ঢাকা মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

রাউজানে ভার্মি কম্পোস্ট সারের ব্যবহার বাড়ছে

রাউজানে ভার্মি কম্পোস্ট সারের ব্যবহার বাড়ছে

রাউজানে কৃষক ছগির আহমদ লাল কেঁচোর ‘ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচোসারের প্রকল্প’ খামার করে এলাকায় তাক লিয়ে দিয়েছেন। কৃষি বিভাগের সহয়তা নিয়ে গড়ে তোলা তার খামার থেকে প্রতিদিন এলাকার কৃষকরা কৃষিজমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে এখন জৈব সার ব্যবহার করছে। রাউজান পৌরসভার শরীফ পাড়ার কৃষক ছগির আহমদ মাত্র এক থেকে দেড় লাখ টাকা খরচ করে কেঁচো দিয়ে তিনি তৈরি করছেন জৈব সার। তার কেঁচো সারের রয়েছে ওই এলাকার ব্যাপক চাহিদা। খবর নিয়ে জানা যায় কেঁচো দিয়ে জৈব সার তৈরির এই প্রকল্প রাউজানে এই প্রথম।

গত এক বছর আগে ছগির আহমদকে কেঁচোর মাধ্যমে জৈব সার তৈরিতে সহায়তা দিয়ে প্রকল্পটি চালু করতে সহায়তা দিয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও তদারকিতে প্রকল্পটির মাধ্যমে এখন সফলতা পেয়ে কৃষক বেশ খুশি। গ্রামের কৃষকরা এই ধরনের প্রকল্প পেতে আরও আগ্রহী বলে জানিয়েছেন ওই এলাকার কৃষক নুরুল আজিম।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা সনজিব কুমার সুশীল বলেছেন কৃষক ছগির আহমদকে কৃষি বিভাগ থেকে ৬ কেজি লাল কেঁচো কিনে দিয়েছেন। এই ধরনের কেঁচো দাম প্রতি কেজি দেড় হাজার টাকা। প্রকল্পের অন্যান্য সহায়তার পাশাপশি কৃষি বিভাগের লোকজন হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়নে। কৃষক পরিবারের গৃহপালিত গরুর গোবরই হচ্ছে এই প্রকল্পের অন্যতম প্রধান উপকরণ। উদ্যোক্তা ছগির আহমদ বলেন তিনি এই প্রকল্পের মাধ্যমে বেশ সফলতা পাচ্ছেন। নিজের দুই একর কৃষি জমিতে তার উৎপাদিত কেঁচো সার ব্যবহার করছেন। পাশাপাশি স্থানীয় কৃষকদের কাছে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। এই পর্যন্ত তিনি প্রায় চার টন সার বিক্রি করেছেন বলে জানান।

কেঁচো সার উৎপাদনের প্রকল্পটি পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখা গেছে ছগিরের বাড়ির সঙ্গে মাত্র খোলা জায়গায় দুই শতক জায়গার উপর টিন সেট। সেটের নিচে ২ মিটার লম্বা, ১ মিটার চওড়া ইটের তৈরি চারটি চৌবাচ্চা। পাশে আছে টয়লেটে ব্যবহার করা হয় এমন পাঁচ সাতটি ইট সিমেন্টে তৈরি করা রিং। এসব রিং ও চৌবাচ্চাসমূহ গরুর গোবরে ভর্তি। জানা যায় গোবরের নিচে আছে কেঁচো। এ সময় প্রকল্পটি দেখতে আসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুম কবির বলেছেন কেঁচো খাদ্য হচ্ছে গরুর গোবর। সেই গোবর খেয়ে কেঁচোগুলো বংশ বিস্তার করে। সেখানে মলত্যাগ করে। সেই মলের সঙ্গে কেঁচোর দেহ থেকে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ বের হয়। আর সেই মলসমৃদ্ধ গোবর উঠিয়ে শুকিয়ে হাত চালিত একটি বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে পাউডার করার মাধ্যমে জৈব সার উৎপাদন অত্যান্ত সহজ। এই কর্মকর্তা বলেন ‘ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচোসারের প্রকল্পটিতে তৈরি জৈব সার অত্যাধিক উর্বরতা শক্তি বর্ধক। এই সার কৃষি জমিতে প্রয়োগ করলে অন্য আর কোনো রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না জমিতে। কৃষি বিভাগ থেকে জানা যায় এই ধরনের প্রকল্প তৈরিতে অনেক কৃষক আগ্রহী হয়ে কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।

স্থানীয় কৃষকরা বলেছেন স্বল্প পুজি ও সহজলভ্য কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত গোবর প্রায় প্রতিটি কৃষকের ঘরে ঘরে রয়েছে। কৃষি বিভাগ প্রণোদনার প্রকল্প হিসাবে গ্রামীণ কৃষকদের এই ধরনের প্রকল্প তৈরিতে সহায়তা প্রদান করলে আগামীতে কৃষিজমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত