
পার্বত্য রাঙামাটিতে কৃষির চিত্র পাল্টে যাচ্ছে কাজুবাদাম ও কফি চাষে। একসময় যেখানে জুমচাষই ছিল পাহাড়ি কৃষকদের প্রধান ভরসা, এখন তারা ঝুঁকছেন বেশি লাভজনক এই দুটি ফসলে। ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প’-এর আওতায় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে নতুন আবাদে।
প্রকল্প পরিচালক শহিদুল ইসলাম জানান, ২০২১ সালে দেশে মাত্র ২,২০০ হেক্টর জমিতে কাজুবাদাম চাষ হতো, বর্তমানে তা বেড়ে ৪,২০০ হেক্টর হয়েছে। একই সময়ে কফি চাষ বেড়েছে ৬৫ হেক্টর থেকে ১,৮০০ হেক্টরে। এর বড় অংশই রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে বিস্তৃত। তার ভাষায় পাহাড়ের ৯৮ শতাংশ জমি এখনও অনাবাদি। এসব জমিতে কফি ও কাজুবাদাম চাষ করা সম্ভব। কয়েক বছরের মধ্যেই এক লাখ হেক্টরে কাজুবাদাম ও সমপরিমাণ জমিতে কফি আবাদ সম্ভব।
রাঙামাটির কৃষকরা জানাচ্ছেন, এক কেজি কাজুবাদাম বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা দরে। আর কফি বীজ বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৬০০ টাকা কেজি দরে। অন্যদিকে পাহাড়ে আম বিক্রি হয় মাত্র ৪০ টাকা কেজি দরে। ফলে কৃষকরা বেশি লাভজনক ফসলের দিকেই ঝুঁকছেন। স্থানীয় নারী-পুরুষের জন্য নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। ছোট ছোট প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় কাজ করে পাহাড়ি নারীরা হচ্ছেন স্বাবলম্বী।
কফি কৃষক নতুন চাকমার মতে, ‘গামার ও সেগুনের তুলনায় কফি অনেক বেশি লাভজনক। অনেকেই এরইমধ্যে সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন। জোনাকি চাকমা নামের এক গৃহিণী বলেন, ‘উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের আওতায় ১ একর জমিতে কাজুবাদাম চাষ করেছি। দুই বছরে লক্ষাধিক টাকার কাজুবাদাম বিক্রি করেছি। সামনে আরও ভালো ফলনের আশা করছি। দেশে বর্তমানে কাজুবাদামের বাজার প্রায় ৭০০ কোটি টাকা।
এরমধ্যে স্থানীয় উৎপাদন মাত্র ১০০ কোটি টাকার, বাকি অংশ আমদানি করতে হয়। কফির বাজার প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, ভবিষ্যতে এই দুই ফসল থেকে বছরে ১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় সম্ভব। এ খাতে কর্পোরেট গ্রুপগুলোরও আগ্রহ বাড়ছে। প্রাণ, বিএসআরএম ও কাজী গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে তুলছে। এতে প্রায় ১,৫০০ জনের কর্মসংস্থান হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, কফি-কাজুবাদাম শুধু এক বছরের ফসল নয়; একবার লাগালে ৪০-৫০ বছর অর্থনৈতিক সাপোর্ট দেবে।
সিলেট যেমন চায়ের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত, আমরাও চাই পাহাড়কে কফি-কাজুবাদামের জন্য বিশ্বে তুলে ধরতে। মন্ত্রণালয়ের অধীন উন্নয়ন বোর্ড, তিন জেলা পরিষদ ও স্থানীয় কৃষি দপ্তর এরইমধ্যে কৃষকদের চারা বিতরণ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, রাঙামাটির ভূমি কফি ও কাজুবাদামের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। কয়েক বছরের মধ্যেই স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানিও সম্ভব হবে।