ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

চুয়াডাঙ্গায় অতিবৃষ্টিতে ৮৭২ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত

চুয়াডাঙ্গায় অতিবৃষ্টিতে ৮৭২ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত

চুয়াডাঙ্গা জেলায় টানা অতিবৃষ্টিতে কৃষিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অতিবৃষ্টিতে জেলার পাঁচটি থানায় নীচু এলাকাগুলোতে বিভিন্ন ধরনের সবজি, আউশ ও আমন ধান, পাটসহ বিভিন্ন ফসল ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা, বেগুন, লাউও শসাসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়েছে। মাটি নরমের কারণে পেঁপে গাছও কলাবাগান ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। জমিতে পানি জমে থাকার কারণে ফুলকপি ও পাতাকপিসহ শীতকালীন সবজির বীজতলা ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব মতে জেলায় মোট ৮৭২ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে চাষিদের অভিমত। সদর উপজেলার সড়াব বাড়িয়া গ্রামের কৃষক কামরুল হাসান বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে আমন ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছি না। পেঁপে, লাউ, শসা ও ধনেপাতা খেত নষ্ট হয়ে গেছে। উঁচু স্থানে কিছু গাছ বেঁচে থাকলেও ফুল ও জালি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এই কারণে উৎপাদন অনেক কমে এসেছে। আমাদের অনেক বেশি ক্ষতি হয়ে গেছে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাজারে সবজির দাম আগের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়ে গেছে বলে জানান তিনি। একই গ্রামের কৃষক আসাদ বলেন, আমার ৩ বিঘা জমিতে কাঁচামরিচ ছিল। সেও নষ্ট হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জুলাই মাসের বৃষ্টি ও মাঝেমধ্যে কিছুটা ঝড়ও হয়েছে। সেই ঝরে গড়া উপড়ে পড়ে গেছে পেঁপে বাগানের অনেক গাছ। একই অবস্থা হয়েছে গ্রামের কলা বাগানগুলোতেও।

একই উপজেলার ছয়ঘড়ি গ্রামের আব্দুর রউফ মাস্টার বলেন, আমি সাড়ে চার বিঘা জমিতে পেঁপে বাগান করেছিলাম। বৃষ্টির কারণে শেকড় পাগলা হয়ে যাওয়াই বেশিরভাগ গাছ মাটিতে পড়ে গেছে। এতে আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে।

জীবননগর উপজেলার আফজালুর রহমান বলেন, ৩০ বিঘা জমিতে প্রায় ৪০ বছর ধরে চাষাবাদ করে আসছি। শীতকালীন ফুলকপি, পাতাকপি ও ধনেপাতার বীজতলা তৈরির সময় চলে যাচ্ছে। যারা আগে চারা তৈরি করেছিলেন তাদের বেশিরভাগই চারা নষ্ট হয়ে গেছে। পুনরায় চারা তৈরি করে ফুলকপি ও পাতাকপি চাষ করতে গেলে চাষ নাবি হয়ে যাচ্ছে। এতে খরচ বেশি হবে কিন্তু উৎপাদন কম হবে। সব মিলিয়ে দীর্ঘমেয়াদি একটি ক্ষতির মুখে পড়তে হবে কৃষকদের।

কৃষক রহিম উদ্দিন বলেন, এখনও জেলার কৃষকদের যা ক্ষতি হয়েছে তাতে কোটি টাকা ও ছাড়িয়ে যাবে। বৃষ্টির ওভাবে কৃষক পরও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আবাদ কম হাওয়া এবং অতিরিক্ত খরচ এগুলো পারে কৃষকের ক্ষতির সঙ্গে যোগ হবে।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য মতে জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে আছে ৪২ হেক্টর জমির আমন ধানের বীজতলা, ৯৮ হেক্টর জমির আমল আবাদ, ১৩২ হেক্টর জমির আউশ ধান, ১১০ হেক্টর জমির মরিচ, ৩১২ হেক্টর জমির বিভিন্ন ধরনের সবজি, ৫৭ হেক্টর জমির কলা, ৩৭ হেক্টর জমির পেঁপে, ১৩ হেক্টর জমির চিনা বাদাম, ২০ হেক্টর জমির পেয়ারা, একুশ হেক্টর জমির মাল্টাও ৩০ হেক্টর জমির ড্রাগন।

তবে কৃষি বিভাগের এই হিসাবে পার্ট ও পানের কোনো ক্ষতি কথা উল্লেখ করা হয়নি। এই দুইটি ফসলের ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ শূন্য হেক্টর দেখানো হয়েছে।

তবে কৃষকরা জানিয়েছে, প্রকৃত পক্ষে তাদের পান ও পাট খেতেও ক্ষতি হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা এলাকার তালতলা গ্রামে ব্যাপক পান চাষ হয়ে থাকে। ওই গ্রামে বারো কাঠা জমিতে পান চাষ করা কৃষক রফিক হোসেন বলেন, বৃষ্টির পানি জমে থাকায় পান গাছের গোড়া পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি সত্তর-আশি হাজার টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমি একা নয় গ্রামের সব চাষিই ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, গত বছরের জুলাই মাসের তুলনায় এ বছর জুলাইতে জেলায় প্রায় পাঁচগুণ বেশি বৃষ্টি পাত হয়েছে। যেখানে গত বছর জুলাইতে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ৮৫ মিলিমিটার। যেখানে এ বছর জুলাইতে বৃষ্টি হয়েছে ৪৭০ মিলিমিটার। পাশাপাশি এবছর আগস্ট মাসের প্রথম ৮ দিনেই বৃষ্টি হয়েছে ১৭০ মিলিমিটার।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, আমনের ক্ষেতে আটকে থাকা পানি সরে গেছে। সেখানে আমরা কৃষকদের চারা রোপণ করার পরামর্শ দিচ্ছি। পানি সরে যেতে দেরি হলে নাবি জাতের চারা করা যেতে পারে। বীজতলা যদি নাও থাকে এখনও বীজতলা করার সুযোগ আছে। ওই জমিগুলোতে আগাম রবিশস্য চাষ ও করা যেতে পারে। অন্যান্য ফসলের ক্ষেত্রে যা যা করণীয় তা আমরা কৃষকদের বুঝিয়ে বলেছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত