ঢাকা সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হেলথ কর্নার

নীরবে ধ্বংস মস্তিষ্ক

নীরবে ধ্বংস মস্তিষ্ক

প্রতিদিন এমন কিছু অভ্যাসে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া হয়, যা নীরবে মস্তিষ্কের ক্ষতি করে যাচ্ছে। কাজের চাপে বা অভ্যাসগত কারণে কিছু আচরণ দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে তা স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ এবং মানসিক ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্নায়ুবিজ্ঞানী, মনোবিদ ও চিকিৎসকেরা এই বিষয়ে মত দিয়েছেন। রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে জানানো হয়, দৈনন্দিন জীবনের কিছু ‘নিরীহ’ অভ্যাসই দীর্ঘমেয়াদে মস্তিষ্কের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে। তবে কিছু ছোট পরিবর্তন এনে এসব ক্ষতি রোধ করা সম্ভব।

একসঙ্গে একাধিক কাজ করার চেষ্টা : অনেকেই মনে করেন, একসঙ্গে অনেক কাজ করলে সময় বাঁচে। তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিউরোসাইকোলজিস্ট ডা. সানাম হাফিজ বলেন, ‘মাল্টিটাস্কিং’ করলে মস্তিষ্ক আরও বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ে।’ তার ভাষায়, ‘প্রতিবার একটি কাজ থেকে অন্যটিতে সরে যাওয়ার সময়, মস্তিষ্ককে ‘রিসেট’ হতে হয়। এতে মনোযোগ কমে যায় এবং ভুল করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।’ তিনি পরামর্শ দেন, ‘২৫ মিনিট একটানা একটি কাজে মনোযোগ দিন, তারপর পাঁচ মিনিট বিরতি নিন। এটি মস্তিষ্ককে স্বাভাবিক ছন্দে কাজ করতে সাহায্য করে।’

ঘুম বিসর্জন দেওয়া : প্রতিদিন সাত ঘণ্টার কম ঘুম মস্তিষ্কের জন্য ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর। যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক ক্লিনিক্যাল নিউরোসাইকোলজিস্ট ডা. সারা বুলার্ড বলেন, ‘ঘুমের সময় মস্তিষ্ক বিষাক্ত পদার্থ পরিষ্কার করে, স্মৃতিকে সংরক্ষণ করে এবং স্নায়ুর পুনরুদ্ধার করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যাদের ঘুমে বিঘ্ন ঘটে (যেমন- ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট বা স্লিপ অ্যাপনিয়া), তাদের মধ্যে হৃদরোগ ও স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ইন্টিগ্রেটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. উইল হাস বলেন, ‘ঘুমের ঘাটতি মস্তিষ্কে বেটা-অ্যামিলয়েড নামক বর্জ্য জমিয়ে তোলে, যা অ্যালৎঝাইমার’স রোগের সঙ্গে যুক্ত।’

নিয়মিত নাস্তা বাদ দেওয়া : রাতে দীর্ঘক্ষণ না খাওয়ার পর সকালে নাশতা না করাটা মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। ডা. হাফিজ বলেন, ‘নাশতা না করলে মনোযোগ কমে, রাগ বাড়ে, উদ্যম কমে যায়।’ তার মতে, ‘প্রোটিন ও আঁশসমৃদ্ধ হালকা কিছু খাওয়া উচিত। যেমন- ডিম ও সবজি, অথবা স্মুদি। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থির থাকে এবং মনোযোগ বাড়ে।’

ঘুমানোর আগে স্ক্রলিং : রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে বা স্ক্রিনে চোখ রাখলে ঘুমের গুণমান নষ্ট হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্নায়ুবিজ্ঞানী ড. জেমি ম্যানিসকালকো বলেন, ‘এই স্ক্রলিং কর্টিসল হরমোন বাড়িয়ে তোলে এবং মেলাটোনিন উৎপাদন কমিয়ে দেয়, ফলে ঘুমে সমস্যা হয়।’ তিনি বলেন, ‘ঘুমের সময় মস্তিষ্ক গত দিনের তথ্য সংরক্ষণ করে, নতুন বিষয় শেখার ক্ষমতা বাড়ায়, আর সমস্যা সমাধানের দক্ষতা উন্নত করে।’ তার পরামর্শ, ‘ঘুমানোর অন্তত ৩০ মিনিট আগে স্ক্রিন থেকে দূরে থাকতে হবে। হালকা আলো ব্যবহার, স্ট্রেচিং, শ্বাসচর্চা বা ছোট একটি ডায়েরি লেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এতে মস্তিষ্ক বিশ্রামে যেতে পারে।’

অতিরিক্ত কাজের তালিকা তৈরি : দিনের শুরুতে বিশাল কাজের তালিকা বানানো মস্তিষ্ককে বিপাকে ফেলে। ড. ম্যানিসকালকো বলেন, ‘কার্যক্ষম স্মৃতি একসঙ্গে তিন থেকে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ধারণ করতে পারে। তার বেশি হলে মস্তিষ্ক বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে।’ এই বিভ্রান্তি মনোযোগ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করে। তিনি পরামর্শ দেন, ‘দিনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ঠিক করতে হবে। আর বাকি কাজগুলোর গুরুত্ব কম দিতে বা সময়সীমা দিতে হবে। এতে মস্তিষ্ক সুসংগঠিত ও কর্মক্ষম থাকে।’ সামাজিক যোগাযোগ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া : বন্ধু, পরিবার বা সহকর্মীদের সঙ্গে সময় না কাটালে মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। ডা. হাফিজ বলেন, ‘কোনো মানুষের সঙ্গে কথা বলাও মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজনীয় উত্তেজনা তৈরি করে, যা মনোযোগ বাড়ায় এবং বিষণ্ণতা কমায়।’ বিশেষ করে যারা একাকী থাকেন বা অবসর জীবনে আছেন, তাদের জন্য সামাজিক মেলামেশা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখার অন্যতম উপায়।

এলডিএল কোলেস্টেরল উপেক্ষা করা : অনেকেই কোলেস্টেরলকে হার্টের সমস্যার সঙ্গে যুক্ত করেন। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি মাত্রার এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরল মস্তিষ্কের রক্তনালিতে ক্ষতি করে এবং মস্তিষ্কের আয়তন কমিয়ে দেয়। ডা. বুলার্ড বলেন, ‘মধ্য বয়সে যদি এলডিএল কোলেস্টেরল ৭০-এর বেশি থাকে, তাহলে তা স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই সময় থাকতে সচেতন হতে হবে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত