মধ্যপ্রাচ্যে চিরশত্রু ইরানের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ১৩ জুন শুক্রবার ভোরে ইসরায়েলি বাহিনী অপারেশন রাইজিং লায়ন নামে তেহরানসহ শতাধিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস এবং সামরিক কাঠামো দুর্বল করা। পাল্টা জবাবে ইরান ‘ট্রু প্রমিস ৩’ নামে প্রতিক্রিয়ামূলক অভিযান শুরু করায় অঞ্চলজুড়ে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ইসরায়েল দাবি করেছে, নাতাঞ্জের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা, শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীরা হামলার লক্ষ্য ছিল। টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, হামলায় অংশ নেয় প্রায় ২০০টি যুদ্ধবিমান। এতে আইআরজিসি প্রধান হোসেইন সালামি, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি ও জরুরি কমান্ড প্রধান গোলাম আলি রশিদসহ বেশ কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা এবং ৬ জন পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন।
এই হামলা ইরানের জন্য শুধু কৌশলগত ক্ষতিই নয়, বরং একটি বড় অপমান—এমন মন্তব্য করেন যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা সংস্থা RUSI-এর বিশ্লেষক বারকু ওজচেলিক। তিনি বলেন, তেহরানের গভীরে গিয়ে এত নির্ভুল হামলা ইসরায়েলের গোয়েন্দা ও সামরিক সক্ষমতার প্রমাণ এবং ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতার স্পষ্ট চিত্র।
ইসরায়েল এখনও ইরানের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ফরদোতে হামলা চালায়নি, যা মাটির প্রায় ৯০ মিটার নিচে অবস্থিত এবং কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ১৪ টন ওজনের বাংকার বাস্টার বোমা দিয়েই ধ্বংস করা সম্ভব। ফলে সংঘাত এখনও তার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়নি।
এদিকে ইরান থেকে ছোড়া প্রায় ১৫০টি ধীরগতির ড্রোন মাঝপথেই ভূপাতিত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। বিশ্লেষকদের মতে, ড্রোনগুলো উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করতে না পারলেও, ইরানের হাতে এখনো রয়েছে হাজারো দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। তবে দেশটির কেরমানশাহ অঞ্চলের ঘাঁটিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এসব অস্ত্রের সক্ষমতা প্রশ্নের মুখে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় ইরান সাইবার হামলা, সন্ত্রাসী কার্যক্রম কিংবা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের পথে যেতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্য করে হামলা চালালে তা আরও ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে, কারণ এতে সরাসরি মার্কিন সম্পৃক্ততার ঝুঁকি বাড়বে।
এদিকে, লেবাননের হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তারা স্বতঃস্ফূর্ত হামলা চালাবে না এবং ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের ভূমিকাও সীমিত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আন্তর্জাতিক মহল মনে করছে, নাতাঞ্জে সফল হামলা যুদ্ধ শেষ করার ইঙ্গিত নয়; বরং ফরদো, প্রতিশোধ, আন্তর্জাতিক চাপ এবং ভূরাজনৈতিক জটিলতা—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী, বিস্তৃত ও অনিশ্চিত এক যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যার তাৎক্ষণিক সমাধান অনিশ্চিত।