
পাবনার ঈশ্বরদীর বাজারে উঠেছে আগাম জাতের অটো শিম। তবে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে আগাম উঠা এ শিম। ঈশ্বরদীর বাজারে নতুন উঠা শিমের পোয়া ৮০ টাকা অর্থাৎ প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা। ভালো দাম পাওয়ায় শিম চাষিরা খুশি হলেও চড়া দামে অখুশি নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তরা। ঈশ্বরদীর মুলাডুলিতে অটো শিম চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। বাজারে অল্প অল্প শিম উঠতে শুরু হলেও আর মাত্র ১০ দিনের মধ্যে এ শিম বাজারে বেশি পরিমাণ পাওয়া যাবে। এসময় শিম উঠলে ভালো দাম পাওয়া যায়। তাই ঈশ্বরদীতে চাষ বেড়েছে আগাম জাতের শিম। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘অটো শিম’। এ জাতের শিম চাষে এখানকার কৃষকরা প্রতিবারই লাভবান হন। এরই মধ্যে গাছে শিম ধরা শুরু হয়ে গেছে। শিম শীতকালীন সবজি হলেও এ এলাকায় ১০-১৫ বছর ধরে আগাম জাতের শিমের আবাদ হচ্ছে।
শ্রাবণ মাসের শেষের দিকে আবার কারও কারও ভাদ্র মাসের শুরুর দিকে শিমের ফলন শুরু হয়। প্রতি বছরই শিম চাষিদের লাভ হয়। আগাম শিমের বাজারে চাহিদা বেশি থাকে দামও ভালো পাওয়া যায়। তবে এ শিম উৎপাদনে চাষিদের খুবই পরিশ্রম করতে হয়। এ শিমের ক্ষেতে পোকার আক্রমণ বেশি হয়। এছাড়া অতি বৃষ্টি ও অতি খরার কারণে শিমের ফলন বিপর্যয়ের সম্ভাবনা থাকার পরই চাষিরা বাজারে উঠেছে নতুন এসব শিম। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদীতে এই মৌসুম রবি ও খরিপ-২ শিমের আবাদ হয়েছে ১২৯০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে মুলাডুলি ইউনিয়নেই ৮৯০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের অটো শিমের চাষ হয়েছে।
গতকাল সোমবার সরজমিনে দেখা যায়, অটো জাতের শিম গাছ এরই মধ্যে মাচায় উঠে ফুল হওয়া ও ফলন শুরু হয়েছে। গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মুলাডুলি ইউনিয়নের শিম চাষিরা। বাগবাড়িয়া এলাকার আনোয়ার হোসেনের অটো সিমের জমিতে ৩০০ টাকা মজুরিতে ফুল বাছায় ও লতার জোড় ছাড়ানোর কাজ করছেন আমেলা বেগম। এরিমধ্যে আগাম জাতের অটোশিম অল্প অল্প বাজারে তুলেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝিতে আগাম শিম চাষ শুরু করে এখানকার চাষিরা। শ্রাবণের শেষে বা ভাদ্রের প্রথমদিকে বাজারে তোলা হয়। জানা যায়, এক যুগের বেশি সময় ধরে এখানে অটো শিমের আবাদ চলছে। ফলন ভালো ও কৃষকরা লাভবান হওয়ায় প্রতিবছরই আবাদ বাড়ছে। এ শিম চাষে প্রতিবছরই সফলতা পান এখানকার চাষিরা। শিম চাষকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরদীর মুলাডুলিতে গড়ে উঠেছে বিশাল বাজারও। এই বাজার থেকে প্রতিদিন ট্রাক ট্রাক শিম রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায়। মুলাডুলির বাঘহাচলা গ্রামের শিম চাষি আকমল আলী বলেন, আগাম জাতের অটো শিম চাষ করে এখানকার কৃষকরা বেশ লাভবান হয়। গত বছর ১৫ কাঠা জমিতে অটো শিমের আবাদ করেছিলাম।
এতে সব খরচ বাদ দিয়ে ৮০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। আমার মতো অনেক কৃষক আগাম অটো শিমের আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। বিগত বছরগুলোতে এ সময় শিম গাছ ফুলে ফুলে ভরে গেলেও এবার ভিন্ন চিত্র। এবার আষাঢ়-শ্রাবণ মাসব্যাপী বৃষ্টির কারণে ফুল আসলেও বৃষ্টিতে অনেক ফুল পচে নষ্ট হয়। ফলে ফুল কম টেকাই ফলনও কম হচ্ছে। উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের চকনারীচা বাগবাড়িয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে আগাম জাতের অটো শিম আবাদ করেছেন। জমিতে ফুল ও ফল আসা শুরু হয়েছে।
গত শনিবার জমি থেকে ৪ কেজি শিম উঠিয়ে বাজারে বিক্রি করেছেন। তিনি আরও বলেন, শ্রাবণ মাসের শেষের দিকে শিম বাজারে তুলতে পারলে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা যায়। সোমবার ঈশ্বরদী বাজারে দেখা যায় সবজি বিক্রেতা জীবন, নতুন উঠা শিম পোয়া ৮০ টাকা করে বিক্রি করছেন। তিনি জানান, মাজগ্রাম এলাকার আগাম শিম চাষি আজকে দেড় কেজি শিম বিক্রি করে যায়। আজকেই মৌসুমের প্রথম শিম বিক্রি করছি। নিকরহাটা গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে অটো শিমের আবাদ করতে খরচ হয় প্রায় ৩৫-৪০ হাজার টাকা। অন্য ফসলের চেয়ে শিমের আবাদে খরচ বেশি। আবহাওয়া ভালো থাকলে ফলন ভালো হয়। আগাম জাতের অটো শিমের ফলন ভালো হলে প্রতি বিঘা জমির শিম ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। বাজারে প্রথম যে শিমগুলো উঠে সেগুলোর দাম বেশি থাকে। প্রথম অবস্থায় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি বা তার চেয়ে বেশি দরে বিক্রি করা যায়। শিম চাষিরা বলেন, অটো-রূপবান-ঘৃত কাঞ্চন-রূপসী নামে আগাম জাতের শিম এখানে চাষাবাদ বেশি হয়। অটো জাতের শিম জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষের দিক থেকে আবাদ শুরু হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: আব্দুল মমিন বলেন, ঈশ্বরদীতে জ্যৈষ্ঠমাস থেকেই আগাম জাতের শিমের আবাদ শুরু হয়। সেসব শিম গাছে ফুল হয়েছে তা থেকে শিম উঠতে শুরু করেছে।