ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ঈদের আগেই চালু হলো কোটাপাড়া সেতু

ঈদের আগেই চালু হলো কোটাপাড়া সেতু

দীর্ঘদিনের জনদুর্ভোগ এবং মৃত্যুঝুঁকির অবসান ঘটিয়ে অবশেষে যান চলাচলের জন্য গত মঙ্গলবার খুলে দেওয়া হলো শরীয়তপুর জেলা সদরের কোটাপাড়া সেতু। ২০২০ সালেই সেতুটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হলেও, এতদিন সেই সেতু দিয়েই দুর্ঘটনার শংকা নিয়েই চলাচাল করছিল যানবাহন। অবশেষে ঈদের আগেই নতুন সেতুটি চালু হওয়ায় শুধু যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয়নি, যেমন কমেছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি, তেমনি শরীয়তপুরের অর্থনীতিতে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। তৈরি হয়েছে বিনোদনের নতুন উপলক্ষ।

শরীয়তপুর সড়ক বিভাগ সূত্রে জানিয়েছে ১৯৯১ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ শরীয়তপুর জেলা সদরের কোটাপাড়ায় কীর্তিনাশা নদীর উপর এক লেনের একটি সেতু নির্মাণ করে। সেতুটি শরীয়তপুর-ঢাকা যোগাযোগের প্রধান অবলম্বন হয়ে ওঠে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেতুর রেলিং, ভিম এবং পিলার দুর্বল হয়ে পড়ায় ২০২০ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগ তা ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করে। তবে বন্ধ হয়নি যান চলাচল। বিশেষ করে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যানবাহনের চাপ বেড়ে গেলে, সেতুটি হয়ে ওঠে একপ্রকার মৃত্যুফাঁদ। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১-২২ অর্থ বছরে সড় ও জনপথ বিভাগ পুরাতন সেতুটির পূর্বপাশে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০মিটার প্রস্থের তিন স্প্যানের একটি নতুন সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে। ২০২৩ সালে সেতুর কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় সেতুটি যান চলাচলের উপযোগী করা সম্ভব হয়নি। তবে গত ৩ জুন ঈদে যানবাহনের চাপের কথা মাথায় রেখে সড়ক পথে শরীয়তপুর-ঢাকা যাতায়াতের অন্যতম এই সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। সেতুর রেলিং ও এপ্রোচ সড়ক দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে বলেও যানায় সড়ক বিভাগ।

বাসে ঢাকাগামী বাসযাত্রী শাহজাহান মিয়া জানান, আগে যখন কোটাপাড়ার পুরাতন সেতুর উপর দিয়ে বাসে যাতায়াত করতাম, তখন মনে হতো এই বুঝি সেতু ভেঙে গাড়ির সব যাত্রী নদীতে ডুবলাম। এক প্রকার জীবনটা হাতের মুঠোয় নিয়ে সেতু পার হতাম। নতুন সেতুর উপর দিয়ে এখন নির্বিঘ্নে ঘুমাতে ঘুমাতে যাচ্ছি। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। একটু দেরি হলেও কোটাপাড়া সেতুর ঝুঁকি এখন আর থাকল না।

শরীয়তপুর-ঢাকা রুটের বাস চালক হানিফ চৌকিদার বলেন, আগে যখন পুরাতন সেতুর ওপর গাড়ি উঠাতাম, তখন আতঙ্কে থাকতাম এই বুঝি আমার দায়িত্বে থাকা যাত্রীদের বড় কোনো ক্ষতি হয়ে গেল। আল্লাহর অশেষ রহমতে এখন কোটাপাড়া সেতুর ঝুঁকি শেষ হলো।

নতুন সেতুতে বিকেল বেলা ঘুরতে আসা তরুণী তানিয়া জানান, নদীর ওপর সুন্দর একটি ঘোরার জায়গা হলো আমাদের জন্য। সেতুটি চালু হওয়ায় এবার আমাদের ঈদের খুশি আরও বেড়ে গেল।

শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন বলেন, কোটাপাড়া পুরাতন সেতুটি ২০২০ সাল থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও তখন আমি এখানে ছিলাম না। আমি আশার পর থেকেই নতুন সেতুটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য জোড় প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছি। কিন্তু জমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলাতায় পূর্বের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেতুটি চালু করা যায়নি। তবে সকল জটিলতা নিরসন করার পর আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে গেছি। তারই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে ঈদের আগে জনদুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে ১৯০ মিটার নতুন সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি। যদিও রেলিং ও এপ্রোচ সড়কের সামান্য কিছু কাজ এখনও চলমান রয়েছে। আশা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটুকুও শেষ করা সম্ভব হবে।

সাবেক এমপি ও শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরদার একেএম নাসির উদ্দীন কালু বলেন, কোটাপাড়া পুরাতন সেতুটি ছিল শরীয়তপুর-ঢাকাগামী যানবাহনের জন্য একটি মরণফাঁদ। এক লেনের সেতুটি যেমন ছিল ঝুঁকিপূর্ণ তেমনি ছিল ঈদের সময়ে যানজটের এক আতঙ্ক। জমি অধিগ্রহণ জটিলতা, বারবার ঠিকাদার পরিবর্তনের ফলে নির্ধারিত সময়ে নতুন সেতুটি চালু করতে না পারায় আমরা সবসময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতাম। কখন যেন বড় কোন দুর্ঘটনার খবর শুনি। সেই বিষয়টিকে মাথায় রেখে ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর আমরা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আজ শরীয়তপুরবাসীকে ওই মরণফাঁদ থেকে রক্ষা করতে পেরেছি। এ জন্য মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত