শয়তান মন্দ কাজ দৃষ্টিনন্দন করে মানুষের সামনে উপস্থাপন করে। এমন কিছু সাজানো কাজ নিয়ে এখনে আলোচনা করা হলো-
জাদু শিখানো : শয়তানের অন্যতম কাজ মানুষকে জাদু শেখানো বা জাদু করতে উদ্বুদ্ধ করা। জাদুবিদ্যার মাধ্যমে শয়তান মানুষকে ধোঁকা দেয়। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর তারা (বনি ইসরাইল) সুলায়মান (আ.)-এর শাসনামলে শয়তানরা যা কিছু (মন্ত্র) পড়ত তার পেছনে পড়ে গেল। সুলায়মান (আ.) কোনো কুফর করেনি। অবশ্য শয়তানরা মানুষকে জাদু শিক্ষা দিয়ে কুফরিতে লিপ্ত হয়েছিল।’ (সুরা বাকারা : ১০২)।
বিবেককে প্রাধান্য দেওয়া : ইসলামি শরিয়তের বিধি-বিধানের সামনে বিবেককে প্রাধান্য দেওয়া। আল্লাহ বলেন, ‘সে (শয়তান) বলল, আমি তার (অর্থাৎ আদম আ.) চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন কাদা দ্বারা।’ (সুরা সদ : ৭৬)। এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, যারা তাদের বিবেককে ইসলামের বিধি-বিধানের ওপর প্রাধান্য দেয়, আল্লাহর আদেশের ওপর প্রাধান্য দেয়, তারা শয়তানের ফাঁদে পা দেয়।
আকিদা ও বিশ্বাসে সন্দেহ সৃষ্টি করা : ইসলামের মৌলিক আকিদাতে সন্দেহ সৃষ্টি করা শয়তানের অন্যতম একটি কাজ। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কারও কাছে শয়তান আসতে পারে এবং সে বলতে পারে, এ বস্তু কে সৃষ্টি করেছে? ওই বস্তু কে সৃষ্টি করেছে? এরূপ প্রশ্ন করতে করতে শেষ পর্যন্ত বলে বসবে, তোমাদের প্রতিপালককে কে সৃষ্টি করেছে? যখন ব্যাপারটি এ স্তরে পৌঁছে যাবে, তখন সে যেন অবশ্যই আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায় এবং বিরত হয়ে যায়।’ (বোখারি : ৩২৭৬)।
আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত থেকে বিচ্ছিন্ন করা : শয়তানের এটি একটি কাজ মানুষকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত থেকে বিছিন্ন করে দেওয়া। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বসবাস করো। বিচ্ছিন্নতা থেকে সাবধান থেকো। কেননা, শয়তান বিচ্ছিন্নজনের সঙ্গে থাকে এবং সে দুজন থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে। যে ব্যক্তি জান্নাতের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম জায়াগার ইচ্ছা পোষণ করে সে যেন (মুসলিম সমাজে) ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকে।’ (তিরমিজি : ২১৬৫)।
অহংকার প্রদর্শন করা : আল্লাহ বলেন, ‘এবং (সেই সময়ের আলোচনা শোনো), যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম, আদমকে সেজদা করো, ফলে তারা সকলে সেজদা করল, কিন্তু ইবলিস ছাড়া। সে অস্বীকার করল ও দর্পিত আচরণ করল এবং সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।’ (সুরা বাকারা : ৩৪)।
বিকৃতি ঘটানো : মানুষকে আল্লাহতায়ালা স্বাভাবিক যে স্বভাবে সৃষ্টি করেছেন শয়তান মানুষের সেই স্বভাবের মধ্যে বিকৃতি ঘটাবে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘এবং আমি তাদের সরল পথ থেকে নিশ্চিতভাবে বিচ্যুত করব, তাদের (অনেক) আশা-ভরসা দেব এবং তাদের আদেশ করব, ফলে তারা চতুষ্পদ জন্তুর কান চিরে ফেলবে এবং তাদের আদেশ করব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে বন্ধু বানায়, সে সুস্পষ্ট লোকসানের মধ্যে পড়ে যায়।’ (সুরা নিসা : ১১৯)।
মিথ্যাকে সুসজ্জিত করা : মিথ্যাকে সুসজ্জিত করা শয়তানের বড় কূটচাল। সে মিথ্যা ও ভ্রান্ত জিনিসকে অনেক সুসজ্জিত করে উপস্থাপন করবে। সে ভ্রান্ত জিনিসকে এমনভাবে উপস্থাপন করবে মনে হবে- এটাই তার জন্য কল্যাণকর। (সুরা নামল : ২৪)।
ফজরের সময় ঘুমিয়ে থাকা : ফজরের সময় নামাজিকে ঘুমিয়ে রাখাও শয়তানের একটি কাজ। এ জন্য প্রয়োজন এই সময় শয়তানের ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা। তেমনি জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় না করাও শয়তানের কারসাজি। (মুসলিম : ১৭০২)। এ ছাড়া নামাজে অহেতুক কাজ করা, ইমাম রুকু থেকে মাথা উঠানোর আগে মুক্তাদির মাথা উঠিয়ে ফেলা, নামাজে বেশি পরিমাণ ওয়াসওয়াসা (কুমন্ত্রণা দেওয়া), মুসল্লির সামনে দিয়ে হাঁটাহঁটি করা, কাতারের মাঝখানে খালি জায়গা রাখা, নামাজে এদিক-সেদিক তাকানো, হারাম সম্পদ একত্র করা, দরিদ্রতার ভয়ে আল্লাহর রাস্তায় খরচ না করা, লোক দেখানোর জন্য খরচ করা, সম্পদ অপচয় করা, অপব্যয় করা, গোনাহকে ছোট মনে করা, বিচারকার্যে জুলুম করা, তিনজনের মধ্যে দুজন কানাঘুষা করা, একাকী সফর করা, মাহরাম নারীর সঙ্গে নিরিবিলি থাকা, কবুতর নিয়ে খেলা করা, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানো, উলঙ্গ হওয়া, বাম হাতে পানাহার করা, অহেতুক ঝগড়া, কথার মাঝে লৌকিকতা অবলম্বন করা, মদ পান করা, জুয়া খেলা, মিথ্যা বলা- এ সবই শয়তানের কাজ।
লেখক : আলেম ও মুহাদ্দিস