নীলফামারীতে একসময় আঙুর চাষের ভাবনা ছিল অকল্পনীয় । কিন্তু এ.আর মামুন নার্সারি উদ্যোক্তা মামুনের উদ্যোগে জেলায় এখন পরীক্ষামূলকভাবে মিষ্টি আঙুর চাষ হচ্ছে তার নিজস্ব নার্সারিতে। থোকায় থোকায় ঝুলছে লাল, সবুজ আর বেগুনি আঙুর। খেতেও সুমিষ্ট ও রসাল। নীলফামারীর কচুঁকাটার এ.আর.মামুন নার্সারিতে এসব আঙুর দেখতে ভিড় করছেন বিভিন্ন দর্শনার্থীরা। দেশীয় আঙুর মানেই টক, এমন ধারণা পাল্টে দিয়েছেন ওই কৃষি উদ্যোক্তা। দীর্ঘ তিন বছরের সাধনায় সফল হয়েছেন মিস্টি আঙুর চাষে। ছয় থেকে সাতটি জাতের সুমিষ্ট, রঙিন আর রসাল আঙুর থোকা ঝুলছে মামুনের আঙুরের মাচায়। এসব জাত ছড়িয়ে দিয়ে দেশকে আঙুরের আমদানি নির্ভরতা থেকে বাঁচাতে চান এই যুবক। নতুন নতুন উদ্যোক্তার হাত ধরে নীলফামারীর এই আঙুর সারাদেশে ছড়িয়ে যাবে, এমন আশা তার।এসব আঙুর চাষি পর্যায়ে ছড়িয়ে গেলে নীলফামারীসহ সারাদেশের কৃষিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। কৃষকদের আয়ের পাশাপাশি স্থানীয় বাজারেও আঙুরের চাহিদা পূরণ করবে।আশপাশের মানুষ ছাড়াও বাগান দেখতে আসছেন দূর-দূরান্তের মানুষ।
দর্শনার্থী মামুনুর রশীদ মিঠু জানান, লোকমুখে শুনেছি তার এই বাগান, আজ স্বচোখে দেখলাম। এটি আমাদের জন্য ভালো,আমাদের উত্তরবঙ্গের ফলের সাথে এই মিষ্টি ও রসালো আঙুর যোগ হলো,যা চাহিদা মেটাতে পারে।
আঙুরের পরিচর্যা জয় সরকার জানান, আঙুর হচ্ছে বিদেশি ফল এটি আমরা পরীক্ষামূলক ভাবে চাষাবাদ করছি। সেক্ষেত্রে এই গাছ থেকে শুরু করে সব কিছু খুব যত্ন সহকারে পরিচর্যা করতে হয়। বিভিন্ন ধরনের নতুন রোগে আক্রান্ত হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হয়, সঠিক সময় সঠিক কীটনাশক সারসহ পানি ব্যবস্থাপনার দিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। সঠিক পরিচর্যা হওয়ার ফলে খুব ভালো একটি ফলাফল পেয়েছি আমরা।বারবার বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি এর পরে সেসব সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করে পুনরায় চারা রোপণ করি। সবশেষ গত সেপ্টেম্বরে ২২টি জাতের আঙুরের চারা রোপণ করেছি। এর মধ্যে ছয়-সাতটি জাতের ভালো ফলন হয়েছে এবং সেই জাতগুলোতে কোনো টক নাই। এ. আর.মামুন আরও বলেন, প্রতিটি গাছে প্রায় ২০ থেকে ৩০টি করে থোকা ধরেছে। প্রতিটি থোকায় তিনশ থেকে পাঁচশ গ্রাম করে আঙুর ধরেছে। পরিচর্যার মাধ্যমে সফল হয়েছে। মামুনের আশা বিদেশি ফল আঙুরের আমদানি নির্ভরতা কমাতে এসব আঙুর সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে চায়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ডা.এস.এম. আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, যেসব এলাকায় ফল চাষ সমূহ হচ্ছে সেসব এলাকার মাটি বেলে দো-আশ মাটি। এসব মাটিতে ফল চাষ হাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে ফল গাছ কিন্তু জমানো পানি সহ্য করতে পারে না। এই মাটিতে বৃষ্টির পানি বা সেচ দেওয়া পানি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চলে যায় এ জন্য ফল গাছগুলোর কোনো ধরনের সমস্য হচ্ছে না। নীলফামারীতে কমলা, মাল্টার পাশাপাশি এখন আঙুর চাষাবাদ হচ্ছে এবং শিগগিরই এই আঙুর বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হবে এবং সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে।