
অন্তর্বর্তী সরকার একটি দলের ফাঁদে পা দিয়েছে, সংস্কারকে প্রায় গুরুত্বহীন করে ফেলেছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
তিনি বলেছেন, বিভিন্ন সময়ে সরকারের আচরণে একটি দলের দাবিকে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি দেখা গেছে। আজকে জাতির কাছে এটা প্রতীয়মান যে, এই সরকার এখন আর নিরপেক্ষ নয়, সরকার একটি দলের প্রতি অনুগত। একটি দলকে ক্ষমতায় আনার জন্য যেনতেন নির্বাচনের প্রচেষ্টায় আছে।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর মগবাজারে আল ফালাহ মিলনায়তনে পাঁচ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনরত ৮ দলের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ডা. তাহের এসব কথা বলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া ভাষণের ওপর প্রতিক্রিয়া জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
জামায়াতের এই নায়েবে আমির বলেন, আরেকটি পরিকল্পিত ও পূর্বনির্ধারিত রায়ের ভিত্তিতে নির্বাচন শুরু হচ্ছে কি না এ ব্যাপারটি আমাদের এবং জনগণের মনে আশঙ্কা তৈরি করছে। সরকারের আচরণ আমাদের এসব কথা বিশ্বাস করতে বাধ্য করছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমরা মনে করি, এই সরকার বুঝে হোক না বুঝে হোক, ইচ্ছাকৃত হোক অথবা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে হোক—তারা একটি দলের ফাঁদে পা দিয়েছে। সংস্কারকে প্রায় গুরুত্বহীন করে ফেলেছে। এর আগেও আমরা দেখেছি যে এই সরকার দলটির প্রতি নানাভাবে আনুগত্য এবং দুর্বলতা প্রকাশ করছে। সেটা শুরু হয়েছিল লন্ডনে গিয়ে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে।

ডা. তাহের অভিযোগ করেন, বিভিন্ন সময়ে সরকারের আচরণে একটি দলের দাবিকে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি দেখা গেছে। আজকে জাতির কাছে এটা প্রতীয়মান যে, এই সরকার এখন আর নিরপেক্ষ নয়, সরকার একটি দলের প্রতি অনুগত। একটি দলকে ক্ষমতায় আনার জন্য যেনতেন নির্বাচনের প্রচেষ্টায় আছে সরকার।
তিনি বলেন, আমরা খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, প্রধান উপদেষ্টাকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করছে তিনজন উপদেষ্টা। এই তিনজন প্রধান উপদেষ্টাকে ভুল তথ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন যেন না হয় সেই চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা নানা রকম বুঝিয়ে একটি দলের হয়ে কাজ করছে। সুষ্ঠু নির্বাচন যেন না হতে পারে দেশকে সেদিকে নেওয়ার জন্য সুকৌশলে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
জামায়াতের এই সিনিয়র নেতা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর থেকেই আমরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলে আসছি। কিন্তু আমরা দেখছি, সরকার সেটার ব্যাপারে মনোযোগী নয়। বরং সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার সহযোগিতায় একটি বিশেষ দলের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে দলীয়করণ করার চেষ্টা চলছে।
তিনি অভিযোগ করেন, একটি বিশেষ দলের লোকদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। প্রশাসনে যারা ভালো লোক ছিল, তাদের কোনো দলের ট্যাগ লাগিয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
‘যদি এভাবেই নির্বাচনের আগপর্যন্ত পরিস্থিতি একদিকে চলে যায়, তাহলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকবে না। যদি নির্বাচন সুষ্ঠু না হয় তাহলে দেশের জন্য আরও বেশি বিপর্যয় এবং অন্ধকার ভবিষ্যতে অপেক্ষা করছে।’— যোগ করেন ডা. তাহের।
জামায়াতের এই নায়েবে আমির আরও বলেন, আমরা ৮ দল ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চাই। স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিতে চাই, আমরা আগামী রোজার আগেই জাতীয় নির্বাচন চাই। এজন্য আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে আমরা কাজ করছি।
সংবাদ সম্মেলনে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। দলগুলো হলো– বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি।