ঢাকা মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পাহাড়ি অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনা আখ

পাহাড়ি অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনা আখ

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের তঞ্চঙ্গ্যা পাড়ায় পাহাড়ি প্রান্তিক কৃষকেরা এখন নতুন আশায় বুক বেঁধেছেন আখ চাষে সফলতার গল্প লিখে। পার্বত্য এলাকায় তুলনামূলক কম পরিচিত এই ফসল এখন ধীরে ধীরে

পাহাড়ি অর্থনীতির সম্ভাবনাময় শাখায় পরিণত হচ্ছে।

২০২৪-২৫ রোপণ মৌসুমে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সুগারক্রপ জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের রেশম বাগান এলাকায় ৯টি প্লটে আখ চাষ করেন স্থানীয় তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের কৃষকরা। প্রথমবারের মতো এই অঞ্চলে বাণিজ্যিক আকারে আখ চাষ শুরু হয়, এবং ফলন আশাতীত হওয়ায় চাষিদের মধ্যে এখন ব্যাপক উৎসাহ দেখা যাচ্ছে।

রেশম বাগান এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সারি সারি আখের সবুজ সারি হেলে দুলছে পাহাড়ি বাতাসে। আখ কেটে ট্রাকে করে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন চাষিরা। কেউ এরইমধ্যে বিক্রি শেষ করেছেন, কেউ আবার নতুন অর্ডার নিচ্ছেন।

আখচাষি মায়াদেবী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আমি ৬০ শতাংশ জমিতে আখ লাগিয়েছিলাম। এ বছর ফলন অসাধারণ হয়েছে। পাইকাররা প্রতি পিস আখ ২২-২৫ টাকায় কিনে নিচ্ছেন। কিছু আখ বিক্রি করেছি, ভালো লাভও হয়েছে।

অন্য চাষি ইতি তঞ্চঙ্গ্যা জানান, প্রায় ১ একর জমিতে আখ লাগিয়ে ছিলাম। ফলন ভালো হয়েছে। বিক্রির পর বুঝতে পারলাম এটা পাহাড়ের জন্য খুবই লাভজনক ফসল।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সুগারক্রপ জোরদারকরণ প্রকল্পের কনসালটেন্ট ধনেশ্বর তঞ্চঙ্গ্যা বলেন- আমরা প্রকল্পের আওতায় চাষিদের প্রশিক্ষণ, বীজ, সার ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছি। প্রত্যেক চাষিকে ১ বিঘা করে জমিতে আখ চাষের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, এখানে চাষ করা হচ্ছে বিএসআরআই আখণ্ড৪২ (রং বিলাস) জাতের আখ। এটি উচ্চফলনশীল ও মিষ্টতার মানেও উন্নত। চাষিরা খুব দ্রুত সময়ে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। স্থানীয় চাষিদের হিসাবে, প্রতি বিঘা জমিতে উৎপাদন খরচ ২৫-৩০ হাজার টাকা।

এক মৌসুম শেষে বিক্রয়মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকায়, ফলে প্রতি বিঘায় নেট লাভ দাঁড়ায় প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকা। এই লাভের হার দেখে অনেকে আগামী মৌসুমে আরও বেশি জমিতে আখ চাষের পরিকল্পনা নিচ্ছেন। পাইকারি ক্রেতা জহিরুল ইসলাম যিনি চট্টগ্রাম থেকে আখ কিনে নিয়ে যান বলেন, এই এলাকার আখ খুব মিষ্টি এবং দৃষ্টিনন্দন। স্থানীয় চাষিরা এখন বাজারে নতুন সরবরাহকারী হিসেবে উঠে আসছেন। পাহাড়ি মাটিতে আগে তেমনভাবে আখ চাষ প্রচলিত না থাকলেও, এই সফলতার পর নতুন করে আশার আলো দেখছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য লালরেম তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আখ চাষে নারীরা এখন স্বনির্ভর হচ্ছে। এটি শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক পরিবর্তনও আনছে। রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার মতে- পাহাড়ি উঁচু-নিচু জমিতেও আখ চাষ সম্ভব, কারণ এই ফসল কম পরিচর্যা ও মাঝারি পানির সরবরাহেই ভালো ফলন দেয়। ভবিষ্যতে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সহায়তা বৃদ্ধি পেলে পাহাড়ি অর্থনীতিতে আখ হবে একটি স্থায়ী আয়ের উৎস।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত