
আমাদের সৌরজগতের কিছু গ্রহের আশপাশে অসংখ্য চাঁদ ঘুরে বেড়ায়। বৃহস্পতির আছে ৯৫টি চাঁদ, যাদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত গ্যানিমিড ও ইউরোপা। শনির চাঁদের সংখ্যা বৃহস্পতির চেয়ে প্রায় তিনগুণ, মোট ২৭৪টি, যার মধ্যে দ্রুত গতিতে ঘোরা টাইটান অন্যতম। অন্যদিকে, আমাদের প্রিয় পৃথিবীর আছে কেবল একটি চাঁদ। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এমন এক মহাজাগতিক বস্তু আবিষ্কার করেছেন, যা আগামী কয়েক দশক ধরে পৃথিবীর কাছাকাছি কক্ষপথে ঘুরে বেড়াবে। পৃথিবীর এ অস্থায়ী সঙ্গীটি আসলে ছোট একটি গ্রহাণু, যার নাম ‘২০২৫ পিএন-৭’। এটি পৃথিবীর আশপাশে বহু বছর ধরে ঘুরে বেড়াবে, ঠিক যেন আমাদের অস্থায়ী সঙ্গী। এটি ২০২৫ সালের অগাস্টে ‘হাওয়াই ইউনিভার্সিটি’-র জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট স্ল্যাশগিয়ার। ধারণা করা হচ্ছে, এ নতুন অতিথিটির আকার খুবই ছোট, প্রস্থে প্রায় একশ ১৮ ফুট। এর তুলনায় আমাদের চাঁদের ব্যাসার্ধ প্রায় এক হাজার ৭৩৯ কিলোমিটার। আকারে পৃথিবী ও চাঁদের দিক থেকে এই দুই মহাজাগতিক বস্তুর মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। আমাদের চাঁদ শত কোটি বছর ধরে পৃথিবীকে আবর্তন করছে। তবে ৬০ বছর ধরে পৃথিবীর খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে ‘২০২৫ পিএন-৭’ গ্রহাণুটি, যেটি পৃথিবীর কাছাকাছি এমন এক কক্ষপথে রয়েছে, যাকে বলে ‘কোয়াসি-অরবিট’। তবে এ গ্রহাণুটি আসলে পৃথিবীর ‘চাঁদ’ নয়। কারণ পৃথিবীর আশপাশে স্থায়ী কক্ষপথে ঘুরছে না এটি। ফলে একে বলা হচ্ছে ‘কোয়াসি-স্যাটেলাইট’। এটি এমন এক মহাজাগতিক বস্তু, যা পৃথিবীর কাছাকাছি ঘোরে তবে আমাদের গ্রহের মাধ্যাকর্ষণে পুরোপুরি বাঁধা নয়। আমাদের অনেকের কাছে ‘স্যাটেলাইট’ মানে যা টিভির চ্যানেল দেখায় বা গুগল ম্যাপ ঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। তবে প্রাকৃতিক উপগ্রহ মানুষ নির্মিত কোনো বন্তু নয়, বরং এটি মহাজাগতিক বস্তু, যা কোনো গ্রহকে কেন্দ্র করে ঘোরে। আমাদের চাঁদ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ও নিজস্ব গতির কারণে পৃথিবীর কক্ষপথে অবস্থান করে এবং পৃথিবীসহ সূর্যের আশপাশেও ঘোরে। তবে পৃথিবীর কাছাকাছি আসা সব মহাজাগতিক বস্তুর ক্ষেত্রে এমনটি ঘটে না। কখনও কখনও কোনো গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ কোনো বস্তুকে সামান্য টানে। তবে বস্তুটিকে স্থায়ীভাবে কক্ষপথে ধরে রাখার জন্য সেই টান যথেষ্ট শক্তিশালী হয় না। এ কারণেই নতুন আবিষ্কৃত গ্রহাণটি চাঁদ নয়। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে গ্রহাণুটি পৃথিবীর সবচেয়ে সাম্প্রতিক আবিষ্কৃত অস্থায়ী উপগ্রহ হলেও এটিই একমাত্র নয়। পৃথিবীর কাছাকাছি পরিচিত সাতটি ‘কোয়াসি-মুন’ বা অস্থায়ী চাঁদ রয়েছে, যার একটি এই গ্রহাণু। তবে পৃথিবীর আশপাশে এরা-ই একমাত্র রয়েছে বিষয়টি এমনও নয়। কারণ, মহাকাশ এতই বিশাল যে পৃথিবীর আশপাশের অনেক বস্তু সহজেই আমাদের চোখ এড়িয়ে যেতে পারে। এ সর্বশেষ ‘কোয়াসি-মুন’টিও ঠিক সেইভাবেই বহু দশক ধরে অদেখা রয়ে গিয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, গ্রহাণুটি ২০৮৩ সালের দিকে পৃথিবীর কাছ থেকে সরে যাবে। মহাবিশ্বে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়, এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় ব্ল্যাক হোলটিও অনেকদিন ধরেই আমাদের চোখের আড়ালে লুকিয়ে ছিল।