ঢাকা সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

স্বাস্থ্য কর্নার

স্লিপ প্যারালাইসিস

স্লিপ প্যারালাইসিস

২০০৫ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে বালান্দ জলাল এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। ঘুম থেকে হঠাৎ জেগে উঠে তিনি চারপাশ দেখতে পাচ্ছিলেন, তবে শরীর নড়াচড়া বা কথা বলার কোনো ক্ষমতা ছিল না। তার মনে হচ্ছিল, ঘরে যেন এক দানব উপস্থিত আছে— যে তার পা টেনে তুলছে, শ্বাসরোধ করছে, তাকে মেরে ফেলতে চাইছে। পরে জলাল বলেন, ‘মনে হচ্ছিল, গোটা মহাবিশ্বের সমস্ত অশুভ শক্তি একসঙ্গে আমার ঘরে এসে হাজির হয়েছে।’ এই অভিজ্ঞতাই জলালকে ‘স্লিপ প্যারালাইসিস’ নিয়ে গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করে। বর্তমানে তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগে গবেষক হিসেবে কাজ করছেন এবং এ বিষয়ে বিশ্বের অন্যতম বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত।

স্লিপ প্যারালাইসিস কীভাবে ঘটে : ঘুমের চক্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল ‘র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট’। যেখানে স্বপ্ন সবচেয়ে জীবন্ত হয় এবং শরীর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত থাকে, যাতে মানুষ স্বপ্নের ভেতরের কাজ বাস্তবে করে না ফেলে। তবে ‘স্লিপ প্যারালাইসিসের সময় ঘটে এক অদ্ভুত ‘ঘুম-জাগরণের সংঘর্ষ’। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলির- ‘হিউম্যান স্লিপ সায়েন্স সেন্টারের পরিচালক ডা. ম্যাথিউ পি. ওয়াকার সিএনএন ডটকম-কে বলেন, ‘ঘুমের এ পর্যায়ে অনেক সময় মস্তিষ্ক জেগে ওঠে, তবে শরীর তখনও পক্ষাঘাতগ্রস্ত থাকে। তখনই মানুষ ভয়ঙ্কর ‘হ্যালুসিনেইশন’ বা ভ্রমের শিকার হয়।’

লক্ষণ ও ভ্রম : সাধারণত ‘স্লিপ প্যারালাইসিস’ কয়েক মিনিট স্থায়ী হয়, তবে কখনও ২০ মিনিট পর্যন্ত গড়াতে পারে। প্রায় ৪০ শতাংশ আক্রান্ত ব্যক্তি চোখে দেখা, কানে শোনা বা শরীরে স্পর্শ লাগার মতো ভ্রমে ভোগেন। এরমধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ অভিজ্ঞতা ভয়ঙ্কর হয়। বালান্দ জালালের গবেষণায় দেখা গেছে- সংস্কৃতি অনুসারে এসব ভ্রম ভিন্ন ভিন্ন রূপ নেয়। যেমন- মিসর ও ইতালিতে মানুষ ‘জিনি’ বা ‘ডাইনির উপস্থিতি কল্পনা করে। অন্যদিকে ডেনমার্ক, পোল্যান্ড বা যুক্তরাষ্ট্রে তুলনামূলক কম ভৌতিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। ডা. ওয়াকারের মতে, ‘এ সময় মস্তিষ্কের যুক্তিনির্ভর অংশ ‘প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স’ কম সক্রিয় থাকে। তবে আবেগ নিয়ন্ত্রণকারী ‘অ্যামিগডালা’ অত্যধিক সক্রিয় হয়ে যায়। ফলে ভ্রমগুলো অত্যন্ত বাস্তব ও আবেগপ্রবণ মনে হয়।’

ঝুঁকির কারণ : বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নন কেন ‘স্লিপ প্যারালাইসিস’ ঘটে। তবে কিছু কারণ এর ঝুঁকি বাড়ায়। মানসিক চাপ, উদ্বেগ, ‘পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার’, ‘বাইপোলার’ বা ‘প্যানিক ডিসঅর্ডার’। অনিয়মিত ঘুম, জেট ল্যাগ, ঘুমের অভাব বা ‘নারকোলেপসি’ নামক রোগ, বংশগত কারণ। ‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’, মাদকাসক্তি বা কিছু ওষুধের প্রভাব (যেমন- এডিএইচডি চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত