প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পেছনে কোটা একমাত্র কারণ নয়। এ জন্য বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে সুশাসন নিয়ে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ, কলুষিত রাজনৈতিক চর্চা, ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার থেকে বঞ্চনার ক্ষোভের কথা বলা হয়েছে। ফলে ধর্ম ও পেশাজীবী মর্যাদানির্বিশেষে সত্যিকারের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের উদ্দেশ্যে এ আন্দোলনে লাখো বাংলাদেশির মধ্যে নারী ও শিশুও অংশগ্রহণ করে।
গত বছরের জুলাই-অগাস্টে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি ও বেসরকারি হিসাবের পাশাপাশি অন্যান্য সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয়ে থাকতে পারেন। তাঁদের বেশির ভাগই নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবহৃত মারণাস্ত্র ও শটগানের গুলিতে নিহত হয়েছেন। হাজারো মানুষ গুরুতর ও চিরতরে আহত হয়েছেন। ১১ হাজার ৭০০-এর বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ও পুলিশ। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ শিশু। পুলিশসহ অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী শিশুদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে ‘টার্গেট কিলিং’, ইচ্ছাকৃতভাবে পঙ্গু করা, নির্বিচার গ্রেপ্তার, অমানুষিক নির্যাতন ও নানাভাবে বল প্রয়োগ করেছে। আন্দোলনের শুরুতে নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সদস্যরা নারীদের ওপর হামলা করেছেন। এগুলো যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ছিল। এগুলোকে প্রতিশোধমূলক সহিংসতা বলেছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দলের প্রতিবেদনে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তুলে ধরা হয়েছে। সারা বিশ্বে আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠা আবু সাঈদের মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে নানা বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। পুলিশ গুলি করার সময় আবু সাঈদ যে নিরস্ত্র ছিলেন, প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই জুলাই ও আগস্টের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তদন্তের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তদন্তের অনুরোধ জানিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ককে চিঠি লেখেন। এরপর টুর্ক একটি তথ্যানুসন্ধান দল গঠন করেন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রুরি ম্যানগোভেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অগ্রবর্তী দল গত বছরের ২২ থেকে ২৯ আগস্ট ঢাকা সফর করে। এরপর তদন্ত করার জন্য জাতিসংঘের মূল দল তথা তথ্যানুসন্ধান দল এক মাসের বেশি সময় বাংলাদেশে অবস্থান করে গত জুলাই-আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ ১৪ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করে।