
মিরসরাই উপজেলার গ্রামীণ সড়কগুলোতে সৃষ্ট খানাখন্দে ভোগান্তিতে পড়েছে গ্রামের মানুষ। উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভার জনবহুল সড়কের খানাখন্দের দুর্ভোগ পোহাচ্ছে লক্ষাধিক বাসিন্দা। এসব সড়ক দ্রুত সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করার দাবি এলাকাবাসীর। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) মিরসরাই অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মোট সড়কের আয়তন ১৯৫০ কিলোমিটার। এর মধ্যে কার্পেটিং সড়ক ৪৫০ কিলোমিটার আর কার্পেটিং ছাড়া রয়েছে ১৫০০ কিলোমিটার। তবে উপজেলার মোট কতটি সড়কে কি পরিমাণ খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে তার কোনো তথ্য এলজিইডি অফিসে পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ঠাকুরদীঘি থেকে ছত্ত্বরভূঞার হাট সড়কের দুর্গাপুর বাজার পার হওয়ার পর অংশে সড়কের কংক্রিট উঠে ছোট বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হলেই পানি জমে পুরো রাস্তাই হেঁটে চলার অযোগ্য হয়ে পড়ে। সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, ব্যাটারি রিক্সা, ভ্যান, পিকআপ, মাইক্রো, এ্যাম্বুলেন্স চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। বেশি দুর্ভোগ পেতে হয় বৃদ্ধ ও রোগী বহনে। উপজেলার নিজামপুর থেকে সাহেরখালী ভোরবাজার পর্যন্ত ডিসি ওবায়দুল্লাহ সড়কের অবস্থা আরও নাজুক। প্রতিদিন সড়কে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। উপজেলার সর্ব দক্ষিণের বড় দারোগারহাট থেকে বগাচতর বেড়িবাঁধ সড়ক দিয়ে মানুষ চলাচল কমেছে সড়ক খারাপের কারণে। হাইতকান্দি ইউনিয়নের বাসিন্দা ছালাহ উদ্দিন বলেন, বেড়িবাঁধ সড়কের অবস্থাও খারাপ। এতে মিরসরাই ও সীতাকু উপজেলার প্রায় ছয় ইউনিয়নের মানুষ ভিন্ন পথে চলাচল করছেন। জোরারগঞ্জ থেকে মুহুরি প্রজেক্ট সড়কের দশা দেখার কেউ নাই। সড়কটিতে ভারী যান চলাচলের কারণে সংস্কার শেষ হতেই নষ্ট হয়ে যায়। এ সড়কের দৈর্ঘ্য ১২ কিলোমিটার। এর মধ্যে সাত কিলোমিটার সড়ক একেবারেই চলাচলের অযোগ্য। সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থা বিষুমিয়ারহাট থেকে আজমপুর বাজার পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার। সিএনজি অটোরিকশাচালক শরীফ হোসেন বলেন, সড়কের অধিকাংশ স্থানে গর্ত। প্রায়ই সময় গাড়ি উল্টে যায়। রাস্তায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বের হতে হয়। ওচমানপুর এলাকার বাসিন্দা কামাল উদ্দিন বলেন, সড়ক সংস্কার হলেও নিম্নমানের কাজের কারণে এক মাসের মধ্যেই সব আবার আগের মতো হয়ে যায়। সময়, ভাড়া দুই-ই বেড়ে যাচ্ছে। পিকআপ চালক আরিফ হোসেন বলেন- লোড গাড়ি গর্তে পড়ে আটকে যায়, সময় নষ্ট হয়, যন্ত্রপাতিও নষ্ট হয়। ঠিকঠাক রাস্তা থাকলে সময়মতো মালামাল পৌঁছানো যেত। উপজেলার মীরসরাই সদর ইউনিয়নের মিঠাছরা-শ্রীপুর-গড়িয়াইশ সড়কে পা রাখলেই মনে হয় এটি যেন আর সড়ক নাই, বরং গর্ত, কাঁদা ও পানির এক মিশ্র পথ। কোথাও ইট খোয়া উঠে তৈরি হয়েছে বড় বড় খানাখন্দ, আবার কোথাও জমে আছে হাঁটুসমান কাঁদা পানি। বর্ষা এলেই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে পড়ে। দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কে হেঁটে চলাও যেন এক রকম দুঃসাহসের কাজ। সড়কটি দিয়ে অন্তত ১০ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, কৃষক, ব্যবসায়ী ও কর্মজীবী মানুষ। কিন্তু বছরের পর বছর সংস্কার না হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ এই গ্রামীণ যোগাযোগ পথটি এখন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা রিপন গোপ পিন্টু ও মিঠুন মজুমদার বলেন, এই সড়ক অনেক দিন ধরে বেহাল অবস্থায় আছে। কোথাও খানাখন্দ, কোথাও কাঁদা পানি। এতে করে সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। জনপ্রতিনিধিরা বারবার সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে কোনো কাজ করেনি। আর এখনতো জনপ্রতিনিধিই নাই। শ্রীপুর ও গড়িয়াইশ গ্রামের কৃষক কামাল উদ্দিন, সান্তু ভূঁইয়া, নিরঞ্জন দে ও আলী আকবরসহ অন্তত ১০ জন কৃষক জানান, ফসল বিক্রির জন্য মিঠাছরা বাজার বা আশপাশের হাটে যেতে হয়।