ঢাকা ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৪ ফাল্গুন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও স্বীকৃতি মেলেনি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার উদ্দিনের

স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও স্বীকৃতি মেলেনি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার উদ্দিনের

স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার দোলাপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার উদ্দিন। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র পেলেও আজও তিনি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের গেজেটভুক্ত হতে পারেননি।

বর্তমানে প্রায় ৯০ বছর বয়সী এই মুক্তিযোদ্ধা অসুস্থ, চলাফেরায় অক্ষম এবং দারিদ্র্যের কষাঘাতে দিন কাটাচ্ছেন। বার্ধক্যজনিত দুর্বলতার কারণে তিনি এখন কথা বলতেও কষ্ট পান।

মুক্তিযুদ্ধের সময় আনোয়ার উদ্দিনের বয়স ছিল ৩০ বছর। তিনি স্ত্রী ও এক বছরের সন্তানকে রেখে লালমনিরহাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে যান এবং সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৬ নম্বর সেক্টরের অধীনে লালমনিরহাটের বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র পান, যার এফএফ নম্বর ৮০/২৬, ক্রমিক নম্বর ১১৬৫৬৭।

তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম বলেন, "যুদ্ধ শুরু হলে তিনি আর ঘরে বসে থাকতে পারেননি। আমাকে বলেছিলেন—এখন বসে থাকার সময় নয়, দেশকে বাঁচাতে হবে। তাই সন্তানসহ আমাদের রেখে তিনি যুদ্ধে চলে যান। ২০ দিন পর্যন্ত তিনি বাড়ি ফেরেননি, আমরা ধরে নিয়েছিলাম হয়তো তিনি আর বেঁচে নেই। কিন্তু ২০ দিন পর বিজয়ের আনন্দ নিয়ে তিনি ফিরে আসেন এবং যুদ্ধের গল্প শোনান।"

২০০১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাইয়ে আনোয়ার উদ্দিনের নাম তালিকাভুক্ত হলেও আর্থিক সংকটে যোগাযোগ করতে না পারায় সে সময় সনদ সংগ্রহ করতে পারেননি। ২০১৪ সালে আবার যাচাই-বাছাইয়ে তার নাম ক্রমিক নম্বর ২৫-এ অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু অনলাইনকৃত সনদপত্র বাড়িতে আগুনে পুড়ে যাওয়ায় গেজেটভুক্তির প্রক্রিয়া আটকে যায়।

এরপর বহু চেষ্টার পর হারিয়ে যাওয়া সনদপত্র খুঁজে বের করে ২০২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) গেজেটভুক্তির জন্য আবেদন করেন। তবে এখনো তার আবেদনের কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে জানান তার পরিবার।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার উদ্দিনের ছেলে আব্দুল লতিফ বলেন, "বাবার যাচাই-বাছাইয়ে নাম থাকলেও যোগাযোগ করতে না পারায় গেজেটভুক্ত হয়নি। যখন উদ্যোগ নিলাম, তখন সনদপত্র পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে সেটি খুঁজে পেয়ে গত বছর ঢাকায় গিয়ে আবেদন করি। কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বাবা এখন অসুস্থ, চলাফেরা করতে পারেন না। তার একটাই ইচ্ছে—মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেখে যাওয়া।"

বীর মুক্তিযোদ্ধা,স্বীকৃতি,স্বাধীনতা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত