়ালসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা অনানুষ্ঠানিক সভা করেছেন। সেই সভায় এশিয়া কাপ থেকে বিশ্বকাপে খেলার জন্য এই সময়ে কী কী প্রয়োজন এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে মূলত। শুধু মাঠের অনুশীলন ও প্রীতি ম্যাচ নয়, ফুটবলারদের স্বাস্থ্য এবং খাবার নিয়েও গভীরভাবে বিশ্লেষণ হয়েছে। সভায় নারী ফুটবল দলের সঙ্গে যাওয়া চিকিৎসকও ছিলেন। তার পর্যবেক্ষণ বাংলাদেশ নারী ফুটবলারদের হিমোগ্লোবিন কম এবং বিশ্বকাপ পর্যায়ে খেলতে হলে স্বাস্থ্যগত বিষয়ে জোর দেওয়া প্রয়োজন। সভাপতিসহ উপস্থিত কমিটির সবাই জাতীয় দলের আনুষ্ঠানিক ক্যাম্প শুরুর আগে সব ফুটবলারের সাধারণ চেক-আপ করানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। যা আগে সেভাবে হয়নি।
জাপান, কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে লড়তে হবে বাংলাদেশকে। এই দলগুলো শুধু টেকনিক-ট্যাকটিসেই এগিয়ে নয়, শারীরিকভাবেও বেশ শক্তিশালী। বাংলাদেশ নারী দলে অনেক ফুটবলারেরই ওজনে ঘাটতি রয়েছে। কালকের আলোচনায় ওজনের ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি বেশি পুষ্টিকর খাবার প্রদানের ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছে।
নারী ফুটবল দল সাধারণত বাফুফে ভবন সংলগ্ন আর্টিফিশিয়াল টার্ফে অনুশীলন করত। এই টার্ফের সংস্কার কাজ চলমান থাকায় মেয়েদের কখনও বুয়েট, কখনও আবাহনী আবার কখনও কিংস অ্যারেনায় ছুটতে হয়। অস্ট্রেলিয়ায় হতে যাওয়া এশিয়া কাপের প্রস্তুতির জন্য বাফুফে আফঈদাদের সুনির্দিষ্ট একটি মাঠ দিতে চায় আবাসন সুবিধাসহ। এজন্য ঢাকা কিংবা ঢাকার আশেপাশে বেশ কয়েকটি বিকল্প খুঁজছে ফেডারেশন। নারী ফুটবলাররা দেশকে নিয়মিত বিরতিতে বিভিন্ন পর্যায়ে সাফল্য এনে দিচ্ছেন। এর বিপরীতে তেমন আর্থিক স্বচ্ছলতা তাদের আসেনি। এশিয়া কাপ নিশ্চিত হওয়ার পর ঋতুপর্ণাদের মাসিক বেতন মাত্র ৫৫ হাজার টাকার বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে। মেয়েদের আর্থিক বিষয়াদির উন্নতি এবং নিয়মিত করতে এবার বেশ সচেষ্ট হয়েছে ফেডারেশন। এশিয়া কাপ নিশ্চিত করা অন্য দেশগুলো এরইমধ্যে কাজ শুরু করলেও বাংলাদেশের খানিকটা সময় লাগছে। জাতীয় দলের অনেক ফুটবলারই বয়সভিত্তিক দলে খেলছেন। কোচ বাটলারও এই দলগুলো সামলাচ্ছেন। ফলে সেপ্টেম্বর-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মূলত বাংলাদেশ কাজ করার সুযোগ পাবে। নভেম্বরে সাফ ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ রয়েছে। সেই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের ক্লাব নাসরিন স্পোর্টিংয়ের খেলার কথা। এতে জাতীয় দলের কয়েকজন থাকবেন স্বাভাবিকভাবেই। ক্লাব প্রতিযোগিতা, জাতীয় দলের অনুশীলন ও প্রীতি ম্যাচ সবকিছুর সমন্বয়ের বিষয়টি কোচ বাটলারের ওপরই ছেড়েছে ফেডারেশন। আজ অনূর্ধ্ব-২০ দলের ম্যাচ থাকায় বাটলার কালকের সভায় ছিলেন না। তিনি কিছুদিনের মধ্যে এশিয়া কাপের জন্য ফেডারেশনকে একটি পরিকল্পনা দেবেন।