
কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলা এবছর এক অভূতপূর্ব কৃষি সাফল্যের সাক্ষী হলো। বদরপুর-গজারিয়া সড়কের মেহার গ্রাম সংলগ্ন রাস্তার দু’পাশের বপন করা শিমের এমন বাম্পার ফলন হয়েছে যে, ফলন দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় জমাচ্ছে। প্রতিটি লতানো শিম গাছে থোকা থোকা সবজি যেন প্রকৃতির এক উদার উপহার। এই বাম্পার ফলন স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে নতুন করে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার স্বপ্ন জাগিয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার আবহাওয়া শিম চাষের জন্য বিশেষভাবে অনুকূল ছিল। শীতের আগমন এবং মাটির আর্দ্রতা বজায় থাকায় গাছের বৃদ্ধি ও ফলন ধারণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও, মেহার গ্রামের কৃষকরা এবার আগাম ও উন্নত জাতের বীজ ব্যবহার করেছিলেন এবং কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক সময়ে রোগ-বালাই দমন ও পরিমিত সার প্রয়োগ নিশ্চিত করেছিলেন। সবুজ লতানো পাতার ফাঁকে এখন বেগুনি ও সবুজ শিমগুলো ঝুলে আছে, যা শুধুমাত্র দৃশ্যের মাধুর্য বাড়াচ্ছে না, বরং ফলনের প্রাচুর্যকেও প্রমাণ করছে। মেহার গ্রামের কৃষক আলম (৩২) বলেন, গত বছরও শিম চাষ করেছিলাম, কিন্তু এবার যা ফলন হয়েছে তা কল্পনার বাইরে। গাছ লাগানোর সময় থেকেই পরিচর্যা করেছি মনোযোগ দিয়ে। এবার সার-কীটনাশকের খরচ কম হয়েছে কারণ রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ ছিল নগণ্য।
এখন যত দ্রুত বাজারে তুলতে পারব, তত ভালো দাম পাব। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে এবং চান্দিনা সদর বাজারে এই শিম সরবরাহ শুরু হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে শিমের চাহিদা থাকায় কৃষকরা তুলনামূলকভাবে ভালো দাম পাচ্ছেন। সাধারণত শিম তোলার পর তা স্থানীয় ফড়িয়াদের মাধ্যমে সরাসরি ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় শহরগুলোর পাইকারি বাজারে পাঠানো হয়। কৃষকদের আশা, এই ধারা বজায় থাকলে তারা তাদের বিনিয়োগের দ্বিগুণ লাভ করতে সক্ষম হবেন। তবে, বাম্পার ফলনের সঙ্গে সঙ্গে বাজারজাতকরণের একটি চ্যালেঞ্জও তৈরি হয়। একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ ফসল বাজারে চলে এলে দাম কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই বিষয়ে কৃষক সমিতির পক্ষ থেকে স্থানীয় কৃষি বিপণন দপ্তরের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে, যাতে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত না হন।
মেহার গ্রামের এই সাফল্য চান্দিনার অন্যান্য কৃষকদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা। কৃষকরা বলেন, এবার আমরা আধুনিক পদ্ধতি ও উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ বপন করেছি, সময়মতো সঠিক পরিচর্যা এবং আবহাওয়ার সহায়তা পাওয়ায় এমন ফলন সম্ভব হয়েছে। চান্দিনার এই বদরপুর-গজারিয়া সড়ক এখন শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি শিম উৎপাদনের এক উজ্জ্বল ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। এই বাম্পার ফলন প্রমাণ করে, সঠিক পরিচর্যা ও আধুনিক কৃষিব্যবস্থা অবলম্বন করলে কৃষকরাও তাদের কঠোর পরিশ্রমের সর্বোচ্চ ফল লাভ করতে পারেন, যা গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করে তুলবে।