ঢাকা শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বিসিবি সভাপতির দৌড়ে যারা

বিসিবি সভাপতির দৌড়ে যারা

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। ২০২১ সালের ৭ অক্টোবরে এ কমিটির যাত্রা শুরু হয়েছিল। তবে গত বছর ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ক্রিকেট বোর্ডের নেতৃত্বও বদলে যায়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১২ বছরেও সভাপতি পদে কোনো পরিবর্তন দেখা না গেলেও, গত এক বছরে বিসিবির সর্বোচ্চ পদে পরিবর্তন এসেছে দুইবার। সর্বশেষ ফারুক আহমেদের বদলে দায়িত্ব পেয়েছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আগামী অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই শেষ হবে চলমান কমিটির মেয়াদ। যে কারণে আলোচনার কেন্দ্রে বিসিবি নির্বাচন। আর এই নির্বাচন সামনে রেখে তৈরি হয়েছে নতুন নাটকীয়তা। দীর্ঘদিন ধরে সভাপতি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন সহ-সভাপতি মাহবুব আনাম।

২০০১ সাল থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন মাহবুব আনাম। তবে লম্বা সময় ধরেই তাকে নিয়ে রয়েছে অনিয়মের নানা গুঞ্জন। সম্প্রতি এই পরিচালকের বিরুদ্ধেই উঠেছে নানান অভিযোগ। সেসব বিবেচনায় এনেই হয়তো হঠাৎ করে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তে বিসিবির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে তৈরি নতুন সমীকরণ। ইতোমধ্যে বিসিবি নির্বাচনের জন্য আলোচনায় এসেছে বেশ কয়েকজনের নাম। তামিম ইকবাল, ফারুক আহমেদ, আমিনুল ইসলাম বুলবুল।

তবে বিসিবি নির্বাচনে জিততে হলে কাউন্সিলরদের ভোটেই জিততে হবে পরিচালকদের। বিসিবির গঠনতন্ত্রে ১৭১ জন কাউন্সিলরের ৭৬ জনই ঢাকার ক্লাব থেকে আসেন। আবার বোর্ডের ২৫ সদস্যের মধ্যে ১২ জন আসেন ক্লাব ক্রিকেট থেকে। বিভাগীয় ও আঞ্চলিক পর্যায় থেকে আসেন ১০ জন। যে কয়েকজন সভাপতি প্রার্থীর কথা শোনা যাচ্ছে এর মধ্যে কে এগিয়ে রয়েছে? সাবেক পরিচালক রফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে একটা কথা বলি এখন যে অবস্থায় রয়েছে সেখানে সভাপতি কে হবে তার আগে ডিরেক্টর কে হবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। তারপর সভাপতি ব্যাপারটা আসবে, তার আগে কেউ বলতে পারবে না যে সভাপতি কে হবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের এমন পরিস্থিতি আসলে এই মুহূর্তে।’

সভাপতি হিসেবে যে প্রার্থীদের নাম শোনা যাচ্ছে সে বিষয়ে বাবু বললেন, ‘অনেকের নামই শোনা যাচ্ছে আলোচনায়। এগুলো আসলে হাওয়ায় ভাসতেছে বলবো। এটা তো ওপেন যে কেউ নির্বাচন করতে পারবে, এটা তাদের একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার ইলেকশন করবে কি করবে না।’ পরে মাহবুব আনামকে নিয়ে বাবু স্পষ্ট করে বললেন, ‘এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার আমার মনে হয়। তার মতো একজন অভিজ্ঞ ক্রীড়া সংগঠক ক্রিকেটে অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। দুই যুগ শুধু বোর্ডেই ছিল, তার অভিজ্ঞতা সবচেয়ে বেশি আমি যদি ভুল না বলে থাকি। সেক্ষেত্রে সে অনেক ভালো বোঝে সে কি করতে হবে কখন কি। এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার একদমই তবে আমাদের ভিতরে সবচেয়ে অভিজ্ঞ সে।’

