ঢাকা মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

রাউজানে ৮১ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই

রাউজানে ৮১ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই

বহুমুখী সমস্যার মধ্যে সময় পার করছে রাউজানের প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ। এই উপজেলার ১৮১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৮১টিতে নেই প্রধান শিক্ষক। সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদ প্রায় অর্ধশত। চলতি অর্থবছরে আরও অনেক শিক্ষক অবসরে যাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে। শিক্ষক সংকটের মতো কর্মকর্তা কর্মচারীর সংকট রয়েছে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়েও। এখানে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার (এটিও) আটটি পদের মধ্যে আছেন মাত্র তিনজন। পাঁচজন কর্মচারীর মধ্যে আছে দুই জন। শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষ সংকটে থাকা এমন অন্তত ৩০টি বিদ্যালয়ের পাশে নতুন ভবন নির্মাণ কাজ অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

জানা যায়, রাউজান উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে পদায়নকরা অফিস সহকারী অঞ্জন বিশ্বাস রাউজান থেকে বেতন ভাতা উত্তোলন করে আসলেও তিনি চাকুরি করছেন কক্সবাজার জেলায়। একইভাবে এই কার্যালয়ে পদায়ন করা হিসাব সহকারী শাহিদা আকতার কাজ করছেন নগরীর ডবলমুড়িং থানা এলাকায়। তিনিও বেতন ভাতা উঠান রাউজান থেকে।

রাউজানের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহের বর্তমান অবস্থা জানতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায় উপজেলার আটটি বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে। এরইমধ্যে নাম পরিবর্তনের জন্য জেলা থেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। যেসব বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে সেসব বিদ্যালয়সমূহের মধ্যে রয়েছে সাতটি বর্তমানে কারাবন্দি এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরী ও তার মা, বাবার নামে নামকরণ করা। অন্যটি স্থানীয় জনসাধারণের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নাম পরিবর্তন চাওয়া।

নানা সমস্যায় থাকা প্রাথমিক শিক্ষার হালচাল দেখতে উপজেলার বিভিন্নস্থানে থাকা কয়েকটি বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় অনেক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ সংকট। শিক্ষার্থীরা পাঠ নিচ্ছে বারান্দায় অথবা ব্যঞ্চে গাদাগাদি করে বসে। প্রধান শিক্ষক না থাকা বিদ্যালয়সমূহে লক্ষ্য করা গেছে বিশৃংঙ্খল পরিবেশ। অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা মানছে না বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার সময় সূচি। অনেককে দেখা যায় বিদ্যালয় শুরুর ১ থেকে দেড় ঘণ্টা পরে আসতে। আবার যাওয়ার বেলায় কারও কারও কাজের দোহায় দিয়ে ১টা থেকে ২টার মধ্যে স্কুল ত্যাগ করতে দেখা যায়।

জানা যায় রাউজানে যারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় আছেন তাদের মধ্যে বেশির ভাগ নারী শিক্ষক। তাদের প্রায় ৮০ শতাংশ থাকেন চট্টগ্রাম শহরের বাসা বাড়িতে। এসব শিক্ষকরা সকালে সংসারের কাজ গুঁছিয়ে বাসা বাড়ি থেকে বের হতে হয়। অনেক সময় রাস্তায় যানবাহনের যানজটে পড়ে বিদ্যালয়ে পৌঁছতে হয় বিলম্বে। এমন সমস্যার মধ্যে কিছু কিছু বিদ্যালয়ে শিক্ষক উপস্থিতির দেখা যায় ১০টার পর।

সাধারণ শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বললে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন- ঘরের মূল অভিভাবক না থাকলে যেমন হয় সেই অবস্থায় চলছে প্রধান শিক্ষকবিহীন বিদ্যালয়গুলো। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে এক সহকারীকে দেওয়া হলেও তার পক্ষে অন্য সহকর্মীদের শৃংঙ্খলা দেখা সম্ভব হয় না।

পরিদর্শনের সময় দেখা যায় শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষ সংকটে থাকা এমন অন্তত ৩০টি বিদ্যালয়ের পাশে নতুন ভবন নির্মাণ কাজ অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কয়েকটির কাজ চালানো হচ্ছে ধীরগতিতে। কাজ বন্ধ হয়ে থাকা নির্মাণাধীন ভবন নিয়ে কথা বললে রাউজান উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম জানান গত সরকারের আমলে এসব ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছিল। সেই সময় নির্মাণ কাজ পেয়েছিল আওয়ামী লীগ সমর্থিত ঠিকাদাররা। রাজনৈতিক পেক্ষাপট পরিবর্তন হলে তারা কাজ ফেলে এলাকা ছেড়েছে। এখন তিনি পলাতক ঠিকাদারদের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে বিকল্প ব্যবস্থায় নির্মাণাধীন ভবনসমূহের কাজ শেষ করার ব্যবস্থা নিয়েছেন। এরইমধ্যে বেশ কিছু ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়েছে, অন্যগুলো দ্রুত শেষ করতে পারবেন বলে তিনি দাবি করেন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ ও নিজ কার্যালয়ে জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নরুন্নবী বলেন চলতি অর্থবছরে আরও কিছু শিক্ষক অবসরে যাবেন। অতিদ্রুত শূন্য পদে শিক্ষক, কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অবশ্য এই কর্মকর্তা যোগ করেন, জনবল নিয়োগ বিলম্ব হলে বিদ্যমান সমস্যা আরও বেড়ে যাবে।

বিদ্যালয়সমূহে শিক্ষকদের আসা যাওয়ার নিয়ম না মানার বিষয়ে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন শিক্ষকতায় থাকা বেশির ভাগ শিক্ষক শহরের বাসা বাড়িতে থাকেন। বিভিন্ন সময় রাস্তায় যানজটে পড়তে হয়। তবে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়ে পৌঁছে পাঠদানে অংশ নেন। এই কর্মকর্তা আটটি বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গে বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য ও তার পিতা-মাতার নামে নামকরণ করা সাতটিসহ আটটি বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। সিদ্ধান্ত পেলে কার্যকর হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত