ঢাকা রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বাংলাদেশ দল ঘোষণা পাকিস্তান আসছে না

বাংলাদেশ দল ঘোষণা পাকিস্তান আসছে না

বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি। কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গণে এখন পর্যন্ত বলার মতো সাফল্য নেই খেলাটির। সাফল্য বলতে ঘরের মাঠে আয়োজিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ড কাপের শিরোপা জয়। এবার ইতিহাস গড়ার হাতছানি লাল সবুজের নারী কাবাডি দলের সামনে। প্রথমবারের মতো নারী কাবাডি বিশ্বকাপের আয়োজন করতে যাচ্ছে ঢাকা। ১১ দল নিয়ে আগামীকাল সোমবার মিরপুরের শহিদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে শুরু হবে এই বিশ্বকাপ। আসরটি হওয়ার কথা ছিল ১৪ দল নিয়ে; কিন্তু আর্জেন্টিনা, জাপান, নেদারল্যান্ডস ও দক্ষিণ কোরিয়া শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়ায়। শক্তিশালী পাকিস্তান ছিল স্ট্যান্ডবাই তালিকায়। কিন্তু দল গড়তে পারেনি বলে তারাও আসেনি। কেন আসেনি তারা? সেই বল আন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশনের (আইকেএফ) কের্টে ঠেলে দিয়েছেন বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এসএম নেওয়াজ সোহাগ। গতকাল শনিবার কাবাডি ফেডারেশনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশন আমাদের ১৪টি দেশ চূড়ান্ত এবং দুটি দেশ পোল্যান্ড ও পাকিস্তানকে স্ট্যান্ডবাই রেখেছিল। সেই ১৪ দেশের মধ্যে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, নেদারল্যান্ডস ও আর্জেন্টিনা আসছে না। এদের পরিবর্তে স্ট্যান্ডবাই হিসেবে পাকিস্তান ও পোল্যান্ডের খেলার সুযোগ ছিল। পাকিস্তান আসবে না, পোল্যান্ড আসছে। আসলে এগুলো সবই দেখছে আইকেএফ।’ সর্বশেষ নারী বিশ্বকাপে পঞ্চম হয়েছিল বাংলাদেশ। এবার পদক জিতে র‌্যাঙ্কিংয়ে এগুতে চায়। সেই কারণেই আয়োজক লাল সবুজের এই দেশ। তবে স্বাগতিক বাংলাদেশের পদক স্বপ্নে বাগড়া দিতে পারে ভারত, ইরান, চাইনিজ তাইপে, নেপাল ও থাইল্যান্ড। এরাই এখন বিশ্ব কাবাডির বড় শক্তি। বিশ্বকাপ উপলক্ষে দুজনকে স্ট্যান্ডবাই রেখে ২১ সদস্যের বাংলাদেশ দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু দল ঘোষণার সময় অধিনায়ক, কোচ কেউই উপস্থিত ছিলেন না। তাই মিডিয়া সরাসরি প্রস্তুতি ও লক্ষ্য নিয়ে কিছুই জানতে পারেনি। আজ টুর্নামেন্টের ট্রফি উন্মোচন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে বিকালে যমুনায় ১১ দলের অধিনায়কদের সঙ্গে নিয়ে ট্রফি উন্মোচন হবে।

রূপালি আক্তার সিনিয়রের বাহুতে থাকবে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড। এই বিশ্বকাপ তার জন্য একই সঙ্গে আনন্দের ও বেদনারও। এই প্রথম দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি। পরে এই টুর্নামেন্ট দিয়েই প্রিয় কাবাডিকে বলবেন বিদায়। রূপালির অনুভূতিতে তাই আবেগের দোলাচল। ‘২০০৯ সাল থেকে কাবাডি খেলছি।

বিশ্বকাপের মতো আসরে অধিনায়ক হতে পেরে খুব ভালো লাগছে। এর আগে কখনও অধিনায়কত্ব করিনি। বিশ্বকাপ দিয়ে খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি টানতে যাচ্ছি। এই আসরে অধিনায়ক হতে পারাটাও বিশেষ কিছু। এত বড় টুর্নামেন্ট, বিশ্বকাপে সবাই ভালো করার জন্য আসবে। ভারত, ইরান, চাইনিজ তাইপে ভালো দল। নেপাল, থাইল্যান্ডও শক্তিশালী। আমরা প্রথম বিশ্বকাপে পঞ্চম স্থানে অধিকার করেছিলাম। এবার তার থেকেও ভালো কিছু করতে চাই।’

