কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার বাজারগুলোতে কলা পাকাতে প্রকাশ্যেই দেওয়া হচ্ছে কার্বাইড জাতীয় বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ। ফলে ১২ ঘণ্টার মধ্যেই কলা আকর্ষণীয় হলুদ রং ধারণ করে। এমন দৃশ্য চোখে পড়বে তাড়াইল সদর বাজার, তালজাঙ্গা বাজার, পুরুড়া বাজার, সেকান্দরনগর বাজার, জাওয়ার বাজার ও দামিহাবাজারে। তাড়াইল উপজেলা প্রশাসনের নজরদারির অভাবে অসাধু কলা ব্যবসায়ীরা এসব অপকর্ম নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, রাতে রাসায়নিক মিশ্রিত পানির বালতিতে কলা ডুবিয়ে রাখা হয়। আর সকালে এ কলার খোসার রং হলুদ হয়ে যায়। চিকিৎসকেরা বলেন, নিয়মিত কয়েক মাস রাসায়নিক মিশ্রিত কলা খেলে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। জানা যায়, তাড়াইল উপজেলার বাজারগুলো ছাড়াও এলাকাভিক্তিক কলার দোকান রয়েছে অনেক।
এসব কলার দোকানে প্রতিদিন কলা পাকাতে এবং কলার রং আকর্ষণীয় করতে কার্বাইড মেশানো হচ্ছে। এসব বাজারের শতভাগ কলাই বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাড়াইল সদর বাজারের এক কলা ব্যবসায়ী জানান, কলায় এসব পদার্থ মেশালে কলা দ্রুত পাকে এবং কলা দেখতে খুব সুন্দর দেখায়, তাই কাস্টমাররা এসব কলা কিনে নিয়ে যায়। এতে আমাদের লাভও হয় বেশি।
কৃত্রিমভাবে পাকানো কলা খুব দ্রুত পচে যায়। এসব কেমিক্যাল মেশানো কলা খেলে মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে, তারপর এমনটি করছেন কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে এই কলা ব্যবসায়ী বলেন, সবাই মেশায়, তাই আমিও মেশাই। গতকাল শুক্রবার তাড়াইল সদর বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাড়াইল সদর বাজারে কয়েকটি কলার আড়ত দিয়ে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাইকারিভাবে কলা বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়াও উপজেলার প্রত্যান্তঞ্চলে ছোট-বড় কলার আড়ত রয়েছে। ঢাকার নরসিংদী, মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন ৪-৫ ট্রাক কাঁচা কলা আসে এসব আড়তে।
এলাকাবাসী জানান, রাতে ট্রাক থেকে এসব আড়তে কাঁচা কলা নামাতে দেখা গেলেও আড়তদারদের জাদুকরি হাতের স্পর্শে সকাল হতে না হতেই কলাগুলো টকটকে হলুদ বর্ণ ধারণ করে। এলাকার খুচরা ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম উপায়ে পাকানো এসব কলা চড়াদামে কিনে নিয়ে ভ্যান গাড়ি করে ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে ও হাট বাজারে বিক্রি করছেন।
আর ক্রেতারা প্রকৃত পাকা ভেবে চড়ামূল্যে তা কিনে নিয়ে খেয়ে যাচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কলা ব্যবসায়ী গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, অল্পসময়ের মধ্যে কলা পাকাতে অনেক রাতে আড়তদাররা রাসায়নিক মিশ্রিত পানি স্প্রে করেন অথবা রাসায়নিক মিশ্রিত বালতির পানিতে কাঁচা কলাগুলো চুবিয়ে রাখেন। এতে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কলার খোসার রং হলুদ ধারণ করে পাকা কলার মত হয়ে যায়। এ কলার রং অনেক উজ্জ্বল হয়ে থাকে বিধায় ক্রেতারা এ কলা দেখেই আকৃষ্ট হন। বেশি দামেও বিক্রি করা যায়। শাহীন আলম নামের এক ক্রেতা বলেন, গত বুধবার এক ডজন পাকা কলা কিনে বাসায় নিয়ে গেছি, সকালে খেতে গিয়ে দেখি কলাগুলোর ভেতরে কাঁচা, মাজাটা শক্ত। গতকাল শুক্রবার পর্যন্তও ওই কলাগুলোর ভেতরে কাঁচাই ছিল।
আড়ত ব্যবসায়ীরা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মেডিসিনের মাধ্যমে আমরা কলা পাকাই, এতে কোনো সমস্যা নেই। আমরা অনেক দিন থেকে বিক্রি করে আসছি। কারো কোনো ক্ষতি হয়ফন। এ বিষয়ে তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অতিশ দাস রাজীব বলেন, রাসায়নিক মিশ্রিত ফল নিয়মিত খেলে মানুষের কিডনি ও লিভারের ক্ষতি হয়। এবং দেহে ক্যান্সার, ডায়রিয়া, জন্ডিস, গ্যাস্ট্রিক শাসকষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। বিষ মেশানো ফল খেয়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। দিন দিন শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়া গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রেও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। শিশুদের এবং গর্ভবতী নারীদের শরীরে ফলের সঙ্গে ক্ষতিকারক রাসায়নিক প্রবেশ করে সেক্ষেত্রে মানসিক এবং শারীরিক বিকাশকে ব্যাহত করে। একই সঙ্গে তার পরিপাকতন্ত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার ফলে শারীরিক বিকাশ অনিশ্চিত হয়ে উঠে। ফলে শিশুর ভবিষ্যৎকে অসুস্থ করে তোলে।