
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ৪টি রেঞ্জের আওতায় রয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার একর বনভূমি। অপ্রতুল অস্ত্র ও লোকবল সংকটে বিশাল এই বনভূমি রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে বন কর্মকর্তারা। এছাড়া পিক-আপ ভ্যান না থাকায় দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারছে না বন রক্ষকরা।
ফলে বেদখল হয়ে যাচ্ছে বনের জমি। গড়ে উঠছে পাকা দালানসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
করেরহাট রেঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, করেরহাট রেঞ্জের আওতায় ১৪ হাজার ৩৭০ একর বনভূমি রয়েছে। বিশাল এই বন ভূমি পাহারায় ১৫ জন বন প্রহরী থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ৭ জন। চাইনিজ রাইফেল রয়েছে ২টি ও শটগান ৩টি। বন পাহারায় ২টি মোটর সাইকেল থাকলেও এরইমধ্যে একটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। করেরহাট রেঞ্জ কর্মকর্তা তারেকুর রহমান বলেন, করেরহাট রেঞ্জে অর্ধেক জনবলে বিশাল এই এরিয়া পাহারা দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। এছাড়া ভালো কোনো যানবাহন না থাকায় কোথাও কোনো দখল কিংবা গাছ কাটার খবর পেলে আমরা পৌঁছানো আগেই বনদস্যুরা পালিয়ে যায়।
করেরহাটের অলিনগর রেঞ্জের আওতায় বন ভূমি রয়েছে ২ হাজার ২৭৯ দশমিক ৮১ একর। ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া এই রেঞ্জে বন প্রহরী রয়েছে মাত্র একজন। নেই কোনো অস্ত্র। শুধুমাত্র ফেনী নদীতে টহলের জন্য একটি বোর্ড রয়েছে। অলিনগর রেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেন, অলিনগর রেঞ্জ ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় হওয়ায় খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু এখানে মাত্র একজন বন প্রহরী রয়েছে। এছাড়া রেঞ্জ কার্যালয়টিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মিরসরাই রেঞ্জের আওতায় ১২ হাজার ৯৩৭ একর বন ভূমি রক্ষায় মাত্র ৫ জন প্রহরী রয়েছে। বিট রয়েছে ৩টি। বিটগুলো হলো হিঙ্গুলী, জোরারগঞ্জ ও গোভনীয়া। প্রত্যেক বিটে ২ জন করে বন প্রহরী রয়েছে। কিন্তু কোনো যানবাহন নেই। ৩টি শট গান রয়েছে।
মিরসরাই রেঞ্জ কর্মকর্তা আল আমিন বলেন, আমাদের কোনো যানবাহন নেই। ফলে অভিযানে যেতে অনেক কষ্ট করতে হয়। এদিকে বারইয়ারঢালা রেঞ্জের আওতায় মিরসরাইয়ে একটি বিট রয়েছে। বড়তাকিয়া নামে এই বিটে মোট বন ভূমি রয়েছে ৩ হাজার ৩০০ একর। এখানে রয়েছে ২ জন বন প্রহরী। চায়না রাইফেল রয়েছে ৩টি। তবে কোনো যানবাহন নেই। বড়তাকিয়া বিট কর্মকর্তা অরুন রায় বলেন, বড়তাকিয়া বিটটি বারইয়ারঢালা রেঞ্জের আওতায়। এখানে প্রায় ৩৫২৩ একর বনভূমি রয়েছে। বন প্রহরী রয়েছে ২ জন। জানা গেছে, উপজেলার ৪টি রেঞ্জের আওতায় ৩৩ হাজার একর বন ভূমিতে রয়েছে সেগুন, মেহগনি, আকাশিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান গাছ। কিন্তু বনদস্যুদের একটি সিন্ডিকেট রাতের আঁধারে মূল্যবান এই গাছগুলো কেটে নিয়ে যায়। শুধু তাই নয় বন দখল করে গড়া হচ্ছে অবৈধ স্থাপনা। অনেক সময় এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গেলে স্থানীয়দের রোষানলে পড়েন বন প্রহরীরা। পিকআপ ভ্যান না থাকায় একাধিক প্রহরী নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেন না তারা। চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক হারুন অর রশিদ বলেন, আমাদের ৪টি রেঞ্জ চলছে অর্ধেক জনবল দিয়ে। আমরা বিশাল এই বনভূমি রক্ষায় অর্ধেক জনবল দিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। তবু আমাদের বন কর্মকর্তারা নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।