প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
সূফী দর্শনকে ঐশী প্রেমের দর্শন হিসেবেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। সমস্ত ইবাদাত, যিয়াযাত, সংযম সাধনার যিকর-আযকারের উদ্দেশ্য মহান আল্লাহর প্রেমের পথে অগ্রসর হওয়া। হজরত আহ্ছানউল্লা রহমাতুল্লাহে আলায়হের চিন্তাধারায়ও প্রেমের গুরুত্ব সীমাহীন। তিনি বলেন : ‘প্রেম অমূল্য বস্তু, ইহার উপমা নাই। ইহা স্বর্গীয়, ইহা কিমিয়াস্বরূপ। প্রেম যাহার হৃদয় স্পর্শ করে, তাহার অন্তরস্থ কৃত্রিম পদার্থ বিশুদ্ধ সুবর্ণে পরিণত হয়। দুষ্প্রবৃত্তি তাহা হইতে বিদায় গ্রহণ করে। (ছূফী: ৭ম সংস্করণ, পৃ. ৬৭)
অতএব, তাঁর এ বক্তব্য থেকে এটা সুúিষ্ট হচ্ছে যে ঐশী প্রেমের সাথে নৈতিকতার গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
মাওলানা জালালুদ্দীন রূমী (রহ.) এ প্রসঙ্গে বলেন, যাহার জামা (অস্তিত্ব) প্রেম দ্বারা পবিত্র হয়, তিনি লালসা ও সব ধরনের কলুষ থেকে নির্মুক্ত হন। সূফী আহ্ছানউল্লা (র.) অন্যত্র বলেন, ‘স্রষ্টার প্রতি অটুট প্রেম হইলে প্রত্যেক সৃষ্ট জীবের প্রতি ভালবাসা জন্মে’। তাঁর এই মহান মন্ত্রটি শুধুমাত্র উচ্চারণেই থেমে থাকেনি। এই মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁর ভক্ত ও অনুসারীরা আহ্ছানিয়া মিশনের মাধ্যমে মানব সেবার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সুফী আহ্ছানউল্লা (রহ.)-এর উপলব্ধিতে প্রেম হলো আল্লাহর উদ্দেশ্যে সমস্ত বস্তু উৎসর্গ করার মানসিকতা অর্জন। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘খোদা তাআলা দাউদ নবীকে (আ.) বলিয়াছিলেন- ঐ ব্যক্তি আমার প্রিয়তর যে আমাকেই চায়- ‘শাস্তির ভয়ে কিংবা পুরষ্কারের আশায় নহে’। অন্যত্র কথিত হয়েছে- তাহা অপেক্ষা অপরাধী কে, যে দোজখের ভয়ে কিংবা বেহেশতের আশায় আমাকে অর্চ্চনা করে। যদি আমি দোজখ বা বেহেশ্ত সৃষ্টি না করিতাম, তবে কি কেহ আমার অর্চ্চনা করিত না?’ (ছূফী পৃ. ৬৮)।
প্রেমের পথের পথিকদের না থাকবে দুনিয়ার লোভ, না থাকবে পরকালে বেহেশ্ত প্রাপ্তির আকাংখা। আল্লাহ্ প্রেমিক শুধুমাত্র আল্লাহকেই চাইবে। হজরত রাবেয়া বসরীর এ বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি সূফী দর্শনের ইতিহাসের সমস্ত পাঠকদের জানা রয়েছে। তাঁর অনবরত প্রার্থনা এই ছিল- ‘হে আল্লাহ্ আমি, যদি বেহেশতের আশায় তোমার ইবাদত করি তবে বেহেশত আমার জন্য হারাম করে দিও এবং দোজখের ভয়ে যদি তোমার ইবাদত করি তবে দোজখেই যেন আমার স্থান নির্ধারিত হয়’। হজরত রাবেয়ার একমাত্র আকাঙ্ক্ষা ছিল শুধুমাত্র আল্লাহর জামাল দর্শন। তিনি যেহেতু প্রেমের উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছিলেন, তাঁর প্রেমাúিদ ভিন্ন সবকিছুই তাঁর কাছে তুচ্ছ বলে বিবেচিত হতে থাকে।
বি. দ্র : লেখকের বানান হুবহু রাখা হয়েছে।