ভারতের দিল্লির পাশের শহর গুরগাঁওয়ের সেক্টর ৫৭-এ এক সকালে ঘটে গেল অকল্পনীয় এক ঘটনা। ২৫ বছর বয়সী রাধিকা যাদব, রাজ্য পর্যায়ের টেনিস খেলোয়াড় এবং প্রশিক্ষক, নিজ বাড়িতেই বাবার গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার সকালে রান্নাঘরে থাকা অবস্থায় বাবার ছোঁড়া তিনটি গুলি তার পিঠে আঘাত হানে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় রাধিকার। ঘটনার পরপরই রাধিকার বাবা, ৪৯ বছর বয়সি দীপক যাদবকে গ্রেপ্তার করেছে গুরগাঁও পুলিশ। তার বিরুদ্ধে খুনের মামলা হয়েছে।
পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে দীপক জানিয়েছেন, তিনি মেয়ের টেনিস একাডেমি চালানো এবং নিজ উপার্জনে চলা বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন। গ্রামের মানুষদের কাছ থেকে নিয়মিত ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ শুনতে হচ্ছিল তাকে। কেউ কেউ বলতেন, ‘মেয়ের টাকায় চলে বাবা।’ কেউ কেউ মেয়ের চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। দীপক পুলিশকে বলেন, ‘ওকে বারবার বলেছিলাম একাডেমি বন্ধ করে দিতে। সে রাজি হয়নি। গ্রামের মানুষদের কটুক্তি আমাকে মানসিকভাবে ভেঙে দিচ্ছিল। সম্মানে আঘাত লাগছিল। সেসব সহ্য করতে না পেরে আমি আমার লাইসেন্সকৃত রিভলবার বের করে যখন ও রান্নাঘরে রান্না করছিল, তখন পেছন থেকে গুলি চালাই।’
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার আগের ১৫ দিন ধরে দীপক মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। মেয়ের জীবনযাপন আর উপার্জন নিয়ে সমাজের চাপ তিনি সহ্য করতে পারছিলেন না। ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলেন রাধিকা, তার বাবা দীপক এবং মা মঞ্জু যাদব। রাধিকার ছোট ভাই ধীরাজ বাইরে ছিলেন। গুলির শব্দ শুনে দীপকের ভাই কুলদীপ ও ভাগনে পীয়ূষ দৌড়ে আসেন। তারা রাধিকাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান, কিন্তু চিকিৎসকরা জানান, সেখানে পৌঁছানোর আগেই রাধিকার মৃত্যু হয়েছে। মা মঞ্জু জানান, তিনি অসুস্থ থাকায় আরেক ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। গুলির শব্দ শুনে ছুটে আসেন। তিনি বলেন, বাবা-মেয়ের মধ্যে কোনো বড় ধরনের ঝামেলা ছিল বলে তিনি জানতেন না। স্কটিশ হাই ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে রাধিকা জাতীয় এবং জুনিয়র আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হরিয়ানার হয়ে টেনিস খেলেছেন। নিজের শহরেই টেনিস একাডেমি চালাতেন। কিছুদিন আগে কাঁধে চোট পেয়ে ফিজিওথেরাপি নিচ্ছিলেন, কিন্তু একাডেমির দায়িত্ব চালিয়ে যাচ্ছিলেন আগের মতোই। ইনস্টাগ্রামে নিয়মিত ম্যাচ জয়ের রিল পোস্ট করতেন, এমনকি সেখানে বাবাকেও দেখা যেত।
পুলিশ জানিয়েছে, রাধিকার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা একটি রিল নিয়েও বাবা-মেয়ের মধ্যে বিরোধ ছিল। ‘কারওয়ান’ নামে সেই ভিডিওতে রাধিকা ছিলেন সংগীতশিল্পী ইনআমণ্ডএর সঙ্গে, যেটি গত বছর মুক্তি পায় এলএলএফ রেকর্ডস-এর ব্যানারে। দীপক মেয়েকে ভিডিওটি ডিলিট করতে বলেন, কিন্তু রাধিকা রাজি হননি। পুলিশ খতিয়ে দেখছে, ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা বন্ধুত্ব নিয়েও দীপকের আপত্তি ছিল কি না। একটি সাধারণ সকাল ছিল সেটা। পরিবারে সকলে ছিলেন। রান্নাঘরে রান্না করছিলেন রাধিকা। হঠাৎ একাডেমি নিয়ে কথা কাটাকাটিতে দীপক রিভলবার বের করে গুলি চালান। তিনটি গুলি রাধিকার পিঠে লাগে। এরপর দীপক নিজেই স্বীকার করেন, ‘আমি আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছি।’ পুলিশ এরইমধ্যে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র জব্দ করে ফরেনসিক পরীক্ষায় পাঠিয়েছে। দীপকের বিরুদ্ধে ভারতীয় নতুন দণ্ডবিধির ধারা ১০৩(১) এবং অস্ত্র আইনের অধীনে মামলা হয়েছে। গুরগাঁওয়ের সেক্টর ৫৬ থানার ওসি বিনোদ কুমার জানান, ‘ঘটনার তদন্ত চলছে। পরিবার সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে খুব শিগগিরই।’ রাধিকার মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল শুক্রবার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।