ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

টাঙ্গাইলে যমুনায় বিলীনের মুখে ৫ শতাধিক বসতবাড়ি

টাঙ্গাইলে যমুনায় বিলীনের মুখে ৫ শতাধিক বসতবাড়ি

বর্ষার শুরুতেই টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় যমুনা নদীতে তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ৫ শতাধিক পরিবার। শঙ্কায় দিন কাটছে এসব পরিবারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ গয়লা হোসেন দাখিল মাদ্রসা, ডেকিয়া বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ গয়লা হোসেন নুরানি মাদ্রাসা, দক্ষিণ গয়লা হোসেন জামে মসজিদ, দক্ষিণ গোলাশন কবরস্থান এবং আব্দুল মান্নান সেতু।

জানা যায়, প্রায় ৫৩ বছর আগে খায়রুন নেছা নামে এক সমাজসেবী দক্ষিণ গয়লা হোসেন দাখিল মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠ করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ওই প্রতিষ্ঠানটি যমুনা নদীতে প্রায় ১৪ বার ভাঙনের কবলে পড়ে। বর্তমানে মাদ্রাসাটি ওমরপুর এলাকায় অবস্থিত। তবুও ভাঙনের শঙ্কা কাটছে না প্রতিষ্ঠানটির। একই এলাকায় অবস্থিত ডেকিয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ প্রতিষ্ঠানটিও প্রায় ১৫ থেকে ১৬ বার যমুনা নদীতে ভাঙনের কবলে পড়ে বর্তমানে ওমরপুরে এর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ বছরও ভাঙনের শঙ্কায় দিন কাটছে তাদের। ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী বাধ নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর। এসব দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে স্থানীয়রা।

স্থানীয় আমিরুল ইসলাম জানান, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নের ঝাউগাড়া হতে ওমরপুর দক্ষিণপাড়া পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যমুনা নদীর ভাঙন আতঙ্কে অনেকেই বাড়ি ঘর সরিয়ে নিচ্ছে। যমুনা নদীতে কয়েকবার ভাঙনের পর ভিটেমাটি হারিয়ে ওমরপুর নদীর তীরে বাড়ি ঘর করেছেন। এবার বাড়ি ভেঙে গেলে অন্যত্র বাড়ি করার মত জমিও তার অবশিস্ট নাই। বাড়ি করার জন্য মানুষ এখন আর জায়গা দিতে চায় না।

এ বাড়িটি অনেক কষ্টে অল্প কিছু টাকা দিয়ে জায়গার মালিকের কাছ থেকে লিজ নিয়ে বাড়িঘর করে রয়েছি। তিনি জানান, ওমরপুর গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ নদী ভাঙনের শিকার। এদের পূর্ব পুরুষরা যমুনা নদীতে অনেকবার ভাঙনের কবলে পড়ে সর্ব শান্ত হয়েছে। বর্তমানে ওমরপুর গ্রামে যারা রয়েছে সবাই ভিটে মাটি হারা। এদের পূর্বপুরুষরা এক সময় শত শত বিঘা জমির মালিক ছিল। ৯০ বছর বয়সে তিনি পাঁচবার ঘরবাড়ি ভাঙনের শিকার হয়েছেন। ছয় বাড়ের মাথায় ওমরপুর এসে বাড়ি নিয়েছেন। স্থানীয় আবুল হোসেন জানান তার বাবাসহ তিনি ১৩ বার এই যমুনা নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছেন। একটি পরিবার ১৩ বার যদি ভাঙনের শিকার হয় তাহলে তার আর কী থাকে।

তিনি আরও জানান এবার আর কোনো উপায় নাই বাড়ি সরানোর মত। মানুষ এখন লাভের উপর জায়গা দিতে চায় না। নদী ভাঙা মানুষ জায়গা কেনার মতো সামর্থ না থাকায় তারা লাভের উপর জায়গা নিয়ে বাড়িঘর করে থাকে। যার ফলে যমুনা নদীর পাড়ের মানুষ দূরে কোথাও কোনো জায়গা কেনার সামর্থ থাকায় বাড়িঘর করতে পারে না। নদী পাড়ের মানুষ নদীর কিনারেই বসবাস করে। যে কারণে তারা প্রতিবছরই নদীর ভাঙনের শিকারসহ বন্যার আতঙ্কে থাকে। তারা যেহেতু যমুনা নদী ভাঙা গড়ার সঙ্গে একাকার হয়ে থাকে সে কারণে সরকারের কাছে তাদের দাবি ভাঙন কবলিত এলাকা দ্রুত ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ। ওমরপুর গ্রামের আইয়ুব আলী জানান, পানাকুড়া, কেশবমাইজাল, চরপৌলি, উত্তর চরপৌলি, নয়াপাড়া, দশাখা, তেঁতুলিয়া, মাকরখোল, রশিদপুর, চগ্গপাল, বারবালাসহ প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি গ্রাম যমুনা নদী ভাঙনে সদর উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। তিনি আরও জানান ৮৮ থেকে তিনি এ রাক্ষসী যমুনার ভয়াবহতা দেখছেন।

স্থানীয় আনোয়ার হোসেন জানান, তাদের বাড়ি ছিল গয়লা হোসেন সেখান থেকে ভাঙতে ভাঙতে ওমরপুর এসে পারি জমিয়েছেন। এখন পরের জমিতে বাড়ি ঘর করে রয়েছেন। এই বাড়ি ভাঙলে জায়গা পাওয়া কষ্ট হবে। বর্তমানে জায়গার মালিকরা বাড়িঘর করতে দেয় না। একসময়ে তার বাপ দাদার খাদা খাদা জমি ছিল। আজকে তারা জমি হারা। তাদের বাপ-দাদারা জমির রাজত্ব করতেন। এই যমুনা তাদেরকে সেই রাজত্ব থেকে ফকির বানিয়ে দিয়েছে। আজকে অন্যের কাছে জায়গার জন্য ধরনা দিতে হয়। তিনি আরও জানান, তাদের জায়গা জমি ভেঙে যাওয়ায় যমুনা নদীতে শুকনো মৌসুমে বাদামের চাষ করেন। যার ফলে যমুনা নদীর কিনারে বসবাস করেন।

কাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বলেন যমুনার ভাঙ্গন আতঙ্কে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ৫ শতাধিক পরিবার রয়েছে। এছাড়াও বেশ কিছু কৃষি জমিও ভাঙনের শঙ্কায় রয়েছে। তিনি বলেন এই গ্রামের প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যদি জিও ব্যাগ ফেলা যেত তাহলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হত। তিনি আরও বলেন যমুনার পানি বাড়লে ও কমলে তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। দ্রুত সরকারের কাছে আবেদন জানাই ভাঙন প্রতিরোধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের। এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান বলেন, কাকুয়া ইউনিয়নে যে এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে সে এলাকায় আমরা ভাঙন প্রতিরোধে প্রতিরক্ষা কাজ করতে দ্রুত চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন ভাঙনকবলিত এলাকার জন্য অনেক আগেই চাহিদা দেয়া হয়েছে। সেটি দ্রুতই বরাদ্দ পেয়ে যাবেন। আশা করছেন ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই অনুমোদন হয়ে যাবে। টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদা আক্তার বলেন, এরইমধ্যে তিনি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে পরিদর্শন করেছেন। সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন যমুনা নদী সংলগ্ন। সেসব এলাকায় তিনি বিশেষ নজর রাখছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত