
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ও প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এবার লোহাগাড়ায় ১১১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও পূজা উপলক্ষে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এবার দেবী দুর্গা মর্ত্যলোকে আসছেন গজে অর্থাৎ হাতির পিঠে করে। যা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। হাতির পিঠে দেবীর আগমন সমৃদ্ধি ও কল্যাণ বয়ে আনে এবং বসুন্ধরা শস্য শ্যামলা হয়ে ওঠে। আর দোলা বা পালকিতে চড়ে দেবলোকে ফিরে যাবেন। তবে দোলা বা পালকিকে অশুভ প্রতীক হিসেবে দেখা হয় যা মহামারী বা মড়ক নির্দেশ করে। অর্থাৎ এবছর দেবীর আগমন শুভ হলেও বিদায়কালে কিছু অশুভ ঘটনার ইঙ্গিত থাকতে পারে।
সরেজমিন পূজামণ্ডপে গিয়ে দেখা যায় শেষ মুহূর্তে চলছে প্রতিমা শিল্পীদের ব্যস্ততা। তুলির আঁচড়ে রাঙ্গিয়ে তুলছেন প্রতিমাকে। এরইমধ্যে সব পূজামণ্ডপ পূজার জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এবছর লোহাগাড়ায় ৭২টি প্রতিমা পূজা ও ৩৯টি ঘটপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরইমধ্যে প্রত্যেক পূজামণ্ডপের জন্য সরকারি বরাদ্দ হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। এরইমধ্যে পূজা উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা করেছে উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ। জানা যায়, উপজেলা ইউএনও অফিসের তত্ত্বাবধানে পিআইও অফিসে প্রত্যেক পূজামণ্ডপ কমিটির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদককে পূজার সরকারি বরাদ্দের টাকা বিতরণ করা হবে। এদিকে জাঁকজমকপূর্ণ পূজার আয়োজনে খুবই ব্যস্ত সময় পার করছেন আয়োজকরা।
মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমাগুলো সারিবদ্ধভাবে সাজানাের কাজ চলছে। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর রবিবার থেকেই শারদীয় দুর্গোৎসবের ঢোলের বাজনা, উলুধ্বনি আর আরতিতে মুখরিত হবে পূজামণ্ডপ ও পাড়া-মহল্লা। পূজায় পুলিশসহ অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। উৎসবকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে মন্দিরগুলাতে চলছে ব্যাপক সাজসজ্জা। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের লোহাগাড়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক বাবলু শংকর নাথ বলেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ এই স্লোগানকে ধারণ করে সবাইকে নিয়ে এবং সব ধরনের শৃঙ্খলা বজায় রেখে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজা কমিটির পক্ষ থেকে প্রত্যেকটা পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করা হবে এবং সার্বক্ষণিক যে কোনো ধরনের সহযোগীতা করা হবে। উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি মৃণাল দাশ মিলন মেম্বার বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে প্রতি বছরের মতো এবছরও লোহাগাড়ায় ১১১টি মণ্ডপে ব্যাপক সাড়ম্বরে দুর্গোৎসব উদযাপিত হবে। এরইমধ্যে প্রত্যেক পূজামণ্ডপ কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে।
তাছাড়া চট্টগ্রাম ডিসি অফিস, জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানা পুলিশ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।
প্রতিটি পূজামণ্ডপের জন্য আর্থিক অনুদানও বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ লোহাগাড়া উপজেলা শাখার প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষাবিদ সুনীল কুমার চৌধুরী বিএসসি বলেন, দুর্গাপূজা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অনুষ্ঠান হলেও অন্য সম্প্রদায়ের লোকজনও এই উৎসবে সামিল হন। দেশের অন্যান্য জায়গার তুলনায় লোহাগাড়া একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির এলাকা। এখানে সব ধর্মের মানুষ বিভিন্ন পূজা-পার্বন ও ঈদসহ নানা আয়োজন মিলেমিশে উদযাপন করি। এবারের দুর্গা পূজাও যাতে ঝাঁকজমকভাবে অনুষ্টিত হয় সে লক্ষে প্রশাসনকে সবধরনের সহায়তা করা হবে।
আশাকরি এবারের দুর্গাপূজাও আড়ম্বরপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। লোহাগাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আরিফুর রহমান বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুর্গাপূজা উদযাপনে ৫ স্তরের নিরাপত্তা দেয়া হবে। বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিজিবি, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী প্রতিটি পূজামণ্ডপে দায়িত্ব পালন করবে। পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগীতা অব্যাহত থাকবে। প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহীনির সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বদা নিয়ােজিত থাকবে। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সর্বদা সতর্ক দৃষ্টি রাখা হবে। শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রতিটি পূজামণ্ডপে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পুলিশ মোতায়েন করা হবে। লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, পূজার্থীরা যাতে নির্বিঘে পূজামণ্ডপে গিয়ে পূজা দেখতে পারে এ ব্যাপারে কঠোর নিরাপত্তা দেওয়া হবে। আশা করি কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়া সবার অংশগ্রহণে পুরো উপজেলায় উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। উল্লেখ্য, আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজা এবং ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে।