
গত দেড় বছরে ক্রীড়াঙ্গণের বিভিন্ন ফেডারেশনে নির্বাচিত কমিটি ভেঙে অ্যাডহক কমিটি করেছিলেন বিদায়ী যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের কর্মীদের পুনর্বাসিত করা হয়েছে বলে আগেই অভিযোগ তুলেছিলেন ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা। এমনকি তাদের কর্মকাণ্ড নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ ও মানববন্ধন করেছিলেন ক্রীড়াবিদ ও সংগঠকরা। গত বুধবার যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার পদ থেকে আসিফ আহমেদ সজীব ভূঁইয়া পদত্যাগ করার পর মিছিল হয়েছে শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনে। এবার সরব হয়েছেন কাবাডির খেলোয়াড় ও সংগঠকরা। বিদায়ী উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সাবেক নির্বাহী পরিচালক আমিনুল ইসলাম স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কাবাডির অ্যাডহক কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদে এসএম নেওয়াজ সোহাগকে আসীন করার পর থেকেই এই আন্দোলন চলছে। ক্রীড়া পরিষদের নির্বাহী পরিচালক ও উপদেষ্টা আসিফের বিদায়ের পর এবার তারা সরব হয়েছেন আওয়ামী লীগের দোসর সোহাগকে সরানোর দাবিতে।
বিদায়ী ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে নানা কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন সোহাগ। শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবুর রহমানের নানা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সোহাগের উপস্থিত থাকার ছবি পোস্ট দিয়ে কাবাডি সংগঠক দেলোয়ার হোসেন ফেসবুকে লিখেন, ‘বিদায়ী ক্রীড় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও ক্রীড়া পরিষদের বিদায়ী নির্বাহী পরিচালক আমিনুল ইসলাম গত দেড় বছরে ক্রীড়াঙ্গনকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। টাকার বিনিময়ে বেশির ভাগ ফেডারেশনে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন করে গেছেন তারা। যার অন্যতম প্রমাণ এসএম নেওয়াজ সোহাগ। এই লোকটির বিরুদ্ধে শত শত ছবি, মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচার হয়েছে। দুদকে নথি গেছে। মানববন্ধনও হয়েছে। এমন কোনো প্রক্রিয়া নেই যা করা হয়নি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, এই দুইজন লোকের টনক নড়াতে পারিনি।’
তিনি আরও লিখেন, ‘দেড় বছরের বেশি পার হয়ে গেলেও নির্বাচনের কোনো খবর নেই। কারন যত বেশি দিন কমিটির কার্যক্রম থাকবে, তত বেশি লুট-পাট করা যাবে। গত ১৭ নভেম্বর নারী বিশ্বকাপ কাবাডি হয়েছিল। যেখানে বাজেট ছিল ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ১৪টা দেশ অংশ নেবে এবং স্ট্যান্ডবাই থাকবে আরও দুটি- এই মর্মে ১৬টি দেশের খেলোয়াড়দের বিমানে আসা যাওয়া, থাকা খাওয়াসহ এই বাজেট করা হয়েছে। অথচ বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে মাত্র ১১টি। তাহলে বাজেটের তিন ভাগের এক ভাগ কমে গেলে নারী বিশ্বকাপ কাবাডির খরচা বেঁচে যায় চার কোটি টাকা। সেই অর্থ কোথায়? এছাড়া সোহাগ ২০১৭ সাল থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত অ্যাডটাচ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এবং ডেকোরেশনের মাধ্যমে বিল ভাউচার জালিয়াতি করে কম করে হলে ২০ কোটি টাকার জালিয়াতি করেছে। তার সব দুর্নীতি এবং জালিয়াতির বুদ্ধিদাতা বর্তমানে কোষাধ্যক্ষ মনির হোসেন। আমার সন্দেহ হচ্ছে, এরা যে কোনো সময় পালাতে পারে।’ তিনি দেশের সকল ইমিগ্রেশনে এসএম নেওয়াজ সোহাগের ছবি পাঠানোর জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন।
এদিকে দেশের অনেক ডিসিপ্লিনই ভেন্যুর অভাবে ধুকছে। নিজস্ব ভেন্যু না থাকায় নিয়মিত অনুশীলন করতে পারছে না তারা। যার প্রভাব পড়ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গণেও। কিন্তু কেবলমাত্র বিদায়ী ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও ক্রীড়া পরিষদের নির্বাহী পরিচালক আমিনুল ইসলামের স্বজনপ্রীতির কারণে এবং নিয়ম নীতির বাইরে গিয়ে ঢাকায় একটি ছয়তলা বিল্ডিং ও একটি কোর্ট থাকা সত্ত্বেও গোপালগঞ্জ মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সকে দেওয়া হয়েছে কাবাডির জন্য। শুধু তাই নয়, অন্য ডিসিপ্লিনের ক্রীড়াবিদরা বিদেশে খেলতে যেতে পারেন না আর্থিক সংকুলানের কারণে। অথচ তাদের বঞ্চিত করে শুধু নারী কাবাডির প্রশিক্ষণের জন্যই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ৫০ লাখ টাকা। নারী বিশ্বকাপ কাবাডি আয়োজনের জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পাঁচ কোটি টাকা নিজেদের ফান্ডে নিয়ে গেছেন সোহাগ। এভাবেই গত দেড় বছরে অন্যরা বঞ্চিত হলেও মন্ত্রণালয় থেকে কাবাডির নাম করে সোহাগ কোটি কোটি টাকার লুটে নিয়ে গেছেন।