পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার কামারপাড়া সরব হয়ে উঠেছে। ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই তাদের ব্যস্ততা বেড়েই চলেছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে তাদের এই ব্যস্ততা। মনে হয় যেন এই ঈদটির জন্য তারা সারাটি বছর বসে থাকে। নিরব পরিবেশে হঠাৎ করে ভেসে আসছে টুংটাং শব্দ। নিঃশব্দ পরিবেশটাকে ছাপিয়ে চলছে কামারের হাতুড়ি আর হাপরের আওয়াজ। মনে হয় যেন তারা জানান দিচ্ছে ঈদ এসে গেছে আর বেশি দেরি নেই। রামগঞ্জের বয়োবৃদ্ধ কামার স্বপন কুমার বলেন, আমাদের বেচাকেনা এখনও শুরু হয়নি। মূলত গরু বিক্রি করার ওপরই নির্ভর করে আমাদের বেচাকেনা। গরু কেনা যখন জমে ওঠে তখনই মানুষ ছোরা চাপাতি এবং আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কিনতে ভিড় জমায়। অনেকে আবার পুরাতন ছোরা শান দিতে আনেন। আর জবাই করার ছোরা সাধারণত মাদ্রাসার হুজুররাই কেনেন এবার সবকিছুর দাম বেশি তাই দা-ছোরা-চাপাতিরও দাম বেশি। সাধারণত গরু জবাইয়ের ছোরা প্রতি পিস বিক্রি করা হয় ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। গাড়ির স্প্রিং এর লোহার তৈরি চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া বঁটি বিক্রি করা হচ্ছে ৬০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত। চাইনিজ চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। ছোট দা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত এবং বড় দা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও গরুর চামড়া ছাড়ানোর জন্য ছোট ছোরা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা হতে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। রামগঞ্জ উপজেলার টিউরি বাজার, ভাটরা বাজার, দলটা বাজার লক্ষ্মীধর পাড়া বাজার, সমিতির বাজার, সোনাপুর বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে গৌতম কর্মকার, সঞ্জয় কর্মকার, পলাশ কর্মকার, রমেশ কর্মকার, জসিম কর্মকারসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে কামার শিল্পের অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানি কয়লার দাম অত্যন্ত বেড়ে গেছে। লোহার দামও অনেক বাড়তি। লোহা ও কয়লার দাম বাড়লেও সে তুলনায় কামারদের উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়েনি। কয়লার সংকটের কারণে ঠিকমতো কাজ করতে পারছি না। বিভিন্ন হোটেল থেকে প্রতি বস্তা কয়লা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা ক্রয় করে আনতে হয়। কাজের অবস্থা খুবই খারাপ। আগে প্রতিদিন ১০০টির মতো কাস্তে তৈরি করতে পারতাম এখন ১০ থেকে ১৫টিতে দাঁড়িয়েছে। কামারের কাজ করে এখন সংসার চালানো বড় কঠিন। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াসহ সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বড় কষ্টেই আমাদের দিন অতিবাহিত করতে হচ্ছে। আমাদের বাপ-দাদার পেশা হিসেবে শিল্প টিকে টিকিয়ে রেখেছি এখনও এ পর্যন্ত কামার শিল্পের সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসেনি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে অচিরেই এ শিল্প বিলীন হয়ে যাবে।