
দেশে পুরুষদের অনেক পড়ে ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেছে নারীরা। বাংলাদেশের মেয়েরা এশিয়া কাপ জিতলেও ছেলেরা পারেনি। গত কয়েকটা টুর্নামেন্টে রীতিমতো ভরাডুবিও হয়েছে লাল সবুজ দলের। এবার টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এশিয়া কাপ সামনে রেখে পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এশিয়া কাপের আগে বিসিবি নিয়োগ দিয়েছে বিশেষজ্ঞ পাওয়ার হিটিং কোচ জুলিয়ান উডকে। কারণ, শুধু টি-টোয়েন্টি নয়, সীমিত ওভারের যেকোনো ফরম্যাটেই এখন মূল মন্ত্র-‘পাওয়ার ক্রিকেট’। আধুনিক ক্রিকেটে বল উড়িয়ে মারতে পারাটা অনেক সময় ম্যাচের হিসাবই পাল্টে দেয়। এখানেই বারবার উঠে আসে বাংলাদেশের ঘাটতির গল্প। সেই ঘাটতি পূরণেই বিশেষজ্ঞ পাওয়ার হিটিং কোচ এনেছে। ঢাকায় প্রথমে স্থানীয় কোচ আর নারী ক্রিকেটারদের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। এরপর শুরু করেছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের নিয়ে। রাজধানীতে তিন দিনের অনুশীলন শেষে আগামী পরশু থেকে সিলেটে শুরু হবে মূল স্কিল ক্যাম্প।
গতকাল সোমবার মিরপুরে এসে জাতীয় দলের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান জাকের আলী শোনালেন উডের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা, ‘যারা টাইমার, তারা কীভাবে আরও ৪-৫ মিটার বাড়াতে পারে শটের দূরত্ব, সেটা নিয়ে কাজ করার কথা বলেছে। টাইমারদের কিন্তু পাওয়ার হিটার হতে বলেনি সে। টাইমাররা টাইমারই থাকবে। তারা কীভাবে শটের দূরত্ব আরও ৪-৫ বা ৬ মিটার বাড়াতে পারে-এটা হলে যা হবে, আগে যেটা আউট হতো, সেটা এখন ছক্কা হয়ে যাবে।’
উডের সঙ্গে চুক্তি মাত্র ২৮ দিনের। আগামী ৩ সেপ্টেম্বরই দেশে ফিরবেন তিনি। তাই বৈপ্লবিক কোনো পরিবর্তনের সুযোগ নেই, সেটি ক্রিকেটারদের আগেই বুঝিয়ে দিয়েছেন ইংলিশ কোচ। ঢাকায় কিছু মৌলিক কাজ করানো হয়েছে, সিলেটে হবে তারই অনুশীলন-জানালেন জাকের। অল্প কয়েক দিনে দৃশ্যমান কোনো উন্নতি হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে জাকেরের উত্তর, ‘এত তাড়াতাড়ি মন্তব্য করা ঠিক হবে না। কী উন্নতি হলো, কী না হলো, এগুলো বুঝতে আরেকটু সময় লাগবে। কিন্তু আমাদেরকে যে কাজগুলো দেওয়া হয়েছে, ওই কাজগুলো আমরা করার চেষ্টা করছি। এই সুইং প্র্যাকটিসগুলো কিংবা ডিফারেন্ট ড্রিলসগুলো অবশ্যই কাজে আসবে।’
কোচ উড এসেছেন একেবারে স্পেশাল এক ব্যাট নিয়ে। ‘প্রো ভ্যালোসিটি’ নামের এই ব্যাট ক্রিকেটারদের ব্যাট স্পিড আর হাত-চোখের সমন্বয়ে সাহায্য করে। ব্যাটটা ঘোরালে যে শব্দ হয়, সেটাই বলে দেয় শটের শক্তি কেমন হলো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এরইমধ্যে তার অনুশীলনের কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।
এই ব্যাট নিয়ে অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে জাকেরের হাসি, ‘যখন যে কয়টা সাউন্ড বের করতে বলে, ওইটা যদি বের করা যায়, তখন ভালো লাগে। কিন্তু অনেক ফোর্স লাগে এটা বের করতে। সাউন্ডটা বের করতে ফোর্স লাগে, আরও এফোর্ট দিতে হয়। তো এই জিনিসগুলো নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কাজ করলে অবশ্যই কাজে দেবে।’ তবে নিজের খেলার ধরন পাল্টে ফেলতে হবে-এমনটা নয়। জাকেরের ভাষায়, ‘যারা টাইমার, তারা কীভাবে আরও ৪-৫ মিটার বাড়াতে পারে শটের দূরত্ব, সেটা নিয়ে কাজ করার কথা বলেছে। টাইমারদের কিন্তু পাওয়ার হিটার হতে বলেনি সে। টাইমাররা টাইমারই থাকবে। তারা কীভাবে শটের দূরত্ব আরও ৪-৫ বা ৬ মিটার বাড়াতে পারে...।’
বাংলাদেশ দলে ‘পাওয়ার হিটার’ হিসেবেই পরিচিত জাকের। তিনি নিজে কতোটা শিখলেন- প্রশ্নটা কোচের দিকে ছুড়ে দিয়ে শুধু এতটুকুই বললেন, অভিজ্ঞতাটা ‘ভালো’ই হচ্ছে। নেদারল্যান্ডস সিরিজ ও এশিয়া কাপ সামনে রেখে কঠোর অনুশীলন করছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। জাতীয় ক্রিকেট দলের বিশেষ ফিটনেস ক্যাম্প শুরু হয় ৬ আগস্ট। এক দিন বিরতির পর গত শুক্রবার দুপুর থেকে ফের মাঠে নামেন টাইগার ক্রিকেটাররা। ঢাকা স্কিল অনুশীলনের কয়েক দিন পর গতকালের অনুশীলন বাতিল করা হয়েছে।
অনুশীলন না হলেও গণমাধ্যমে কথা বলেছেন জাকের আলী। ফিটনেস ক্যাম্পে ক্রিকেটারদের কষ্টের ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়া নিয়ে জাকের বললেন, ‘ফিটনেস ক্যাম্প আমাদের অনেকদিন ধরেই হচ্ছে। হয়তো এবার আপনারা কাছ থেকে দেখছেন বলে বুঝতে পারছেন কষ্ট হচ্ছে, এটা সেটা।’ বাংলাদেশের মেয়েরা এশিয়া কাপ জিতলেও ছেলেরা পারেনি। গত কয়েকটা টুর্নামেন্টে রীতিমতো ভরাডুবিও হয়েছে বাংলাদেশের। এবার টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এশিয়া কাপে আপনাদের লক্ষ্য কী? এমন প্রশ্নে জাকের বললেন, ‘এবার এশিয়া কাপে ইনশাল্লাহ আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য যাচ্ছি। আর দল যেখানে চাইবে আমি সেখানেই ব্যাট করতে রাজি।’