ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি বিলুপ্তির পথে

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি বিলুপ্তির পথে

ও বৌ ধান ভানে রে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া ঢেঁকি নাচে বৌ নাচে হেলিয়া দুলিয়া। ও বৌ ধান ভানে রে পল্লি কবি জসিম উদ্দিনের ঢেঁকি নিয়ে এই কবিতা এখনো স্মৃতিতে অম্লান থাকলেও নানা স্মৃতির এই ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি এখন বিলুপ্তির পথে। এক সময়ে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে ঢেঁকি তে ধান ভানা চিড়া কোটা আর চালের গুঁড়া কোটার দৃশ্য হরহামেসাই চোখে পরত। কিন্তু কালের বিবর্তনে ও আধুনিকতার ছোয়ায় গ্রাাম বাংলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময়ে গভীর রাতে ধান বানা ঢেঁকির শব্দে ঘুমন্ত মানুষের ঘুম ভাংত। গ্রামের নারীরা দৈনন্দিন কাজের মত ধান, গম, কলাই, যব (পায়রা) ভাঙ্গার কাজ ঢেঁকিতেই করতেন।

এছারা চিড়া তৈরির মতো কঠিন কাজ ঢেঁকিতেই করা হতো। বিশেষ করে শবে বরাত, ঈদ, নবান্ন উৎসব পৌষ পার্বণের মতো বিশেষ দিনগুলোতে পিঠা পুলি খাওয়ার জন্য আধিকাংশ বাড়িতে ঢেঁকি দিয়ে চালের গুড়া তৈরি করা হতো। তাছাড়া ঐ সময় এলাকায় সম্পদশালী গৃহস্থরা আশপাশের দরিদ্র নারীদের টাকা বা ধানের বিনিময়ে ঢেঁকিতে চাল ও গম ভাঙিয়ে নিতেন। ধান, গম ও অন্য ফসল ভাঙানোর আধুনিক যন্ত্র আবিষ্কারের ফলে এক সময়ের নিত্য প্রয়োজনীয় ঢেঁকি এখন বিলুপ্তির পথে। সভ্যতার প্রয়োজনে ঢেঁকির আর্ভিরভাব ঘটে ছিল। আবার গতিময় সভ্যতার যাত্রা পথে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ঢেঁকি। যুগের বিবর্তনে ঢেঁকি এখন আর সচরাচর চোখে পড়ে না। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে ঘর গৃহস্থালির এসব কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে পড়েছে। কিন্তু প্রাচীনকালের নারীরা উৎসবের আমেজে মেতে উঠত ঢেঁকিতে ধান বানতে। এছাড়া বিয়ের অনুষ্ঠানে ঢেঁকিতে চালের গুড়া ভাঙ্গানোর প্রচলন ছিল। এসব অনুষ্ঠানে ঢেঁকিতে ধান বানার পাশাপাশি নাচেগানে মেতে উঠত বিভিন্ন নারীরা।

সরেজমিনে মধুপুর উপজেলার পীরগাছা গ্রামের নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠির সুষমা রানী বর্মনকে ঢেঁকিতে ধান বানতে দেখা যায়। তিনি জানান, মধুপুরের প্রত্যন্ত জনপদে তাদের বসবাস। ওই সব জায়গায়ও এযুগে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। তবে পূজাপার্বণের কাজে তারা পরিশুদ্ধতার জন্য মেশিনে ভাঙানো চাল বা চালের গুড়া ব্যবহার করেন না। প্রথমে নদী বা পুকুরে সম্পূর্ণ শরীর ভিজিয়ে গোসল করে নিজেকে পবিত্র করে নেয়। ঢেঁকি ঘর ও তার চারপাশে গোবর ও পানি দিয়ে লেপন করে ওই জায়গাটি শুদ্ধ করে নেয়। তার পর ঢেঁকিতে ধান ভাঙিয়ে পূজা পার্বণের কাজে ব্যবহার করে। কালের আবর্তে বিলুপ্ত প্রায় ঢেঁকি নিভৃত পল্লীতে কদাচিৎ চোখে পড়লেও আধুনিক জনপদে এর লেশমাত্রও দেখা যায় না। ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে ঢেঁকি শব্দটিও এক সময় অলৌকিক বলে প্রতীয়মান হবে। এক সময় হয়ত যাদু ঘরে স্থান পাবে ধান বানা ঢেঁকি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত