গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রানালয়-এর এক অফিস আদেশের মাধ্যমে গত মঙ্গলবার (১৭ জুন) বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. শামশাদ বেগম কোরাইশী-কে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সদস্য (পরিকল্পনা) চলতি দায়িত্ব পদে নিযুক্ত করা হয়েছে।
সদস্য পদে নিযুক্ত হওয়ার পূর্বে তিনি পরমাণু শক্তি কেন্দ্র, ঢাকা -এর পরিচালক পদে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি ১০ এপ্রিল, ১৯৯৩ সালে সায়েন্টিফিক অফিসার হিসেবে পরমাণু শক্তি কেন্দ্র, ঢাকা-তে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি পরমাণু শক্তি কেন্দ্রের রসায়ন বিভাগের প্রধান, বৈজ্ঞানিক তথ্য বিভাগ এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
ড. শামশাদ বেগম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯০ সালে কেমিস্ট্রি বিষয়ে বি.এসসি (সম্মান) এবং ১৯৯২ সালে এনালিটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিষয়ে এমএসসি ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি ১৯৯৯ সালে জাপানের Tokyo Institute of Technology (TIT) হতে (Monbusho Scholar) পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া তিনি ২০০২ এবং ২০০৭ সালে যথাক্রমে জাপান ও কোরিয়া হতে এনালিটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিষয়ে পোস্ট-ডক সম্পন্ন করেন।
বিজ্ঞানী হিসাবে Food Contamination, Risk Asseessment, Environmental Pollution, Human Health, ইত্যাদি বিষয়ের উপর তার ১২০ টির অধিক গবেষণা প্রবন্ধ আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে, ১০০ টির অধিক গবেষণা প্রবন্ধ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও দেশীয় মিটিং, সম্মেলনে উপস্থাপন করেছেন এবং ১০০ জনের অধিক MD, FCPS, M.Sc, Ph.D শিক্ষার্থীদের গবেষণা তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে বিশেষায়িত মানব সম্পদ উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন।
দেশের সর্বপ্রথম এবং একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে ড. শামশাদ বেগম ২০০৮ সালে ISO/IEC 17025:2005 (requirement for testing and calibration laboratory accreditation) এর উপর কোর্স সম্পন্ন করে European Organization of Quality কর্তৃক সনদ অর্জন করেন।
বিজ্ঞানী হিসাবে তিনি Wilson রোগ নির্ণয়ের সহজতর পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, যার ফলে অল্প খরচে, কম সময়ে এবং নির্ভুলভাবে দেশের অভ্যন্তরেই পরমাণু শক্তি কেন্দ্রের কেমিস্ট্রি ল্যাবরেটরিতে রোগটি পরীক্ষা (সনাক্ত) সম্ভব হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মানের (ISO/IEC certified) ৫টি সরকারী টেস্টিং ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠায় তার অনন্য ভূমিকা রয়েছে। এর মধ্যে ২০১০ সালে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন এর রসায়ন বিভাগে (ISO/IEC certified) প্রথম Accredited টেস্টিং ল্যাবরেটরি এবং ২০১৩ সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে চারটি আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করেন। এই ল্যাবগুলি খাদ্য মন্ত্রানালয় এর Reference ল্যাব হিসাবে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে কাজ করছে। বর্তমানে বাপশক এর নির্বাচিত আরও আটটি (০৮) ল্যাব এর Accreditation প্রক্রিয়াতে কারিগরি সহযোগিতা প্রদান চলমান রয়েছে।
তিনি FAO, UNIDO, WB, OCETA, Icddr.b. IAEA এবং MOST এর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রকল্প Principal Investigator/National Project Counterpart (NPC) হিসাবে সফলভাবে বাস্তবায়ন এর মাধ্যমে গবেষণার ও সেবার পরিধি বর্ধিতকরনে অবদান রেখেছেন।
তিনি UN Laboratory Expert হিসাবে United Nations Industrial Development Organization (UNIDO) এ প্রায় পাঁচ বছর চাকরি করেছেন।
এ ছাড়াও জাতীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান Bangladesh standard & Testing Institute (BSTI), Bangladesh Food Safety Authority (BFSA), Bangladesh Accreditation Board (BAB) এর বিশেষজ্ঞ হিসাবে বিভিন্ন ধরনের standard, Rules, Regulations, Limits প্রনয়নে ভূমিকা পালন করেন।
ড. শামশাদ বেগম কোরাইশী জাতীয় বিভিন্ন ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। যেমন সুনামগঞ্জ এর হাওরের পানিতে দূষণের কারণে মাছ মারা যাওয়ার কারন যে তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়াম এর কারণে নয় তা প্রমাণ করা, হাইকোর্ট ও কাস্টম কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে প্রেরিত আমদানিকৃত মাছ ও দুধে ক্ষতিকারক পদার্থের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ ও জনগণকে অবহিতকরন।
প্রশাসনিক দক্ষতার পাশাপাশি বিজ্ঞানের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যেমন: বাংলাদেশ ক্যামিকাল সোসাইটি (BCS), Network of Instrument Technical Personnel and User Scientists of Bangladesh (NITUB) এর আজীবন সদস্য।
ব্যাক্তিগত জীবনে ড. কোরাইশী দুই চিকিৎসক কন্যা সন্তানের গর্বিত জননী।