সাবেক আরেক পরিচালক সিরাজউদ্দিন আলমগীর নির্বাচন ইস্যুতে বলেন, ‘আমি চাই ফ্রেশ ব্লাড আসুক এবং যারা পুরোনো আছে তাদের একটা কম্বিনেশন হোক। একই লোক বারবার প্রতিনিধিত্ব করার চেয়ে পুরোনো লোক যাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং যারা নতুন আসবে নতুন আইডিয়া আছে, এদের একটা কম্বিনেশন হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’ এরপর তামিমের বিসিবির দায়িত্বে আসা নিয়ে আলমগীর বললেন, ‘আমাদের সভাপতির পদটা এডমিনিস্ট্রেটেড বা কর্পোরেট এরকম না। সাবেক খেলোয়াড়দের মধ্যে এরকম দক্ষতা যদি থাকে তারাও আসতে পারে। তামিমের কথা শোনা যাচ্ছে সেও ভালো ক্যান্ডিডেট, ওর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অর্জন রয়েছে। ওর যে ক্রিকেট মেধা যে পরিচিতি সে ভালো ক্যান্ডিডেট।’

ফারুক আহমেদের বিসিবি সভাপতি হওয়ার বিষয়ে অবশ্য আলামগীর জানালেন, ‘মনে হয় না ফারুক ভাইয়ের খুব একটা কানেকশন আছে। বা যে অবস্থান আছে আমার মনে হয় না উনি করবে। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। আমিনুল ইসলাম বুলবুলের কথাও শোনা যাচ্ছে। এখন তো এই দুজনের নামই শোনা যাচ্ছে বেশি। ভালো একজন কেউ আসুক এটাই প্রত্যাশা করি।’

এ ছাড়া আলোচনায় আছেন বিসিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সাবেক প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আশরাফুল হক, মোহামেডানের সাবেক মহাসচিব কুতুব উদ্দীন আহমেদ এবং বিসিবির সাবেক সভাপতি আলী আসগর লবি। এদের মধ্যে কেউ যদি শেষ মুহূর্তে মাঠে নামেন, তা হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও জমে উঠবে। ক্লাব কোটাতেও চলছে নতুন সমীকরণ। বর্তমান বোর্ডের পরিচালক মাহবুব আনাম, ইফতিখার রহমান মিঠু ও ফাহিম সিনহা নিজেদের অবস্থান শক্ত রাখলেও নতুন করে জায়গা করে নিচ্ছেন তামিম ইকবালের ঘনিষ্ঠরা। গাজী গ্রুপের সালাউদ্দীন, বসুন্ধরা গ্রুপের শাহনিন তানিম ও ইশতিয়াক সাদেকদের নামও শোনা যাচ্ছে সম্ভাব্য পরিচালক হিসেবে। সবকিছু মিলিয়ে অক্টোবরের বিসিবি নির্বাচন ঘিরে এরমধ্যেই জমে উঠেছে তর্ক-বিতর্ক ও গুঞ্জন। কে থাকবেন দৌড়ে, কে সরে দাঁড়াবেন সে প্রশ্নের উত্তর মিলবে শেষ মুহূর্তে।

তবে একটি বিষয় স্পষ্ট, এবারকার নির্বাচন হবে উত্তেজনাপূর্ণ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ।

সব মিলিয়ে মাহবুব আনাম দৃশ্যপটের বাইরে চলে যাওয়ায় তামিম ইকবালের আবারও পর্দায় আসার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। হার্ট অ্যাটাক না হলে হয়তো এতদিন তামিম বোর্ডপ্রধান হওয়ার অন্যতম দাবিদার থাকতেন। কারণ একসময় ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পছন্দের মানুষ ছিলেন চট্টগ্রামের খান পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের কনিষ্ঠ খান (তামিম)।

হার্ট অ্যাটাকের আগে তামিমই ছিলেন বর্তমান ক্রীড়া উপদেষ্টার খুব কাছাকাছি। বিভিন্ন সময় ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ডে তামিমকে কাছে ডেকে নিতে দেখা গেছে আসিফকে। অসুস্থ হওয়ার কারণেই হোক কিংবা অন্য কোনো কারণে, মাঝের দিকে তামিম নিজেকে খানিক গুটিয়ে নিয়েছেন। শোনা যাচ্ছিল, তামিম বোর্ড পরিচালক হতে চান। সে সম্ভাবনাও ছিল প্রচুর।

ঢাকার ক্লাব কোটায় তামিমের পরিচালক নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাও আছে যথেষ্ট। কিন্তু এখন আবার শোনা যাচ্ছে, জাতীয় দলের এই সাবেক অধিনায়ক বোর্ড নির্বাচনে সভাপতি পদে দাঁড়াতে পারেন। বিসিবির পরবর্তী সভাপতি পদে লড়াই হবে জাতীয় দলের তিন সাবেক অধিনায়কের মধ্যে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়?

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত