আধুনিক শিক্ষা ও বিজ্ঞান শিক্ষা যেন আদর্শিক হয়, ইসলামীকরণ হয়, সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন, দারুন নাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আ. খ. ম আবুবকর সিদ্দীক। দারুন নাজাত একাডেমির দ্বিতীয় ইবনে সিনা বিজ্ঞান মেলা, হিফজুল কোরআন অ্যাওয়ার্ড ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে শুক্রবার সকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
আ. খ. ম আবুবকর সিদ্দীক বলেন, দারুন নাজাত একাডেমির খুদে শিক্ষার্থীরা যেসব প্রজেক্ট তৈরি করেছে- সত্যিই চমকপ্রদ, অবাক হওয়ার মতো। অটোনোমাস অবস্ট্যাকল এভোইডেন্স রোবট কার তৈরি করেছে ষষ্ঠ শ্রেণির একদল শিক্ষার্থী। আমাদের সময়ে এই বয়সে আমরা তো বিজ্ঞান কী জিনিস তা-ই জানতাম না। মুসলমানরা হাজারো বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার বিশ্বকে উপহার দিয়েছে, যা ইতিহাসের চেহারা পাল্টে দিয়েছে এবং একটি বৈজ্ঞানিক বিপ্লব ঘটিয়েছে। তবে আজ মুসলমানরা জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা থেকে পিছিয়ে আসার ফলে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা আবার পূর্ণ হওয়ার পথ মসৃণ হবে এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। এর মাধ্যমে জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা নতুনভাবে প্রেরণা পাবে। নতুনভাবে এগিয়ে যাবে। এমনকি বিজ্ঞান মেলা শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বাড়াবে, সাহসী ও উদ্যমী করবে, বিজ্ঞানমনস্ক করবে, অনুসন্ধিৎসু করবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শিহাবুল ইসলাম বলেন, বিজ্ঞানের আজকের উত্থান ও উন্নয়নের পেছনে মৌলিক ভূমিকা পূর্ববর্তী মুসলিম মনীষীদের। বিজ্ঞানকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছানোর গোড়ার কারিগর তারা। কিন্তু বিজ্ঞানে আজ মুসলমানদের উল্লেখযোগ্য দখল নেই। এ ময়দানে যখন তারা পিছিয়ে পড়ে তখন এর নেতৃত্বে আসে পশ্চিমারা এবং তাদের হাত ধরেই বিজ্ঞানের আজকের এ অবস্থান। ইবনে সিনা, আল-কিন্দি, আল রাজি, ইবনে রুশদ, আল-ফারাবি, আল বেরুনি ও ইমাম গাজ্জালিসহ অগণিত মুসলিম মনীষী রচিত গ্রন্থগুলো ইউরোপীয় ভাষায় অনুবাদ করা হলেও গ্রন্থকারের লাতিন নাম বা বিদেশি নাম দেখে বোঝার উপায় নেই যে তারা মুসলমান।
শিহাবুল ইসলাম বলেন, বর্তমান বিশ্ব মুসলিমদের কাছে শুধু ঋণী নয় বরং বিজ্ঞানের উত্থানে মুসলমানদের কালচার ও সংস্কৃতিও বেশ প্রভাব রেখেছে। আধুনিক বিজ্ঞানের পথের সূচনায়ও রয়েছে মুসলমানদেরই অবদান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার এ বি এম ছিদ্দিকুর রহমান খান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের লেকচারার আব্দুল্লাহ যোবায়ের ও দারুননাজাত একাডেমির সিইও নাজমুল ইসলাম।
বিজ্ঞান মেলায় উপস্থাপিত কয়েকটি প্রজেক্টের মধ্যে অটোনোমাস অবস্ট্যাকল এভোইডেন্স রোবট কার, এমন একটি রোবট গাড়ি যা সেন্সরের সাহায্যে চলতে পারে এবং সামনে বাধা এলে তা এড়িয়ে চলতে পারে। এটি দেখায় কীভাবে যন্ত্র নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করতে পারে।
স্মার্ট এসি সার্কিট মডেল প্রজেক্টটি দেখায় কীভাবে বৈদ্যুতিক সার্কিট দক্ষতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এটি আমাদের ঘরোয়া অটোমেশন এবং শক্তি সাশ্রয়ের ধারণা শেখায়।
স্যাটেলাইট যোগাযোগ মডেল এমন একটি মডেল যা ব্যাখ্যা করে কীভাবে পৃথিবীজুড়ে সংযোগ স্থাপন করতে স্যাটেলাইট আমাদের টেলিভিশন, ইন্টারনেট, নেভিগেশন এবং যোগাযোগে সহায়তা করে সারা।
হৃদযন্ত্রের কার্যপ্রণালীর মডেল এমন একটি চলমান মডেল যা দেখায় কীভাবে মানুষের হৃৎপিণ্ড সারা শরীরে পাম্প করে। এটি আমাদের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বোঝাতে সাহায্য করে।
ল্যান্ডস্কেপ গার্ডেনিং মডেল একটি সৃজনশীল প্রদর্শনী যা দেখায় কীভাবে সৌন্দর্য ও পরিবেশের জন্য বাগান ডিজাইন করা হয়। এটি প্রকৃতি ও টেকসই জীবনের শিক্ষা দেয়।