
বিজ্ঞানীদের ধারণার চেয়েও অনেক দ্রুত গতিতে মহাবিশ্বের মধ্য দিয়ে ছুটে চলেছে আমাদের সৌরজগৎ এমনই উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। ‘বিলেফেল্ড ইউনিভার্সিটির জ্যোতিপদার্থবিদ লুকাস বোহমের নেতৃত্বে এ বিস্ময়কর আবিষ্কারটি করেছে গবেষণা দলটি, যা মহাবিশ্ব কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারণা নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ। গবেষণাপত্রটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার্স’-এ। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই জানেন, আমাদের সৌরজগৎ মহাকাশের মধ্যে দিয়ে চলছে। তবে সৌরজগৎ ঠিক কত দ্রুত ও কোন দিক দিয়ে চলছে তা সঠিকভাবে পরিমাপ করা অত্যন্ত কঠিন। এটি পরিমাপের জন্য দূরবর্তী যেসব ছায়াপথ শক্তিশালী রেডিও তরঙ্গ পাঠায় সেসব রেডিও ছায়াপথকে পর্যবেক্ষণ করেছেন গবেষকরা। রেডিও তরঙ্গ এমন এক মহাজাগতিক ধুলার মধ্য দিয়েও বেরিয়ে আসতে পারে, যেগুলো দৃশ্যমান আলোকে আটকে দেয়। ফলে রেডিও টেলিস্কোপে এমন ছায়াপথেও শনাক্ত করা যায়, যেগুলো সাধারণ টেলিস্কোপে দেখা যায় না। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সৌরজগৎ যদি কোনো নির্দিষ্ট দিক দিয়ে চলতে থাকে তবে আমরা সেই দিকে সামান্য বেশি সংখ্যক রেডিও ছায়াপথ দেখতে পেতে পারি। চলার সময় আমরা যেমন হালকা ‘বাতাসের প্রতিকূলতা’ অনুভব করি বিষয়টি ঠিক তেমনই। এ প্রভাব ব্যবহার করে সৌরজগতের গতিবেগ মেপেছে গবেষক বোহমের গবেষণা দলটি। ইউরোপজুড়ে বিস্তৃত শক্তিশালী রেডিও টেলিস্কোপ নেটওয়ার্ক বা লোফার-এর ওপর নির্ভর করে ও এর ডেটা দুইটি অন্য রেডিও জরিপের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে মিলিয়ে এ পরিমাপ করেছেন তারা। নতুন এক পরিসংখ্যানগত কৌশলও ব্যবহার করেছে গবেষণা দলটি, যা ধরে নেয় যে অনেক রেডিও ছায়াপথের একাধিক অংশ থাকে। ফলে গবেষকরা আরও সঠিক মাপ নিতে পেরেছেন ও ভুল হওয়ার ঝুঁকি কমিয়েছেন।
গবেষকরা বলছেন, ‘ডাইপল’ বা মহাকাশজুড়ে রেডিও ছায়াপথের অসম বণ্টন তাদের প্রত্যাশার চেয়ে তিন দশমিক সাত গুণ বেশি শক্তিশালী। সহজভাবে বললে, আমাদের সৌরজগৎ সাধারণ মহাজাগতিক মডেলের ওপর ভিত্তি করে করা আগের অনুমানের চেয়ে তিন গুণ বেশি দ্রুত গতিতে চলছে। এ আদর্শ মহাজাগতিক মডেলটি বর্ণনা করেছে, বিগ ব্যাংয়ের পর থেকে মহাবিশ্ব কীভাবে বিবর্তিত হয়েছে। এ তত্ত্বে ধরে নেওয়া হয়, বড় আকারের বিভিন্ন পদার্থ মোটামুটি সমানভাবে ছড়িয়ে আছে। গবেষকরা বলছেন, এ গবেষণার ফলাফল পরিসংখ্যানগতভাবে খুবই শক্তিশালী। কারণ তাদের আবিষ্কারটি পাঁচ সিগমা মানদ- পেরিয়েছে, যা বৈজ্ঞানিকভাবে কোনো গবেষণার ফলাফলকে গুরুত্বপূর্ণ বলে ধরে নেয়। গবেষক বোহম বলেছেন, এ গবেষণার ফলাফল স্পষ্টভাবেই বিজ্ঞানীদের প্রত্যাশার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সৌরজগৎ এত দ্রুত চললে তা মহাবিশ্বের বড় আকারের কাঠামো সম্পর্কে বড় প্রশ্ন তুলতে পারে। একটি সম্ভাবনা হল, মহাবিশ্ব বিজ্ঞানীদের ধারণার মতো সমানভাবে ছড়ানো নেই। আরেকটি সম্ভাবনা হতে পারে, মহাজাগতিক গতিবেগ বা চলাচল সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়ার ধারণা এখনও অসম্পূর্ণ।
এই প্রথমবারের মতো গবেষণায় এমন অদ্ভুত ফলাফল উঠে এসেছে বিষয়টি এমন নয়। আগের গবেষণায়ও কোয়াসার বা দূরবর্তী ছায়াপথের কেন্দ্রে অত্যন্ত উজ্জ্বল অঞ্চল ব্যবহার করে একই ধরনের প্রভাব দেখেছিলেন গবেষকরা।
গবেষকরা বলছেন, দুটি ভিন্ন ধরনের মহাজাগতিক বস্তু একই ধরনের প্যাটার্ন দেখাচ্ছে এতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম। এ নতুন গবেষণার বিভিন্ন ফলাফল আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মহাবিশ্বে এখনও বড় ধরনের অপ্রত্যাশিত রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। তবে পর্যবেক্ষণ করার যন্ত্র আরও শক্তিশালী ও বিশ্লেষণ পদ্ধতি উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মহাবিশ্বে আমাদের অবস্থান সম্পর্কে অপ্রত্যাশিত নতুন তথ্য আবিষ্কার করে চলেছেন বিজ্ঞানীরা।