ঢাকা বুধবার, ১৩ আগস্ট ২০২৫, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

প্রথমবার জাতীয় বক্সিংয়ে প্রবাসী জিনাত

প্রথমবার জাতীয় বক্সিংয়ে প্রবাসী জিনাত

দেশে এখন প্রবাসী ক্রীড়াবিদদের জোয়ার চলছে। ফুটবল থেকে শুরু করে অ্যাথলেটিকস, জিমন্যাস্টিকস এবং বক্সিং-এই তিন ইভেন্টে বর্তমানে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রবাসীরা। যুক্তরাজ্য প্রবাসী ইমরানুর রহমান এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবার দেশকে স্বর্ণ পদক এনে দিয়েছিলেন। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজা চৌধুরী বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন জাগরণ তৈরি করেছেন। ইউরোপীয় বক্সিং কনফেডারেশন থেকে বাংলাদেশকে প্রথম পদক এনে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বক্সার জিনাত ফেরদৌস। এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট থেকে পদক নিয়ে এসেছেন তিনি। এবার ঘরোয়া বক্সিংয়ে অভিষেক হতে যাচ্ছে এই প্রবাসী বক্সারের। রাজধানীর পল্টনস্থ মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে আজ থেকে ৩১তম জাতীয় সিনিয়র পুরুষ ও ৭ম জাতীয় মহিলা বক্সিং প্রতিযোগিতা। পুরুষ ও নারী মিলিয়ে মোট ১৩ ক্যাটাগরির এ প্রতিযোগিতায় জিনাত খেলবেন গুডউইল ক্লাবের হয়ে। বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এমএ কুদ্দুস বলেন, ‘জিনাত গুডউইল ক্লাবের হয়ে জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে। ৫২ কেজি ওজন শ্রেণিতে খেলবেন তিনি। বাংলাদেশে এটি তার প্রথম অংশগ্রহণ হবে। সাম্প্রতিক সময়ে তার আন্তর্জাতিক সাফল্যের জন্য ৩০ জুলাই প্রতিযোগিতার সমাপনী দিন তাকে সম্মাননা জানানো হবে।’ সম্প্রতি পর্তুগালে ব্র্যাগা ওপেন বক্সিং আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ৫০ কেজি ওজন শ্রেণিতে স্বর্ণ পদক জেতেন জিনাত। এছাড়া নেলসন ম্যান্ডেলা আফ্রিকান বক্সিং কাপেও স্বর্ণ পদক আছে তার। ২০২৩ সালে হাংজু এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের হয়ে প্রথমবার প্রতিনিধিত্ব করেন জিনাত। এর আগে গত বছরের ২৩ এপ্রিল প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আফ্রিকায় বক্সিংয়ে ইতিহাস গড়লেন জিনাত ফিরদৌস। দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে অনুষ্ঠিত ম্যান্ডেলা কাপ আন্তর্জাতিক বক্সিং কম্পিটিশন ২০২৪-এর ফাইনালে ইথিওপিয়ার সেরা বক্সার গাজিয়া বেথেলহামকে হারিয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ জয় করেন জিনাত। ২৭ দেশের বক্সারদের অংশগ্রহণে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এ টুর্নামেন্টে ৫০ কেজি ওজন শ্রেণিতে স্বর্ণ জয় করেন জিনাত। তখন আন্তর্জাতিক মিডিয়ার শিরোনাম হয়ে যান তিনি। তার অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশন তাকে বাংলাদেশি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

যেভাবে এলেন বাংলাদেশের বক্সিংয়ে, জিন্নাত ফেরদৌসের বক্সিংয়ে আবির্ভাব ২০২৩ সালে হঠাৎ করেই। ২০২৩ সালের মধ্য জুলাইয়ে জিমনাস্টিকস ফেডারেশনের আমন্ত্রণে ২৯ বছর বয়সী জিনাত এসেছিলেন ঢাকায়। রিংয়ে উঠে বাংলাদেশি বক্সারদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছিলেন। তার পারফরম্যান্সে ছড়িয়েছে মুগ্ধতা। তাতে খুলে যায় স্বপ্নের দুয়ার। কিন্তু এশিয়ান গেমসে খেলতে হলে বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকতে হবে। এর সঙ্গে লাগবে নিউইয়র্কের যেখানে বক্সিং খেলেন, সেখানকার অ্যাসোসিয়েশনের অনুমতি। তার স্বপ্নপূরণের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পদক জয়ের আশায় বিওএ’র কর্তারাও চালিয়ে যান সব চেষ্টা। প্রচেষ্টার ফল লাল-সবুজের হয়ে এশিয়াডে রিংয়ে ওঠেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জিনাত। যদিও প্রথম বিশ্বমঞ্চে তেমন ভালো কিছু করতে পারেননি। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে ব্যক্তিগত কোচের কাছে ট্রেনিং চালিয়ে যান জিনাত। এ বছর তার ঝুলিতে ধরা দিয়েছে দুটি আন্তর্জাতিক সাফল্য। জিনাতের জন্ম ও বেড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাস্টোরিয়ায়। দুই ভাই-বোন। জিনাত ফেরদৌস ও নজমুল ফেরদৌস নাজ। বাবা বেলায়েত ফেরদৌস। মা শাহনাজ ফেরদৌস তুলি। বাবার বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জে এবং মায়ের বাড়ি পাবনায়। ১৯৮৭ সালে এ দম্পতি পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে জন্ম নিলেও নিছক ঘোরাঘুরির জন্য পাঁচবার বাংলাদেশে এসেছিলেন জিনাত। জন্ম যে দেশেই হোক না কেন, জিনাত ফেরদৌসের পরিচয় এখন তিনি বাংলাদেশি। উন্নত সুযোগ-সুবিধা এবং প্রবাস জীবনকে তুচ্ছ বানিয়ে নাড়ির টানই লাল-সবুজের দেশে নিয়ে এসেছে তাকে। মার্কিন প্রবাসী বক্সার জিনাত ফেরদৌস আস্তে আস্তে বাংলাদেশের বক্সিংয়ে পোস্টারগার্ল হয়ে উঠছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত