ঘরে ঘরে ঢুকে হত্যা, এখানে সেখানে পড়ে আছে লাশ

গত কয়েকদিন ধরেই সিরিয়ার সরকারি বাহিনী এবং আসাদপন্থী আলাউইট সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে।

গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এ সংঘাতে দেশটির উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সিরিয়িান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস।

জানা যায়, দেশটির ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক আসাদের সমর্থকরা সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বেশ কয়েকবার আক্রমণ এবং অতর্কিত হামলা চালায়। এরা মূলত আসাদ সমর্থিত আলাউইত যোদ্ধা।

এসব হামলার পর মিত্র সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সহায়তায় নিরাপত্তা বাহিনী লাতাকিয়া এবং তারতুসে ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে। একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং সাক্ষ্য অনুসারে, প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ডের কারণে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে।

লাতাকিয়ার দাতুর এলাকার একজন প্রত্যক্ষদর্শী মিডল ইস্ট আইকে জানান, সশস্ত্র লোকজন বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলা চালিয়েছে।

তিনি বলেন, বানিয়াস এলাকায় আমার বন্ধুর বাগদত্তা গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। কেউ তাকে সাহায্য করতে পারেনি। সে রক্তক্ষরণে মারা গেছে। তারা এখনও তাকে কবর দিতে পারেনি।

প্রত্যক্ষদর্শী আরও বলেন, আমার এক আত্মীয় বুস্তান আল-বাশা গ্রামে থাকেন। সেখানে তার সব প্রতিবেশীকে হত্যা করা হয়েছে। নিজেদের সিরিয়ার বর্তমান শাসকগোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) যোদ্ধা দাবি করা এসব সশস্ত্র লোকজন ওই প্রত্যক্ষদর্শীর বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়েছেন বলে জানা গেছে। সেখান থেকে প্রায় ২০টি গাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

তার অভিযোগ, অস্ত্রধারীরা নিজেদের এইচটিএসের যোদ্ধা দাবি করলেও তা সত্যি নয়। তারা কোনো ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর’ সদস্য বলে তার মনে হয়েছে।

তিনি বলেন, যে ব্যক্তিই পালাতে চেষ্টা করছেন বা যাকেই সন্দেহজনক মনে হচ্ছে তাকেই হত্যা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কিছু সাধারণ নাগরিক লাতাকিয়ায় অবস্থিত রাশিয়া পরিচালিত হমেইমিম বিমানঘাঁটিতে পালিয়ে আশ্রয় নিতে সক্ষম হন। কিন্তু বিমানঘাঁটিতে যাওয়ার পথে তল্লাশিচৌকিতে সশস্ত্র গোষ্ঠীর লোকজন অবস্থান করছিলেন। তল্লাশিচৌকিতে তাদের কাছে প্রথমেই জানতে চাওয়া হয়েছিল, তারা আলাউইত সম্প্রদায়ের কি না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, তারা মাঠে মরদেহ এখানে সেখানে পড়ে থাকতে দেখেছেন। অনেক বাড়ি-ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, এসওএইচআরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লাতাকিয়া ও তারতুসে তিন দিনে আলাউইত সম্প্রদায়ের কমপক্ষে ৭৪৫ জন সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। একই সঙ্গে সেখানে বাশারপন্থি ১৪৮ যোদ্ধাকেও হত্যা করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিয়েছে, সিরিয়ার নতুন সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর ১২৫ সদস্যও নিহত হয়েছেন।