প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। রানার্সআপ ইরান। বাংলাদেশ কোচ আরদুজ্জামান মুন্সি অবশ্য এবার পদকের স্বপ্ন দেখালেন। ‘অনুশীলনে আমাদের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। আমরা শুরু থেকেই ধারাবাহিকভাবে অনুশীলন করেছি বিকেএসপিতে। বিশ্বকাপের জন্য এখন যথেষ্ট প্রস্তুত। আমাদের দেশে খেলা, আমাদের উৎসাহ উদ্দীপনা একটু বেশিই। অন্তত একটা পদক পাব-এই আশা নিয়েই আমরা প্রস্তুত হয়েছি। দেশকে একটি পদক উপহার দিতে পারব বলে আশাবাদী।’

কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এসএম নেওয়াজ সোহাগ এতটা আশা করতে চান না এখনই। সাম্প্রতিক সময়ে যৌন হয়রানির অভিযোগের ভিড়ে নিরাপদ ও সফলভাবে বিশ্বকাপ আয়োজনেই মনোযোগ বেশি তার। লক্ষ্যের প্রশ্নেও তিনি বললেন কেবল র‌্যাঙ্কিংয়ের উন্নতির কথা। ‘নারীদের র‌্যাঙ্কিংয়ে আমরা বর্তমানে পঞ্চম স্থানে আছি। এই বিশ্বকাপ দিয়ে আমরা র‌্যাঙ্কিংয়ে আরেকটু উপরে উঠতে পারি এবং সে সুযোগ আমাদের সামনে আছে। দলের কাছে আমাদের মূল প্রত্যাশাও এটি। এই প্রথম বাংলাদেশ নারী কাবাডি বিশ্বকাপ আয়োজন করছে, আয়োজক হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা সফলভাবে সবকিছু সম্পন্ন করা। খেলা পরিচালনার জন্য অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দেশ থেকে রেফারি আনা হয়েছে।

ভারত থেকে পাঁচজন রেফারি আনা হয়েছে। এছাড়া আমাদের দেশের ১০-১২ জনের একটা টেকনিক্যাল কমিটি আছে, যারা সবকিছু তদারকি করবেন। নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ এই আয়োজন দিয়ে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করতে চাই আমরা।’

বাংলাদেশ গত কয়েক বছর আন্তর্জাতিক কাবাডি আয়োজন করেছে। সেখানে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ডও রয়েছে। এরপরও অনেক প্রতিপক্ষ আম্পায়ারিং নিয়ে প্রশ্ন তুলে। বিশ্বকাপের মতো আসরে আম্পায়ারিংয়ের নিরপেক্ষতা নিয়ে সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের দেশের ১২ জনসহ আন্তর্জাতিক আম্পায়ার থাকবেন কয়েকজন। ভারতের আম্পায়ারিংয়ের মান ভালো সেখান থেকেও বেশ কয়েকজন আম্পায়ার আসছেন।’ তবে অভিযোগ রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের রেফারি থাকা সত্বেও নেওয়াজ সোহাগ তার পছন্দের কম অভিজ্ঞতাপূর্ণ রেফারিদের বিশ্বকাপে অন্তর্ভূক্ত করেছেন।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল : শ্রাবণী মল্লিক, বৃষ্টি বিশ্বাস, রুপালী আক্তার (অধিনায়ক), স্মৃতি আক্তার, রেখা আক্তারী, মেবি চাকমা, রুপালী আক্তার (জুনিয়র), আঞ্জুয়ারা রাত্রি, সুচরিতা চাকমা, খাদিজা খাতুন, লোবা আক্তার, ইয়াসমিন খানম, ইসরাত জাহান ও তাহরিম। কোচ- শাহনাজ পারভীন মালেকা ও আরদুজ্জামান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত