বাংলাদেশের ফুটবলে এখন প্রবাসীদের জোয়ার বইছে। যার শুরু হয়েছিল জামাল ভূঁইয়াকে দিয়ে। এই ডেনিস মিডফিল্ডারকে দিয়ে ২০১৩ সালে শুরু হয়েছিল প্রবাসী ফুটবলারদের জাতীয় দলে ভেড়ানোর যাত্রা। গত মার্চে হামজা চৌধুরী যোগ দেওয়ার পর এ সময়ে নতুন মাত্রা পেয়েছে বিষয়টি। জামাল ভূঁইয়া ছাড়াও এরমধ্যে প্রবাসী ফুটবলার হিসেবে জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন তারিক কাজী, সামিত সোম এবং ফাহামিদুল ইসলাম। এবার আলোচনায় উঠে এসেছেন আরও এক ফুটবলার। তার নাম ফারহান আলী ওয়াহিদ।
এত দিন ফুলহামের বয়সভিত্তিক দলে খেলা ফারহান গত বৃহস্পতিবার ক্লাবটির সঙ্গে ক্যারিয়ারের প্রথম পেশাদার চুক্তি সম্পন্ন করেন। চুক্তি স্বাক্ষরের ছবি নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে পোস্টও করেছেন ফারহান। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশের ফুটবল সমর্থকদের আলোচনার কেন্দ্রে এই উইঙ্গার। ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৫ দলের হয়ে খেলা ফারহান চাইলে একদিন খেলতে পারেন বাংলাদেশের হয়েও। হতে পারেন হামজা চৌধুরীর উত্তরসূরি। কারণ তার রক্তে বইছে বাংলাদেশের উত্তরাধিকার।
ওয়েবসাইটে ফারহানের সঙ্গে পেশাদার চুক্তির বিষয়টি জানিয়েছে ফুলহ্যাম। ২০১৯ সালে চেলসির একাডেমি থেকে ফুলহ্যামে যোগ দেন তিনি। মটসপুর পার্কে এসে অনূর্ধ্ব ১৩ পর্যায় থেকে খেল শুরু করেন এই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত উইঙ্গার। ১৮ বছর বয়সি ফারহান গত মৌসুমে ইনজুরির কারণে খুব বেশি খেলার সুযোগ পাননি, তবে ইনজুরি থেকে ফিরে অনূর্ধ্ব-১৮ পর্যায়ে ২০ ম্যাচ খেলে ৭টি গোল ও ৪টি অ্যাসিস্ট করে নজর কাড়েন। যার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে প্রথমবারের মতো পেশাদার চুক্তিতে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ফুলহ্যাম।
লেফট উইংয়ে খেলা ফারহানের জন্ম ইংল্যান্ড। তার মা-বাবা দুজনেই বাংলাদেশি হলেও তাদের জন্মও ইংল্যান্ডে। ফুটবলে ফারহানের যাত্রা শুরু হয় চেলসিতে। ২০১৯ সালে চেলসি অনূর্ধ্ব-১২ দল ছেড়ে যোগ দেন ফুলহামে। এরপর খেলেছেন ফুলহামের অনূর্ধ্ব-১৮ ও অনূর্ধ্ব-২১ দলে। গত মৌসুমে চোটে ভুগলেও ফুলহাম অনূর্ধ্ব-১৮ দলের হয়ে ২০ ম্যাচে ৭ গোল এবং ৪টি গোল বানান।
গত মৌসুমে ফুলহাম অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে অভিষেক হয় ফারহানের। যেখানে প্রিমিয়ার লিগ ইন্টারন্যাশনাল কাপে পিএসভির বিপক্ষে ৪-৪ গোলে ড্রয়ের ম্যাচে বদলি নেমে গোলও করেন। এই পারফরম্যান্সই মূলত ফুলহামের সঙ্গে ফারহানের পেশাদার চুক্তির দুয়ার খুলে দেয়। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল ফুলহামের সঙ্গে পেশাদার চুক্তি সই করে ফারহান বলেন, ‘এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ফুটবল খেলতে শুরু করার পর থেকেই আমি এই মুহূর্তের জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আর এখন আমি এই পর্যায়ে আছি, অনুভূতিটা অসাধারণ।’ এ সময় ফারহান আরও যোগ করে বলেছেন, ‘আমি ফুলহামে যোগ দিই অনূর্ধ্ব-১৩ পর্যায়ে। আর এটা রোলারকোস্টারের মতো একটা যাত্রা ছিল। এখানে পুরো পথচলাটা আমি দারুণভাবে উপভোগ করেছি। বয়সভিত্তিক প্রতিটি ধাপে আমার পাশে ভালো এক দল সতীর্থ ছিল, যারা আমাকে শুরু থেকেই আপন করে নিয়েছে। আমার পরিবার সব সময় আমার স্বপ্নপূরণে পাশে থেকেছে। আর এ জন্য তাদের অনেক ত্যাগও স্বীকার করেছে। তারা সব সময় আমাকে পরামর্শ দিয়ে বলেছে পা যেন মাটিতে থাকে।’
মা-বাবার কারণে সামনের দিনগুলোয় নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের আলোচনায় থাকবেন ফারহান। তবে ফারহান শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন কি না, তা নিশ্চিত নয়। শুরুতে নিশ্চয়ই ইংল্যান্ডের বয়সভিত্তিক দলে খেলে নিজের অবস্থান দৃঢ় করার চেষ্টা করবেন তিনি। ২০২০ সালে ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব ১৫ দলে ডাক পেলেও কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। ক্যারিয়ার এগিয়ে চলার সঙ্গে ফারহান নিশ্চয়ই পারিপার্শ্বিক অবস্থা বুঝে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।