ঢাকা বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মুশফিক-লিটনের জোড়া শতকে এগিয়ে বাংলাদেশ

ফলো অনের শঙ্কায় আয়ারল্যান্ড
মুশফিক-লিটনের জোড়া শতকে এগিয়ে বাংলাদেশ

আগের দিনই শততম টেস্টের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন মুশফিকুর রহিম। সেই সঙ্গে দেশবাসীকে ঐতিহাসিক এক মুহূর্তের অপেক্ষায় রেখেছিলেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের শুরুটা মুশফিকুর রহিমের ইতিহাসগড়া মুহূর্ত দিয়ে। আগের দিনের অপেক্ষা ঘুচিয়ে দেন তিনি। দিনের সব আকর্ষণ যেন দ্বিতীয় ওভারেই শেষ! আয়ারল্যান্ডের পেসার জর্ডান নিলের করা দিনের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলটিতে ১ রান নিয়েই ড্রেসিংরুমের দিকে ফিরে হেলমেট খুলে ব্যাট উঁচিয়ে ধরলেন মুশফিকুর রহিম, হাঁটু গেড়ে মাটিতে কপাল ঠেকালেন, আলিঙ্গনাবদ্ধ হলেন সঙ্গী ব্যাটসম্যান লিটন দাসের। গ্যালারিতে উপস্থিত প্রায় সবার মুঠোফোনেই তখন সক্রিয় হয়ে উঠেছে ক্যামেরা। মুশফিকের শততম টেস্টে শতরানের উদ্?যাপনের মুহূর্তটাকে নিজের করে রাখতে চাইলেন সবাই।

শততম টেস্টে সেঞ্চুরিতে নাম লেখান ইতিহাসের একাদশ ব্যাটার হিসেবে। বাকি সময়ে দারুণ সেঞ্চুরিতে রাঙান লিটন দাস। ৫০০-এর কাছে চলে যাওয়া বাংলাদেশের বিশাল পুঁজির জবাব দিতে নেমে শেষ বিকেলে ধস নেমেছে আয়ারল্যান্ডের। ফলে আগের টেস্টের মতই শঙ্কায় পড়ে গেছে সফরকারীরা। সিলেটে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নামতে হয়নি বাংলাদেশকে। মিরপুরে টেস্টেও একই সুবিধা নিতে চায় স্বাগতিকরা। আয়ারল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে স্পিনারদের সাফল্যে দ্রুত উইকেট নিয়ে সফরকারীদের ফলোঅনে ফেলতে চায় বাংলাদেশ।

মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ৪৭৬ রানে। আয়ারল্যান্ড দিন শেষ করে ৫ উইকেটে ৯৮ রানে। শততম টেস্টে ৯৯ রানে প্রথম দিন শেষ করা মুশফিক প্রত্যাশিত শতরান ছুঁয়ে আউট হয়ে যান ১০৪ রানে। ত্রয়োদশ সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি শতকের রেকর্ডে স্পর্শ করেন তিনি মুমিনুল হককে। পঞ্চম টেস্ট সেঞ্চুরিতে লিটন করেন ৮ চার ও ৪ ছক্কায় ১২৮ রান। সকালে প্রথম ওভারটি কেটে যায় খানিকটা নাটকীয়তা আর কিছুটা উৎকণ্ঠার মিশেলে। ম্যাথু হামফ্রিজের করা ওভারে কোনো রান নিতে পারেননি মুশফিক। এর মধ্যে একটি ছিল জোরাল আবেদন, আরেকটিতে দুর্দান্ত টার্নিং ডেলিভারিতে তিনি রক্ষা পান অল্পের জন্য। তবে অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হয়নি খুব একটা। দিনের দ্বিতীয় ওভারেই শতরান ছুঁয়ে ফেলেন তিনি। ছোট্ট এক তালিকায় নিজের নাম খোদাই করেন তিনি কিংবদন্তিদের সঙ্গে। টেস্ট ম্যাচের সেঞ্চুরিতে রানের সেঞ্চুরি করা একাদশ ক্রিকেটার তিনি। পরের বলেই চার মেরে ফিফটিতে পৌঁছে যান লিটন।

আগের দুটি শতরানকে মুশফিক রূপ দিয়েছিলেন দেড়শ’ ছাড়ানো ইনিংসে। এবার তেমন কিছু পারেননি। হামফ্রিজের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বিদায় নেন তিনি ১০৪ রানে। তার ২১৪ বলের ইনিংসে বাউন্ডারি ৫টি। লিটনের সঙ্গে তার জুটি থামে ১০৮ রানে। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি শতরানের জুটির রেকর্ড আগে থেকেই এই দুজনের। সপ্তম সেঞ্চুরি জুটিতে নিজেদের আরও ওপরে নিলেন দুজন। এরপর মুশফিকের ভূমিকায় নেমে একটি প্রান্ত আগলে রাখেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দাপুটে ব্যাটিংয়ে দ্রুতই শতরানের কাছে পৌঁছে যান লিটন। ৯১ থেকে দারুণ একটি ছক্কা মারেন তিনি হামফ্রিজকে। শতরান পূর্ণ করেন ১৫৮ বল খেলে।

১২৩ রানের জুটি ভাঙে মিরাজের বিদায়ে। তিন রানের জন্য ফিফটি পাননি এই অলরাউন্ডার। অভিষিক্ত লেগ স্পিনার গ্যাভিন হোয়ে পান প্রথম টেস্ট উইকেটের স্বাদ। পরের ওভারে স্লগ সুইপের চেষ্টায় শেষ হয় লিটনের ইনিংসও। লোয়ার অর্ডারে তিন চার এক ছক্কায় ১৮ রান করেন ইবাদত হোসেন চৌধুরি। ৩৩ রানের মধ্যে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে পাঁচশ পর্যন্ত যাওয়া হয়নি বাংলাদেশের। আগের দিন চার উইকেট নেওয়া অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন এ দিন যোগ করেন আরও দুটি। আড়াই বছর আগে মিরপুরেই আরেক দফায় ৬ উইকেট নিয়েছিলেন এই অফ স্পিনার। আয়ারল্যান্ডের হয়ে টেস্টে সবচেয়ে বেশি উইকেট ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তার।

ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা খারাপ করে আইরিশরা। পল স্টার্লিং যথারীতি শুরু করে চেনা আগ্রাসী চেহারায়। তাকে (২৬ বলে ২৭) ফিরিয়েই ৪১ রানের জুটি ভাঙেন একাদশে ফেরা সৈয়দ খালেদ আহমেদ।

দিনের বাকিটুকু কেবলই স্পিনের সামনে আইরিশদের টিকে থাকার লড়াই। সেই চেষ্টায় সফল হননি কেউ। উইকেটে ততক্ষণে বল নিচু হতে শুরু করেছে বেশ। গ্রিপও করছে। তেমন কোনো জুটি তাই গড়ে ওঠেনি। বালবার্নি ও কার্টিস ক্যাম্ফারকে ফেরান হাসান মুরাদ। এই দুটির মাঝে কেড কারকাইমেলকে ১৭ রানে থামান মিরাজ। প্রথম স্পেলে খুব ভালো করতে না পারা তাইজুল দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে বিদায় করেন হ্যারি টেক্টরকে। দিনের শেষ পাঁচ ওভার কোনোরকমে কাটিয়ে দেন লর্কান টাকার ও স্টিভেন ডোহেনি। তবে পরদিন তাদের অপেক্ষা কত চ্যালেঞ্জে, সেই নমুনাও পেয়ে গেছেন দুজন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত