ঢাকা বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

রেকর্ড ৯ কোটি ২০ লাখে কলকাতায় মোস্তাফিজ

আইপিএল নিলাম
রেকর্ড ৯ কোটি ২০ লাখে কলকাতায় মোস্তাফিজ

আইপিএলে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকের রেকর্ড গড়লেন মোস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি এই পেসারকে ৯ কোটি ২০ লাখে দলে ভিড়িয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। যদিও নিলামের এক পর্যায়ে মনে হয়েছিল, ৪ কোটি ৬০ লাখ রুপিতে ফয়সালা হয়ে যাবে। বেশ কিছুক্ষণ কোনো পক্ষ থেকেই সাড়া মিলল না। কিন্তু টেবিলে হাতুড়ি পড়ার আগে শেষ মুহূর্তে আবার নতুন করে জমে উঠল লড়াই। তরতরিয়ে বাড়তে থাকল মোস্তাফিজের পারিশ্রমিক। শেষ পর্যন্ত তা থামল ৯ কোটি ২০ লাখ রুপিতে। আইপিএলে নিলামের টেবিলে ঝড় তুলে বাংলাদেশের অভিজ্ঞ পেসারকে দলে পেল কলকাতা। বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারের আইপিএলে রেকর্ড পারিশ্রমিক এটিই। আগের রেকর্ডও ছিল মোস্তাফিজের। গত আইপিএলে তাকে ৬ কোটি রুপিতে নিয়েছিল দিল্লি ক্যাপিটালস। যদিও সেটা ছিল নিলামের বাইরে বদলি হিসেবে এবং পুরো মৌসুমের জন্য নয়। নিলামের টেবিলে সবচেয়ে দামি ছিলেন এতদিন মাশরাফি বিন মুর্তজা। ২০০৯ আইপিএলে তাকে ৬ লাখ ডলারে নিয়েছিল কলকাতা, তখনকার বাজার দর অনুযায়ী অঙ্কটা ৪ কোটি রুপির একটু ওপরে।

মোস্তাফিজকে নিয়ে এবার নিলামে বাড়তি আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা ছিল আগে থেকেই। অনেক দিন ধরেই এই সংস্করণে দারুণ ফর্মে আছেন তিনি। তবে আইপিএল চলার সময় দেশের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজও আছে। তাই একটু শঙ্কার জায়গাও ছিল তার প্রতি দলগুলোর দৃষ্টিভঙ্গির জায়গা নিয়ে। তবে শেষ পর্যন্ত ফুটে উঠল, তাকে পেতে মরিয়া হয়েই নিলামে এসেছিল দুটি দল।

২ কোটি ভিত্তিমূল্যের এই পেসারের জন্য লড়াইয়ে নামে চেন্নাই সুপার কিংস, কলকাতা নাইট রাইডার্সও। মোস্তাফিজ ছিলেন পেসারদের দ্বিতীয় সেটে। নিলামের মূল ধাপগুলো শেষে বাকি থাকা ক্রিকেটারদের মধ্যে যাদের প্রতি দলগুলোর আগ্রহ আছে, সেই তালিকা নিয়ে ‘অ্যাকসিলারেটেড’ একটি রাউন্ড হয়। সেখানেই তোলা হয় মোস্তাফিজের নাম। লড়াইয়ের শুরুটা ছিল চেন্নাই সুপার কিংস ও দিল্লি ক্যাপিটালসের। পরে বিদায় নেয় দিল্লি, যোগ হয় কলকাতা। টাকার অঙ্ক যখন বাড়ছে, কয়েক দফায় দুই দলকেই একটু সময় নিয়ে পরামর্শ করতে দেখা যায়। শেষ পর্যন্ত শেষ হাসি কলকাতার।

আইপিএলে মোস্তাফিজের নবম মৌসুম হবে এটি। তবে বলিউড মহাতারকা শাহরুখ খানের দল কলকাতায় খেলবেন তিনি প্রথমবার। আট আসরে পাঁচটি ভিন্ন দলের হয়ে মোট ৬০টি ম্যাচ খেলেছেন ৩০ বছর বয়সী বাঁহাতি পেসার। ওভারপ্রতি ৮.১৩ রান দিয়ে উইকেট নিয়েছেন ৬৫টি। ২০১৬ সালে অভিষেক আসরে ১৭ উইকেট নিয়ে তিনি আসরের সেরা উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরস্কার পেয়েছিলেন। এই স্বীকৃতি পাওয়া একমাত্র বিদেশি ক্রিকেটার এখনও পর্যন্ত তিনিই।

কলকতায় সাত মৌসুম খেলেছেন বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। মোস্তাফিজ এখন ব্যস্ত আইএল টি-টোয়েন্টিতে। প্রথমবারের মতো সংযুক্ত আরব আমিরাতের এই লিগে খেলছেন তিনি। দুবাই ক্যাপিটালসের হয়ে চার ম্যাচ খেলে উইকেট নিয়েছেন ছয়টি। নিলামের সংক্ষিপ্ত তালিকায় মোস্তাফিজসহ নাম ছিল বাংলাদেশের সাত ক্রিকেটারের। তাদের মধ্যে শুধু একজনের নামই উঠেছিল নিলামে। ‘অ্যাকসিলারেটেড’ রাউন্ডে নাম ওঠে তাসকিন আহমেদের। ৭৫ লাখ রুপি ভিত্তিমূল্যের পেসারকে নেয়নি কোনো দল।

এদিন নিলামের শুরুতেই নাম উঠে জ্যাক ফ্রেঞ্জার ম্যাকগার্কের। তবে তাকে নিতে আগ্রহ দেখায়নি কেউ। নিলামে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে দল পেয়েছেন ডেভিড মিলার। ২ কোটিতে তাকে দলে নিয়েছে দিল্লি ক্যাপিটালস। নিলামের আগে থেকেই আলোচনায় ছিলেন ক্যামেরুন গ্রিন। নিলামের টেবিলেও তাকে দলে ভেড়াতে রীতিমতো যুদ্ধ করেছে একাধিক ফ্র্যাঞ্চাইজি। প্রথমে তার প্রতি আগ্রহ দেখায় কলকাতা নাইট রাইডার্স ও রাজস্থান রয়্যালস। এক পর্যায়ে সেখানে যোগ দেয় চেন্নাই সুপার কিংসও। শেষ পর্যন্ত ২৫ কোটি ২০ লাখ রুপিতে এই অজি অলরাউন্ডারকে দলে ভিড়িয়েছে কলকাতা। অভিষিক্ত অলরাউন্ডারদের সেটে গাস আটকিনসন, রাচিন রবীন্দ্র, লিয়াম লিভিংস্টোন ও উইয়ান মোল্ডার অবিক্রিত থেকেছেন। ২ কোটিতে ভানিন্দু হাসারাঙ্গাকে দলে ভিড়িয়েছে লক্ষ্মৌ সুপার জায়ান্টস। ৭ কোটিতে বেঙ্গালুরুতে গেছেন ভেঙ্কেটেশ আইয়ার।

অভিষিক্ত উইকেটকিপারদের সেটে ১ কোটিতে কুইন্টন ডি কককে দলে নিয়েছে মুম্বাই, ২ কোটিতে বেন ডাকেটকে নিয়েছে দিল্লি ক্যাপিটালস, ২ কোটিতে ফিন অ্যালেনকে দলে নিয়েছে কলকাতা। দল পাননি রহমানুল্লাহ গুরবাজ, জনি বেয়ারস্ট্রো, জেমি স্মিথ। অভিষিক্ত পেসারদের প্রথম সেটে চড়া দামে দল পেয়েছেন মাথিশা পাথিরানা। তাকে দলে পেতে নিলামের টেবিলে লড়াই করেছে লক্ষ্মৌ, দিল্লি ও কলকাতা। শেষ পর্যন্ত ১৮ কোটিতে এই লঙ্কান পেসারকে দলে নিয়েছে কলকাতা।

২ কোটি ভিত্তিমূল্য ছিল জ্যাকব ডাফির। তাকে ভিত্তিমূল্যেই দলে নেয় বেঙ্গালুরু। লক্ষেœৗ সুপার জায়ান্টস ২ কোটি রুপিতে দলে নিয়েছে এনরিখ নরকিয়াকে। ম্যাট হ্যানরি, স্পেন্সার জনসন, আকাশ দীপ, শিভম মাভি, জেরাল্ড কোয়েতজি, ফজল হক ফারুকি দল পাননি। অভিষিক্ত স্পিনারদের প্রথম সেটে অবিক্রিত থাকেন রাহুল চাহার, মাহিশ থিকশানা, মুজিব উর রহমান। তবে রবি বিষ্ণইকে ৭ কোটি ২০ লাখ রুপিতে দলে নেয় রাজস্থান রয়্যালস। আকিল হোসেনকে ২ কোটিতে দলে নেয় চেন্নাই সুপার কিংস। অনভিষিক্ত পেসারদের সেটে চমক দেখিয়েছেন প্রশান্ত বীর ও কার্তিক শর্মা। ৩০ লাখ ভিত্তি মূল্যের এই দুই অনিভিষিক্ত ক্রিকেটার দল পেয়েছেন সমান ১৪ কোটি ২০ লাখ রুপিতে। দুজনকেই দলে নিয়েছে চেন্নাই। অভিষিক্ত ব্যাটারদের দ্বিতীয় সেটে দল পেয়েছেন পাথুম নিশাঙ্কা। ৭৫ লাখ ভিত্তিমূল্যের এই লঙ্কান ওপেনারকে দলে ভিড়িয়েছে দিল্লি ক্যাপিটালস। তাকে পেতে লড়াই করেছিল কলকাতাও। ৭ কোটিতে জেসন হোল্ডারকে দলে নিয়েছে গুজরাট।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত