ঢাকা মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হাটহাজারী সমবায় হিমাগার ঝুঁকিপূর্ণ

হাটহাজারী সমবায় হিমাগার ঝুঁকিপূর্ণ

উত্তর চট্টগ্রামের আলু সংরক্ষণের একমাত্র স্থান হাটহাজারীর সমবায় হিমাগার ঝুঁকিপূর্ণ। নিরাপত্তায় চারদিক সীমানা প্রাচীর থাকার কথা থাকলেও তালাবদ্ধ লোহার গেইট ব্যতীত নেই কোনো সীমানা প্রাচীর। বছরের পর বছর হিমাগারটি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলেও নিরব ভূমিকায় কর্তৃপক্ষ ফলে ভবন ধস, চুরি ডাকাতিসহ যে কোনোও মুহূর্তে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা কোটি টাকার লোকসানে পড়তে পারে কয়েকশ চাষি ও ব্যবসায়ী।

জানা গেছে, উপজেলার এগারো মাইল এলাকায় পাকিস্তান আমলে সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক (মার্কেটিং সোসাইটি) নির্মিত হিমাগার দিয়েই এখনও পর্যন্ত কার্যক্রম চলে আসছে। তৎ সময়ে বাংলাদেশে প্রথম তিনটি জেলায় প্রান্তিক কৃষকদের সুবিধার্থে নির্মাণ করা হয় হিমাগার। ঠাকুরগাঁও ও নওগাঁ জেলার পাশাপাশি চট্টগ্রামের মধ্যে হাটহাজারীতে নির্মিত হয় এ হিমাগার।

পরবর্তীতে বিআরটিসি জেলাভিত্তিক বেশ কয়েকটি নির্মাণ করলেও চট্টগ্রামে আর কোনো সমবায় হিমাগার নির্মিত হয়নি। ফলে চট্টগ্রাম বিশেষ করে উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান, রাঙুনিয়া, ফটিকছড়ি উপজেলা ছাড়াও দুই পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির চাষিও ব্যবসায়ীরা আলু, আলুর বীজ সংরক্ষণ করে আসছেন। যে কোনো সবজি সংরক্ষণের সুবিধা থাকলেও এ তিন জেলার চাষি ও ব্যবসায়ীরা আলুর ওপর গুরুত্ব দেওয়ায় আলু হিমাগার নামেই পরিচয় লাভ করে হিমাগারটি।

একশ শতাংশ জায়গার মধ্যে প্রায় ১৫ শতাংশ জায়গার উপর নির্মিত হিমাগারে বছরে ১৮ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণ করা যায়। এরমধ্যে বীজ এবং খাবার আলু রাখা হয় বছরে ৪০০ টাকা হারে। বছরের মার্চ মাসের ১৫ তারিখ থেকে শুরু করে নভেম্বরের ১০ তারিখ পর্যন্ত খাবার ও বীজের আলু সংরক্ষণ করা হয়। সংরক্ষণের বুকিং শুরু হয় ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ।

বছরের প্রায় সময় খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বিক্রির উদ্দেশে খাবার আলু নিয়ে গেলেও চাষিরা বীজের আলু নেন চাষাবাদের সময়। হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও দুই পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কাউখালী ও খাগড়াছড়ি জেলার দিঘিনালা এলাকায় আলুর ফলন তুলনামূলক বেশি হয়। ফলে হিমাগারের সিংহভাগ থাকে এ কয়েক অঞ্চলের দখলে। বিগত কয়েক বছরের মধ্যে ২০২০ সালে আলুর ফলন সবচেয়ে ভালো হয়েছিল বিধায় হিমাগারের ধারণ ক্ষমতার চাইতে বেশি আলু এসেছিল সংরক্ষণে। তবে বাকি বছরগুলোয় লক্ষমাত্রা অসম্পূর্ণ ছিল ফলন ভালো না হওয়ায়। তবে চলতি বছরে ফলন ভালো হওয়ায় ধারণ ক্ষমতার চাইতে এক হাজার বস্তা অতিরিক্ত সংরক্ষণ করা হয়। ফেরত দেওয়া হয় আরও এক হাজারের মতো। আর এতে বিপাকে পড়েন অনেক আলু চাষি ও ব্যবসায়ী। এদিকে যুগের পর যুগ হিমাগারটির টেকসই সংস্কার না করায় দিন দিন ঝুঁকিতে পরিণত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সীমানা প্রাচীর না থাকায় চুরির ঘটনা ঘটছে প্রায়শই। কখনও মই চুরি কখনও বৈদ্যুতিক তার চুরি কখনও বা অন্য কিছু। কর্তৃপক্ষকে অবগত করলেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার কথা জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি।

সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নস্থ চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি-রাঙামাটি মহাসড়কের পাশেই হিমাগারের প্রবেশ পথে লোহার গেইটে তালা। দক্ষিণ পাশে ব্যক্তিমালিকানাধীন পাকা দেয়াল থাকলেও বাকি তিন দিক খোলা। হিমাগারের ভেতর ও বাহিরের দেয়ালের অবস্থা নাজুক। চরদিকেই দেয়ালের উপরের পলেস্তারা খসে পড়ছে। টিনসেড দেয়াল আবাসিকের অবস্থাও জরাজীর্ণ। যে কোনো সময় চুরি ডাকাতির ঝুঁকি রয়েছে। সত্যতা স্বীকার করে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা বলেন, কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। দেশের এ ধরনের হিমাগার সমবায় অধিদপ্তরের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সমবায় সমিতির লোকজন পরিচালনা করেন। বছরে বছরে লিজ দেওয়া হয়। বর্তমানে মেসার্স রাজমহল বাণিজ্যনালয় নামে একটি প্রতিষ্ঠান এ হিমাগার পরিচালনা করছেন।

হাটহাজারী সমবায় হিমাগারের ইনচার্জ সাইয়েদ চলতি বছরের জুন মাসে মারা যাওয়ার পর কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি বলে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন স্টোর ইনচার্জ মনিরুজ্জামান টিটো।

তবে নাম অনুচ্ছিক এক কর্তা জানান, ১০০ শতাংশ জায়গা থাকলেও মার্কেটিং সোসাইটির অনুমতি নিয়ে ২০১৬ সালে পেছনে ২৮ ও দক্ষিণে ২ শতাংশসহ মোট ৩০ শতাংশ জায়গা ১ কোটি ৩২ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়। এরপর ১৮ ও ১৯ সালে হিমাগারের ভেতরের অংশে কিছু সংস্কার করা হয়েছিল। হাটহাজারী উপজেলার সমবায় কর্মকর্তা বখতিয়ার আলম বলেন, এখানে উপজেলা কিংবা জেলা সমবায় কর্মকর্তার কোনো কাজ নেই। এটি সমবায় অধিদপ্তর ঢাকার নিয়ন্ত্রাধীন এবং মার্কেটিং সোসাইটি পরিচালনা করেন। শিগগিরই পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান সমবায় অধিদপ্তরের যুগ্ম নিবন্ধক (নিরীক্ষা ও আইন) মুহাম্মদ আব্দুল্লা আল মামুন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত