রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার খোর্দ্দরামদিয়া গ্রামে মোঃ আমিন মোল্যা (২৬) নামে এক যুবককে চুরির অপবাদ দিয়ে শিকলে বেঁধে রাতভর নির্যাতন ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে খেঁজুরের কাঁটা বিদ্ধ করার অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে তিনি রাজবাড়ী জেলা কারাগারের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নির্যাতনের শিকার আমিন মোল্যা ওই গ্রামের মোমিন মোল্যার ছেলে। পেশায় তিনি একজন ভ্যানচালক ও ডাব বিক্রেতা।
বুধবার (১১ জুন) সরেজমিনে গিয়ে নির্যাতনের ১৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পাওয়া যায়, যেখানে দেখা যায়, শিকলে বাঁধা অবস্থায় কয়েকজন ব্যক্তি তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করছে এবং শরীরে খেঁজুরের কাঁটা বিদ্ধ করছে। উপস্থিত ১০-১৫ জন কেউ তাকে রক্ষায় এগিয়ে আসেনি।
আমিনের বাবা মোমিন মোল্যা জানান, "২৯ মে রাতে কয়েকজন এসে বলে আমিন চুরি করতে গিয়েছিল। পরে আমিনকে জিজ্ঞাসা করে শাহজাহান খানের বাড়িতে নিয়ে যাই শুনতে। তখন লাল চাঁদ খান, কোরবান শেখ, তরিপ খানসহ কয়েকজন আমিনকে ঠান্ডু খানের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে শিকলে বেঁধে নির্যাতন করে। আমি ভয়ে ছেলেকে ছাড়াতে পারিনি। পরে পুলিশ ডেকে তাকে থানায় সোপর্দ করা হয়। এখন সে কারা হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।”
তিনি আরও বলেন,“ছেলের বিরুদ্ধে আগের একটি মামলায় ওয়ারেন্ট থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে চালান দেয়। কিন্তু যারা চুরির অভিযোগ তুলে এমন অমানবিক নির্যাতন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
স্থানীয়রা জানান, আমিন একজন গরিব ও সহজসরল মানুষ। তাকে এমনভাবে নির্যাতন করা ঠিক হয়নি। কেউ তাকে চুরির সময় হাতেনাতে ধরেনি বলেও জানান তারা।
ঠান্ডু খান নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “আমি নিজেও মারধর ঠেকাতে চেষ্টা করেছি, কিন্তু একা পেরে উঠিনি।”
অভিযুক্ত শাহজাহান খানের বাড়িতে গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমি বাড়িতে ছিলাম না। তবে আমার ছেলে সুমন দেখে ফেলে বলেছে, চুরি করতে এসেছিল, ধস্তাধস্তিও হয়। এরপর লোকজন ধরে মেরেছে।”
বালিয়াকান্দি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জামাল উদ্দিন বলেন, “আমিন মোল্যাকে স্থানীয়রা চৌকিদারের সহায়তায় থানায় নিয়ে আসে। তার বিরুদ্ধে আদালতের ওয়ারেন্ট থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে নির্যাতনের ঘটনায় এখনো কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাজবাড়ী জেলা কারাগারের জেল সুপার মোঃ এনামুল কবির বলেন, “আসামি আমিন কারা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে এখন ওয়ার্ডে রয়েছে।”