ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ময়মনসিংহে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

ময়মনসিংহে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

মানুষের ভোগান্তি নিরসন ও শহরের যানজট কমাতে এবার কঠোর অবস্থান নিয়েছে ময়মনসিংহ প্রশাসন। গতকাল রোববার সকালে শহরের গাঙ্গিনারপাড় ও রেলওয়ে স্টেশন এলাকার সড়কে বিশেষ টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে দেড় শতাধিক অবৈধ দোকান গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। যানজট নিরসনে ময়মনসিংহের ব্যস্ততম স্টেশন রোড থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত এলাকায় গতকাল রোববার বেলা ১১টা থেকেই অবস্থান নেয় জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার এবং সিটি কর্পোরেশনের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ টাস্কফোর্স। অভিযানের খবর পেয়ে অনেকেই দোকানপাট বন্ধ রাখেন। তবে যারা ফুটপাত দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রথমে তাদের জরিমানা করে। এরপরই শুরু হয় মূল উচ্ছেদ অভিযান।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ শাহনেওয়াজ মোর্শেদ অপু ও সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নোহাম্মদ সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে দুপুরে স্টেশন রোডের নিউ হকার্স মার্কেটে চালানো হয় অভিযান। বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় প্রায় দেড় শতাধিক ছোট দোকান। হকারদের নিজেদের মালামাল সরিয়ে নেওয়ার জন্য মাত্র আধা ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়। এই আকস্মিক অভিযানে নিজেদের শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ক্ষুদ্র দোকানি আব্দুল জলিল বলেন, আমরা এখানে ছোট দোকান করে কোনো রকমে সংসার চালাতাম। এই দোকানটাই ছিল আমাদের একমাত্র আয়ের উৎস। কোনো নোটিশ না দিয়েই সব ভেঙে দিল। এখন আমাদের কী হবে? ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কোথায় যাব?

আলী হোসেন নামের একজন দোকানি বলেন, আমি গত ১৫ বছর ধরে ফুটপাতে ব্যবসা করছি। জেলা প্রশাসনের আশ্বাসে এখানে দোকান দিয়েছিলাম। ২০- ৩০ হাজার টাকা খরচ করে দোকান সাজিয়েছি। আজকে প্রশাসন হঠাৎ করেই ভেঙে দিল। এই দোকানটাই আমার জীবনের সব। সব শেষ হয়ে গেল। প্রশাসনকে অনুরোধ করছি, আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিক। নইলে না খেয়ে মরতে হবে।

সিয়াম মিয়া নামের একজন জানান, আমি প্রতিদিন এখান থেকে শার্ট-প্যান্ট বিক্রি করে যা রোজগার করি, তা দিয়েই আমার পরিবার চলে। আজ দোকান ভেঙে দিয়েছে। এখন কীভাবে সংসার চালাব? কোনো উপায় দেখছি না।

মেয়েদের পোশাক বিক্রি করার জন্য এখানে দোকান নিয়েছিলেন মঞ্জুরুল। তিনি বলেন, আমরা জানি, ফুটপাতে দোকান করা ঠিক না। কিন্তু আমাদের তো আর কোনো উপায় নেই। প্রশাসনের উচিত ছিল উচ্ছেদের আগে আমাদের জন্য বিকল্প জায়গার ব্যবস্থা করা। এখন আমরা রাস্তায় নেমে গেছি। আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ অনিশ্চিত।

তবে প্রশাসনের এ উচ্ছেদ অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ ও পথচারীরা। তাদের মতে, ফুটপাতে হকাররা বসে মূল সড়কের বেশিরভাগ অংশই দখলে রাখে। ফলে গাড়ি চালানো তো দূরের কথা, রাস্তা দিয়ে হাটাই যায় না। পথচারী শরীফ আহমেদ জানান, যানজটের কারণে স্টেশন রোড দিয়ে চলাচল করা এক দুঃস্বপ্ন ছিল। এক কিলোমিটার রাস্তা পার হতে আধা ঘণ্টা লেগে যেত। আজ উচ্ছেদের পর দেখলাম রাস্তাটা অনেক ফাঁকা। প্রশাসনকে ধন্যবাদ, দেরিতে হলেও তারা সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে।

ষাটোর্ধ্ব শিক্ষিকা ও পথচারী লুৎফা বেগম এর মতে, বয়স্ক মানুষ হিসেবে ফুটপাত ধরে হাঁটা আমার জন্য খুবই জরুরি। কিন্তু হকারদের কারণে কোনোদিনই ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে পারিনি। সব সময় গাড়ি আর রিকশার পাশে পাশে ভয়ে ভয়ে হাঁটতে হতো। এখন ফুটপাত ফাঁকা, আমরা হাঁটার জায়গা ফিরে পেয়েছি। এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে অভিযান নিয়মিত অব্যাহত থাকবে। নগরীকে যানযট মুক্ত রাখতে রাস্তা থেকে হকারদের উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত