ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বাংলাদেশের ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন

মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম
বাংলাদেশের ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন

বাংলাদেশের ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনে ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। ‘The Code of Criminal Procedure (Amendment) Ordinance, 2025’ নামে এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইনে একটি নতুন ধারা (১৭৩অ) যুক্ত করা হয়েছে, যা তদন্ত চলাকালে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন পুলিশ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মামলা হতে অব্যাহতির সুযোগ সৃষ্টি করবে। সংশোধিত ফৌজদারী কার্যবিধির যুক্ত হওয়া ১৭৩অ ধারায় Interim investigation report, etc. (অন্তর্বর্তীকালীন তদন্ত প্রতিবেদন ইত্যাদি) শিরোনামে নতুন বিধান আনা হয়েছে। এর মূল বিষয়গুলো হলো-

১. তদন্তকারী কর্মকর্তার অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন : এখন থেকে মামলার তদন্ত চলাকালে যেকোনো পর্যায়ে পুলিশ কমিশনার, জেলার পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট বা সমমর্যাদার কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে (Investigating Officer) মামলার অগ্রগতির বিষয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া নির্দেশ দিতে পারবেন।

২. অভিযুক্তকে অব্যাহতি : অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে যদি কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে পুলিশ কমিশনার অথবা জেলার পুলিশ সুপার অথবা সমমানের কর্মকর্তার নির্দেশে সেই প্রতিবেদন আদালতে (ম্যাজিস্ট্রেট বা ট্রাইব্যুনাল) দাখিল করা যাবে। আদালত ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সন্তুষ্ট হলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মামলা থেকে অব্যাহতি (Discharge) দিতে পারবেন। এর ফলে চূড়ান্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা না করেই নিরপরাধ ব্যক্তিরা হয়রানি থেকে মুক্তি পাবেন। তবে, অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত অব্যাহত থাকবে।

৩. পুনরায় অন্তর্ভুক্তির সুযোগ : অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তি অব্যাহতি পেলেও সেটি চূড়ান্ত নয়। যদি তদন্ত শেষে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত ও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে চূড়ান্ত পুলিশ প্রতিবেদনে (ধারা ১৭৩ অনুযায়ী) তার নাম পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করতে কোনো বাধা থাকবে না। আমার মনে হয় ফৌজদারী কার্যবিধির গুরুত্বপূর্ণ এই ধারার সংযোজন বিচার প্রক্রিয়ায় একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। আমি দেখেছি অনেক মারামারির মামলায় অথবা গ্রামের দাঙ্গাজনিত মামলায় এমনকি বিভিন্ন হত্যা মামলায় ৪০-৫০ জন এমনকি শতাধিক আসামি থাকে। এজাহার পরে বুঝা যায়, আসামিদের অনেকেই অপরাধ এবং ঘটনা সম্পর্কে তারা কিছুই জানে না। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে মামলা থেকে মুক্তি পেতে তাদের পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় পুলিশ বাদীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাদের গ্রেপ্তার পর্যন্ত করে। আবার বিভিন্ন পক্ষের চাপের কারণে সবার বিরুদ্ধেই চার্জশিট দিতে হয়। তখন সমস্ত দায়িত্ব এসে পড়ে আদালতের ঘাড়ে।

নতুন সংশোধনীর ফলে পুলিশের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে নিরপরাধ ব্যক্তিকে মামলা নিষ্পত্তির পূর্বেই অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রতিবেদন দেবেন। পুলিশের তদন্ত কার্যক্রম আগের চেয়ে আরও গতিশীল হবে, নিরপরাধ ব্যক্তির মামলায় জড়িত থাকার বিষয়ে হয়রানি কমবে একই সঙ্গে বিচারব্যবস্থার উপর অতিরিক্ত চাপ কিছুটা হলেও লাঘব হবে।

লেখক : পুলিশ সুপার, হাইওয়ে পুলিশ রংপুর রিজিয়ন

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত