কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে এবার অনুষ্ঠিত হবে ঈদুল আজহার ১৯৮তম জামাত।
ঈদের দিন সকাল ৯টায় এ মাঠের একমাত্র জামাতকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চলছে শেষমুহূর্তের প্রস্তুতি। ঈদ জামাতে ইমামতি করবেন মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ। বিকল্প ইমাম হিসেবে থাকবেন হয়বতনগর এইউ কামিল মাদ্রাসার প্রভাষক মাওলানা জুবায়ের ইবনে আব্দুল হাই। গতকাল বুধবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে ঈদুল আজহার জামাত আয়োজনের তোড়জোড় চলছে কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে। জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি, জেলা পুলিশ ও পৌর কর্তৃপক্ষ জামাতকে সফল করতে দিন-রাত পরিশ্রম করছে।
২০১৬ সালে এ মাঠের অদূরে জঙ্গি হামলার বিষয়টি মাথায় রেখে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এরইমধ্যে মাঠের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। স্থানীয় লোকজনও জামাতের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তার আয়োজন দেখে খুশি। মাঠে দাগ কাটা, বালু ফেলা, দেওয়ালে রং করাসহ শোলাকিয়া ময়দানকে জামাতের উপযোগী করার কাজ প্রায় শেষের পথে। বংশ পরম্পরায় দুইশ’ বছর ধরে এ মাঠে নামাজ পড়ে আসছে জেলাসহ দূর-দূরান্তের মুসল্লিরা।
গতকাল বুধবার কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) কাজেম উদ্দিন শোলাকিয়া মাঠের প্রস্তুতি নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং দেন। পরে র্যাব-১৪ সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মো. আশরাফুল কবিরও শোলাকিয়া ঈদগাহ্ প্রস্তুতি নিয়ে ব্রিফিং করেন। জেলা প্রশাসক বলেন, কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক এ শোলাকিয়া ঈদের জামাতে অংশগ্রহণের সুবিধার্থে বরাবরের মতো শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দুটি বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে।
ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব এবং ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহে চলবে এই বিশেষ ট্রেন দুটো। শোলাকিয়া এক্সপ্রেস-১ ভৈরব থেকে সকাল সাড়ে ৬টায় ছাড়বে এবং শোলাকিয়া এক্সপ্রেস-২ ময়মনসিংহ থেকে সকাল পৌনে ৬টায় ছেড়ে যাবে। উভয় ট্রেন কিশোরগঞ্জ থেকে দুপুর ১২টায় রওনা হবে। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, দেশের পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ঈদের নামাজের জন্য আসবেন। যারা এক থেকে দুই দিন আগে আসেন, তাদের জন্য পৃথক স্থানে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্থানগুলো হলো শহরের আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও বাগে জান্নাত নুরানি মাদ্রাসা। দূর-দূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিদের জন্য পর্যাপ্ত সুপেয় পানি ও অজুর পানির ব্যবস্থা রয়েছে। মুসল্লিদের জন্য পর্যাপ্ত ওয়াশরুম ও মেডিকেল ক্যাম্প থাকবে, যাতে শারীরিক কোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দেওয়া যায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ও দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) কাজেম উদ্দিন বলেন, ‘ঈদ জামাতকে কেন্দ্র করে শোলাকিয়ায় ঈদগাহ ময়দানসহ আশপাশের এলাকাকে সাতটি সেক্টরে বিভক্ত করে চারটি নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে কাজ করবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ৫০টি মেটাল ডিটেক্টর, ৮টি আর্চওয়ে গেট, ৬৪টি সিসি ক্যামেরা, ৮টি ড্রোন ক্যামেরা, ৪টি লাইভ ক্যামেরাসহ সব ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। একটি কন্ট্রোল রুমও স্থাপিত হয়েছে। মুসল্লিদের প্রতি অনুরোধ, শুধু জায়নামাজ নিয়ে মাঠে প্রবেশ করবেন।
র্যাব-১৪ সিপিসি-২ কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মো. আশরাফুল কবির বলেন, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্ট্রাইকিং ও রিজার্ভ ফোর্স মোতায়েন থাকবে। সড়ক ও মহা-সড়কে মোবাইল টিম কাজ করবে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিদের হয়রানি থেকে রক্ষা করতে র্যাব টহল দেবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে গুজব ও উস্কানিমূলক তথ্য ছড়াতে দেওয়া হবে না, এর জন্য আমাদের সাইবার মনিটরিং সেল কাজ করছে। ওয়াচণ্ডটাওয়ারে স্বয়ংক্রিয় স্নাইপার রাইফেল থাকবে, যাতে যে কোনো ধরনের নাশকতা প্রতিরোধ করা যায়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মুকিত সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মাহমুদুল ইসলাম তালুদকদার, শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এরশাদ মিয়া এবং কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন।