পিরোজপুরের কাউখালী কঁচা নদীর ওপর নির্মিত দক্ষিণ অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মহাসড়কটি বেনাপোল খুলনা-বরিশাল কুয়াকাটার সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগের মাধ্যম। এই সড়কের কাউখালীর কঁচা নদীর উপর অষ্টম বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সেতুটি নির্মাণ করার পর এটি পর্যটকদের জন্য একটি বিশেষ বিনোদন টুরিস্ট স্পট। এই ব্রিজ নিচের অংশে নদীর তীরে নির্মাণ করা হচ্ছে ডলফিন। এখানে শিশু, বয়স্কদের জন্য বিনোদন স্পট হিসেবে প্রস্তুত করার কাজ চলমান আছে। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সময় বিভিন্ন দূর-দূরন্ত থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী এখানে এসে ভিড় জমায়, উন্মুক্ত নদীর মাঝে দাঁড়িয়ে দক্ষিণা হাওয়ায় স্বস্তির নিশ্বাস নিতে। সেইসঙ্গে ব্রিজের নিচ থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম থেকে মংলা পোর্ট ও খুলনাগামী শত শত জাহাজ ব্রিজের নিচ থেকে চলার অপরূপ দৃশ্য স্বচক্ষে দেখার জন্য প্রতিদিন বিকালে ভিড় জমায় শত শত মানুষ। যার ফলে ব্রিজের দুই পাশে মানুষের উপচে পড়া ভিড় শুরু হয়ে যায়। বেশি ব্যবসার লোভে বিভিন্ন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চানাচুর, ঝালমুড়ি, বুট, বাদাম, ডাইল ভাজা, পপকন, চিংড়ি ফ্রাই, মুরগি ফ্রাই, আইসক্রিম, পানি, কোল্ড রিং এর দোকান নিয়ে ব্রিজের উপরে পশরা সাজায়। যার ফলে এই সমস্ত লোভনীয় খাবারগুলো আগন্তুক উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা ব্রিজের ওপরে দাঁড়িয়েই গাড়ি চলাচলের জায়গা দখল করে মজা করে খায়। অন্যদিকে ব্রিজের পূর্বপারে বেকুটিয়া অংশে রাস্তার পাশে ও ব্রিজের অর্ধেক জুড়ে অবৈধভাবে অদক্ষ চালকেরা অটো গাড়ি মোটরসাইকেল থামিয়ে রেখে অন্য গাড়িগুলো চলাচলে ভোগান্তি ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। যার ফলে ঈদ বা যেকোনো সরকারি ছুটির দিনে এই ব্রিজে অতিরিক্ত মানুষের ভিড়ে ব্রিজে ঘুরতে আসার পর্যটক ও পথচারীরা বেপরোয়া গাড়ি চালকদের চাকায় পৃষ্ঠ হয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
কেউ কেউ ঘটনাস্থলে অকালে মায়ের কোলশূন্য করে অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। আবার কেউ কেউ আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করে। এইবারের ঈদের দিনগুলো তার ব্যতিক্রম নয়। গত কয়েকদিনে প্রতিদিন কয়েকটি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। যার অনেকের নাম ঠিকানা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানতে পারলেও অধিকাংশ মানুষের নাম ঠিকানা প্রশাসন জানতে পারে না। কারণ হিসেবে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে দুর্ঘটনা শিকার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কেউ না কেউ তুলে নিয়ে চলে যায় হাসপাতালে। বেকুটিয়া সেতুটি কাউখালীর অংশ হলেও কাউখালী উন্নত কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় ব্রিজে দুর্ঘটনার শিকার হওয়া রোগীদের নিয়ে চলে যায় খুলনা বরিশালে। যে কারণে রোগীদের সঠিক তালিকা বা তথ্য প্রশাসন সংগ্রহ করতে পারেনা। গতকাল বিকালে সরজমিনে ঘুরতে গিয়ে দেখা যায় কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বজল মোল্লা ও থানা ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা ওসি মোহাম্মদ সোলায়মান ব্রিজের উপরে অবৈধ গাড়ি ও দোকানপাট ব্রিজের ওপর থেকে সরিয়ে দেন। তারা ঘটনা স্থল ত্যাগ করার পরেই আবার দৃশ্যপট পাল্টে যায়। কেউ মানছে না ট্রাফিক আইন। স্থানীয় ইউপি সদস্য ফোরকান হোসেন ও মেহেদী হাসান রুবেল জানান বেকুটিয়া ব্রিজের উপরে অটো গাড়ি ও মোটরসাইকেলের অবৈধ পার্কিং ব্রিজ দিয়ে স্বাভাবিক গাড়ি গুলোকে চলাচলে বাধাগ্রস্ত করে যার ফলে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পায়।
স্থানীয় জনগণ ও সাংবাদিকরা জানান বেকুটিয়া ব্রিজটা একটি টুরিস্ট স্পট। প্রতিদিনই দুপুরের পর ব্রিজের দুই প্রান্তে ও ব্রিজের মাঝখানে লোকজনের ঢল নামে। আর এই টুরিস্ট স্পটে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। বেপরোয়া মোটরসাইকেল ও নিয়ন্ত্রণহীন অটোচালকদের কারণে পথচারী, নিয়ন্ত্রিত মোটরসাইকেল আরোহীরা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অনেকেই হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় আছেন। আবার অনেক মায়ের বুক খালি হয়েছে। বিকুটিয়া ব্রিজে ঈদের দিন মোটরসাইকেল চাপায়ায় আহত মুনান তালুকদারের বড় ভাই মিল্টন তালুকদার বলেন আমার ভাই ঈদের দিন বন্ধুদের সঙ্গে বেকুটিয়া ব্রিজের পাশ দিয়ে হাঁটতেছিল এ সময়ে একটি বেপরোয়া মোটরসাইকেল অন্য একটি মোটরসাইকেলকে চাপা দেয় এতে ঘটনাস্থলে কয়েকজনের সঙ্গে আমার ভাই মুনান আহত হয়। তবে মুনানের অবস্থা ভালো না। সে ঢাকা গ্রীন লাইন হসপিটালে মাথায় অপারেশনের পর লাইভ সাপোর্টে আছে।