
শখের বসে বস্তায় আদা চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন মিঠুন দাশ। লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ টংকাবতীরকুল গ্রামের বাসিন্দা এবং একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষে তার সাফল্য দেখে এরইমধ্যে ওই গ্রামের অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছেন। এছাড়া মিঠুনের এই সাফল্যে খুশি তার পরিবার ও প্রতিবেশীরা। জানা যায়, মিঠুন দাশ বিগত ৩ বছর পূর্বে বাড়ির আঙিনায় মাত্র পাঁচ বস্তায় পরীক্ষামূলক দেশি জাতের আদা চাষ করেন। মৌসুম শেষে তিনি বস্তাগুলো থেকে অনেক আদা সংগ্রহ করেন। এ সফলতা পেয়ে পরের বছর ২০০ বস্তা দিয়ে চাষ শুরু করেন। সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রুপনা চক্রবর্তীর পরামর্শ নিয়ে মাত্র আড়াই গণ্ডা জায়গায় পতিত জমিতে চলতি বছর বস্তায় আদা চাষ করার জন্য তিনি বারি-২ জাতের দেড় মণ আদার বীজ (কাণ্ড) কিনে আনেন। আদা রোপণের জন্য মাটির সঙ্গে ছাই, গোবর, কিটনাশক ও জৈব সার মিশিয়ে প্রায় ৪২০ বস্তা প্রস্তুত করে সেখানে আদার বীজ রোপণ করেন। রোপণের তিন মাসের মাথায় গাছের গোড়ায় গোড়ায় আদা হতে শুরু করে। আদার বাম্পার ফলনে মিঠুন দাশের মুখে হাসি ফুটেছে। বস্তায় আদা চাষে তার সফলতার কথা শুনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অনেক কৃষকও বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছেন। এতে তারাও সফলতার মুখ দেখছেন। আদা চাষে বেশ সফল কৃষক মিঠুন দাশ তার এ উৎপাদিত আদা বীজ হিসেবে বিক্রি করতে চান। আদা চাষি মিঠুন দাশ বলেন, আমি শখের বসে বাড়ির আঙিনায় গত বছর অল্পপরিসরে বস্তায় আদা চাষ করেছিলাম। এতে আমি বেশ সফল হই। চলতি বছর কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে দেড় গণ্ডা জায়গায় ৪২০ বস্তায় মাটি ভরাট করে আদা চাষ শুরু করি। বস্তায় আদা চাষ করা খুব সহজ একটি পদ্ধতি। বস্তায় আদা চাষ করায় খরচ অনেক কম এবং এতে রোগবালাই কম হয়। ফলে রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার খুবই কম। মার্চ মাসে আদার কাণ্ড রোপণ করে জানুয়ারি মাসের দিকে বিক্রি করার সুযোগ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আদার বীজ কেনাসহ এ পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফসল ওঠা পর্যন্ত আর তেমন খরচ নাই। আশা করছি মৌসুম শেষে অনেকবেশি লাভবান হব। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে প্রাথমিক ভাবে আদা চাষ শুরু করেছিলাম। তাদের পরামর্শে অল্প জায়গায় সামান্য পুঁজি খাটিয়ে এখন আমি সফলতার মুখ দেখেছি। ভবিষ্যতে আরও ব্যাপক পরিমানে আদা চাষ করার চিন্তা রয়েছে বলেও জানান তিনি। সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রুপনা চক্রবর্তী বলেন, কাণ্ড পচা রোগ থেকে রক্ষা পেতে বস্তায় আদা চাষ অনেক নিরাপদ এবং খরচ কম। আমরা কৃষকদের বস্তায় আদা চাষ করতে উৎসাহিত করছি। বস্তায় আদা চাষ করলে কাণ্ড পচা রোগের সম্ভাবনা খুব কম। রোগ দেখা দিলেও ওই বস্তা সরিয়ে ফেলে কিছু ওষুধ স্প্রে করে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাণিজ্যিকভাবে এটি লাভবান হওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, মিঠুন ছাড়াও এলাকার আরও ৩০ জনের অধিক কৃষক-কৃষাণীকে পরামর্শ দিয়েছি। তারা পরামর্শ নিয়ে আদা চাষে এগিয়ে এসেছেন। এরইমধ্যে অনেকে বেশ সফলও হয়েছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাজি শফিউল ইসলাম বলেন, বস্তায় আদা চাষের জন্য আলাদা করে জমির দরকার নাই। পরিত্যক্ত জমিতে আদা চাষ করা যায়। বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ করলে কন্দ পচা রোগ হয় না এবং একই জায়গায় বারবার চাষ করা সম্ভব। যা কৃষকদের জন্য লাভজনক।