ঢাকা সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সুফল

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সুফল

চট্টগ্রাম নগরীর যানজট নিরসনে ২০১৭ সালে শুরু হয় লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজ। সাত বছর পরে ২০২৫ সালেও মিলছে না প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত সুফল। যে সড়কে চলতি বছর প্রতিদিন ৩৯ হাজার গাড়ি চলাচলের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা হয়েছিল, সেখানে ১০ মাসের হিসাবে গড়ে চলাচল করেছে মাত্র ৮ হাজার। সম্ভাব্যতার তুলনায় যা মাত্র ২০ দশমিক ৬১ শতাংশ।

এভাবে চলতে থাকলে নির্মাণব্যয় তুলতেই লেগে যাবে প্রায় ২২৫ বছরের বেশি। এদিকে প্রকল্পের নির্ধারিত সময় তিন দফা বাড়িয়ে ২০২৬ সালের জুন করা হয়েছে। ব্যয় ৩ হাজার ২৫০ কোটি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। প্রকল্পের ৯১ শতাংশ কাজ শেষ হলেও সড়কের নিচে যানজট থাকছে আগের মতোই, আর ওপরে থাকছে প্রায় ফাঁকা। কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তড়িঘড়ি করে প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হয়। সে সময় প্রকল্পের নাম ছিল এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এক্সপ্রেসওয়ে।

এক বছর পরীক্ষামূলক চললেও গত ৩ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে টোল আদায় শুরু হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহিদ ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম আকরাম স্মরণে নাম রাখা হয়েছে ‘শহিদ ওয়াসিম আকরাম এক্সপ্রেসওয়ে’। পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহ-সভাপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকার উড়ালসড়কে বর্তমানে যে পরিমাণ গাড়ি চলছে, এটাই আসল সমীক্ষা। সিডিএ কর্তৃপক্ষ তাদের সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় অতিরিক্ত গাড়ি চলবে দেখিয়েছে। অতিরিক্ত না দেখালে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না। আর গ্রহণযোগ্য না হলে এ ধরনের প্রকল্প আসবে না।

এই অবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানান এই নগর-পরিকল্পনাবিদ। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) হিসাব বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে টোলসহ উদ্বোধনের পর ১০ মাসে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে গাড়ি চলেছে ২৪ লাখ ৩৫ হাজার ৭৮৮টি, যা গড়ে দিনে ৮ হাজার ১১৯টি। এই সময়ে টোল থেকে আয় হয়েছে মোট ১৬ কোটি ৯৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। গড়ে দিনে আদায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার বেশি। মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও প্রাইভেটকার এসব যানবাহনই আয়ের মূল উৎস। কিন্তু যাত্রীভিত্তিক বাস ও মালবাহী ট্রাকের ব্যবহার একেবারেই কম। ফলে এটি শহরের স্বাভাবিক যানবাহনের চাপ কমানোর বদলে ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য বিলাসী সড়কেই পরিণত হচ্ছে বলে অভিযোগ অনেকের। প্রকল্পের নকশায় শুরুতেই ১৫টি র‌্যাম্প থাকলেও ছয়টি নির্মাণ স্থগিত করেছে নতুন সিডিএ বোর্ড।

বাকি ৯টির মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪টির নির্মাণকাজ শেষ হলেও কোনোটি চালু হয়নি। দুইটির কাজ এখনও শুরুই হয়নি। বাকিগুলোর কাজ চলছে। ফলে অনেক এলাকার চালকদের এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে ঘুরপথে যেতে হয়। আর এত ঘোরাঘুরি না করে নিচ দিয়ে গেলেই সময় বাঁচে বলে মনে করেন চালকরা। প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হলে যান চলাচল প্রত্যাশা অনুযায়ী হবে। র‌্যাম্প কিছু প্রস্তুত হয়েছে, কিছুর কাজ চলছে। প্রস্তুতগুলো শিগগিরই খুলে দেব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত