রাজবাড়ী সদর উপজেলার বাণীবহ ইউনিয়নের মহিষবাথান গ্রামের মৃত শহীদুল্লাহ মিয়ার ছেলে স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. নাসির মিয়া একাধিক মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
দীর্ঘদিন ধরে বাণীবহ বাজারে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছেন নাসির। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শেফালী আক্তারের ভাতিজা মো. আরিফুল ইসলাম তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জোরপূর্বক দখল নিতে ব্যর্থ হয়ে, নাসিরের বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের করেন বলে অভিযোগ নাসির মিয়ার।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে রাজবাড়ীর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সদর আমলি আদালতে দণ্ডবিধির ৩৪১/৩২৩/৩৮৫/৩৮৬/৫০৬ ধারায় মামলা দায়ের করেন আরিফুল ইসলাম। মামলায় হামলা, চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতির অভিযোগ আনা হয়।
তবে মামলার ঘটনায় উল্লিখিত স্থান ও সাক্ষীদের বক্তব্যে ভিন্নচিত্র উঠে আসে।
চা বিক্রেতা মান্নান মিয়া বলেন, “আমার দোকানের সামনে এমন কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। চাঁদাবাজি বা মারামারির বিষয়েও কিছু জানি না।”
অন্য সাক্ষী আক্তারুজ্জামান মিয়া বলেন, “আমি এমন কোনো ঘটনার কথা জানি না এবং কেউ আমাকে এসব বিষয়ে কিছু বলেনি।”
মামলার অপর সাক্ষী ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, “আমি জানিই না কে আমাকে মামলার সাক্ষী বানিয়েছে। এমন কোনো ঘটনার কথা দীর্ঘদিন বাজারে কেউ কখনো বলেনি।”
বাণীবহ বাজার ব্যবসায়ী পরিষদের সভাপতি মো. মোরশেদ আলম বলেন, “আরিফুল ইসলাম কখনোই এই বাজারের ব্যবসায়ী ছিলেন না। একবার দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ভোটার হলেও, তিনি কোনো ব্যবসা পরিচালনা করেন না। তার চাচী বর্তমান চেয়ারম্যান শেফালী আক্তারের প্রভাব কাজে লাগিয়েই এসব করছেন বলে মনে করি।”
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “এই বাজারে চাঁদাবাজির কোনো ঘটনা কখনো ঘটেনি। এমন কিছু ঘটলে অবশ্যই ব্যবসায়ী পরিষদের নজরে আসত।”
সহ-সভাপতি বলেন, “গত ৩০ বছরে এই বাজারে এমন কোনো চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেছে বলে শোনা যায়নি। মামলাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন।”
চাঁদাবাজির অভিযোগ যাচাইয়ে বাণীবহ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গেলে দেখা যায়, চেয়ারম্যানের কক্ষ তালাবদ্ধ। ইউনিয়ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা সৈয়দ মেহেদী মাসুদ জানান, চেয়ারম্যান গত ১০ দিন ধরে অফিসে আসছেন না।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান শেফালী আক্তারের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে মামলার বাদী আরিফুল ইসলাম বলেন, “আমার ও নাসির মিয়ার মধ্যে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। সেই সূত্র ধরেই সে আমাকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।” তবে চাঁদা দাবির প্রমাণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি। বলেন, “জীবন বাঁচানোর স্বার্থে আমি মামলা করেছি।” জানা যায়, আরিফুল ও নাসির আপন চাচাতো ভাই।
মামলার সাক্ষীরা, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং এলাকাবাসী এই মামলাকে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা।