ঢাকা শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় প্রতিক্রিয়া

তাবাসসুম মাহমুদ
ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় প্রতিক্রিয়া

২২ জুন ২০২৫ তারিখে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেন, ‘একমাত্র সমাধান হলো শান্তি।’ মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত প্রশমনের আহ্বান জানিয়ে এ কূটনীতিক সতর্ক করেছেন, যদি এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে তা মানবজাতির জন্য বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। ইরানের ফোর্দো, নাতাঞ্জ এবং ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত হলো। যে দেশটি গত ১৩ জুন থেকে তেহরানের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে আসছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, এ আক্রমণের উদ্দেশ্য হলো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করা। ইসরায়েল দাবি করেছে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে তা তাদের রাষ্ট্র হিসেবে অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। সেই হামলার জবাবে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যা ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে আঘাত হেনেছে। যার মধ্যে সামরিক ও বেসামরিক লক্ষ্যবস্তু রয়েছে।

রেভ্যুলশারি গার্ডস বাহিনীর ঘোষণা : যুক্তরাষ্ট্রের হামলা এমন এক সময়ে এসেছে, যার মাত্র দুদিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, তিনি ইসরায়েলের এ আক্রমণে সমর্থন দেবেন কিনা, সে সিদ্ধান্ত দুই সপ্তাহের মধ্যে নেবেন। ‘আজ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইরানের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এটি এমন একটি অঞ্চলে বিপজ্জনক মাত্রার উত্তেজনা বৃদ্ধি; যা এরই মধ্যে সঙ্কটের কিনারায় রয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি।’ বলেন গুতেরেস। তিনি আরও বলেন, ‘আমি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, যেন তারা উত্তেজনা প্রশমিত করে এবং জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের অন্যান্য বিধান অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব পালন করে।’ সামরিক অভিযানের পর এক টেলিভিশন ভাষণে ট্রাম্প এ হামলাগুলোকে চমৎকার সাফল্য হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, ‘এতে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনার সম্পূর্ণ ও চূড়ান্ত ধ্বংস ঘটেছে।’ অন্যদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি এ ঘটনাগুলোর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এটি জাতিসংঘ সনদ, আন্তর্জাতিক আইন এবং পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির একটি গভীর লঙ্ঘন।’ তিনি লিখেন, ‘যা ঘটেছে, তা নিন্দনীয় এবং এর দীর্ঘস্থায়ী পরিণতি বয়ে আনবে। ইরান তার সার্বভৌমত্ব, স্বার্থ এবং জনগণকে রক্ষার জন্য সব ধরনের উপায় অবলম্বন করবে।’ ইরানের রেভ্যুলশারি গার্ডস বাহিনী ঘোষণা দিয়েছে, ওয়াশিংটনকে তারা এমনভাবে জবাব দেবে, যাতে তারা অনুশোচনা করতে বাধ্য হয়।

বিভক্ত বিশ্ব : যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সৌদি আরব ইরানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে ওমান এ হামলার নিন্দা জানিয়ে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছে। ইরান ঘিরে উত্তেজনা বৃদ্ধির নিন্দা জানিয়েছে মিশর। দেশটি বলেছে, জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের যেকোনো লঙ্ঘনের নিন্দা জানায় মিশর। বিশেষ করে, যেকোনো রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার ওপর দেশটি জোর দিয়েছে। ওই অঞ্চলের বিপদ আরও সংঘাত ও উত্তেজনার দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে দেশটি সতর্ক করেছে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সতর্ক করেছে, বর্তমান বিপজ্জনক উত্তেজনা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।' সব দেশ বিবেচনা ও ধৈর্যের প্রদর্শন করবে বলে আশা প্রকাশ করেছে দেশটি। ইরাকও ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচিকে লক্ষ্যবস্তু করার মাধ্যমে বিপজ্জনকভাবে উত্তেজনা বৃদ্ধি ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি হচ্ছে। উত্তেজনা প্রশমনে দ্রুত কূটনৈতিক আলোচনার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে ইরাক। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী জোসেফ আউন বলেন, ‘ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। যার ফলে আঞ্চলিক ও একাধিক দেশের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।’ ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলায় জোরালো নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া ও চীন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার মন্তব্য করেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন এমন পদক্ষেপ নিয়েছে, যা ইরানকে পারমাণবিক শক্তিতে পরিণত হওয়ার হুমকি হ্রাস করতে সহায়ক হবে। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুতর হুমকি। ইরানকে কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে দেওয়া হবে না। ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার এবং এ সংকটের কূটনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার আহ্বান জানাই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত