বাংলা বর্ষবিদায় ও নববর্ষ বরণে পার্বত্য চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে বৃহত্তম সামাজিক উৎসব বৈসাবি।
শনিবার (১২ এপ্রিল) সকালে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের জলে বিজুর ফুল ভাসিয়ে এই উৎসবের সূচনা হয়।
গর্জনতলী মধ্যম দ্বীপে গঙ্গা দেবীর আরাধনায় ফুল নিবেদন করে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খোন্দকার রেজাউল করিম, এবং মুক্তিযোদ্ধা প্রীতি কান্তি ত্রিপুরা।
রাজ বনবিহার ঘাটে ফুল ভাসানো উৎসবে অংশ নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার বলেন, “বৈসাবি এখন আর কোনো একটি গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এটি সকলের উৎসব। এখানে মিলিত প্রার্থনায় থাকে শান্তি, সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধির কামনা।”
ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই হ্রদের পাড়ে ফুল হাতে ভিড় করেন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ। রক্তজবা, গাঁদা, রঙ্গনসহ নানা বুনো ফুল সাজানো হয় কলাপাতায়, নিবেদন করা হয় গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে। নারীরা পরেন ঐতিহ্যবাহী পিনোন-হাদি, ছেলেরা ধুতি, পাঞ্জাবি বা ফতুয়ায় অংশ নেন আয়োজনে।
অংশগ্রহণকারী মিনা ত্রিপুরা বলেন, “ফুল ভাসিয়ে পুরোনো বছরের দুঃখ-কষ্টকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরের জন্য সুখ-শান্তি কামনা করছি।”
শ্রাবণী চাকমা বলেন, “এই উৎসব আমাদের সামাজিক ঐতিহ্যের অংশ, গঙ্গা দেবীর কাছে প্রার্থনা করেছি দেশের ও পাহাড়ের শান্তির জন্য।”
পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন নৃগোষ্ঠী- চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, অহমিয়া-এই উৎসবকে বিভিন্ন নামে পালন করলেও সম্মিলিতভাবে এটি পরিচিত ‘বৈসাবি’ নামে।
১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর সকল জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে বৈসাবি নামটি চালু করা হয়।
চলতি বছরের উৎসব ১২ এপ্রিল শুরু হয়ে চলবে ১৬ ও ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত। মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী জলকেলির মাধ্যমে শেষ হবে বৈসাবির আনুষ্ঠানিকতা।